১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এগিয়ে আসায় ইউক্রেনে বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা

- ছবি : ভয়েস অব আমেরিকা

অনেক ইউক্রেনবাসী আশা করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সাহায্য করতে পারে। তবে কেউ কেউ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর প্রতি নমনীয় ভাব পোষণ করবেন, আবার অন্যরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন যে ডেমক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কামালা হ্যারিসের নীতি অনুযায়ী ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা-যতই উল্লেখযোগ্য হোক না কেন, পৌঁছাতে বিলম্ব হবে।

যেমনটি কিয়েভ থেকে অ্যানা চেরনিকোভা তার পাঠানো প্রতিবেদনে লিখছেন রাজধানী কিয়েভ এবং ইউক্রেনের অন্যত্র লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন এবং কিছুটা উদ্বিগ্নও যে এই নির্বাচনের ফলাফল তাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বদেশে কী প্রভাব ফেলতে পারে।

কোনো কোনো অধিবাসী যেমন কিয়েভের আনহেলিনা তার আশা ব্যক্ত করেছন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আগামী প্রেসিডেন্ট আমাদের সমর্থন দেবেন। আমাদের রাজনীতি, আমাদের সামরিক তৎপরতার (প্রতি)।’

তবে অন্যান্য অধিবাসী, দ্যমিত্রর মতো উদ্বিগ্ন। কিয়েভের বাশিন্দা দ্যমিত্র বলেন, ‘আমি জানি না কে জয়ী হবেন এবং সাধারণভাবে আমাদের দেশের প্রতি কী নীতি নেয়া হবে। আমি এ ব্যাপারে আগ্রহী। আর ঈশ্বর যেন এমনটি করেন যে তারা উভয়ই আমাদের সমর্থন করেন।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিকোলা ড্যাভিডিউক বলছেন, সবচেয়ে বড় আশঙ্কাটা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে।

তিনি বলেন, ‘এক সময়কার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হওয়ায় লাখ লাখ লোক প্রাণ হারাতে পারে। আর এ ব্যাপারেই দেশটি ভয় পায়।’

আড়াই বছর ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধের পর, ইউক্রেনের মনোবলকে যে বিষয়টি নাড়া দিচ্ছে তা হলো হোয়াইট হাউসের নতুন প্রশাসনে কী হতে চলেছে।

ট্রাম্প দ্রুতই এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, তাই অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে এর অর্থ হচ্ছে তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসলে, ইউক্রেনকে অনেক ছাড় দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

তবে ইউক্রেনীয়রা এ কথাও মনে রেখেছেন যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে ট্যাংক বিধ্বংসী জেভলিন পদ্ধতি বিক্রি করার অনুমোদন দিয়েছিলেন যা রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ দখল অভিযানে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছে।

২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রাইমিয়া দখল করে ইউক্রেনর পূর্বাঞ্চলী ডনেটস্ক এলাকার অনেকটা দখল করে নেয় তখন ওবামা-বাইডেন প্রশাসন ওই অস্ত্রগুলোর জন্য ইউক্রেনের অনুরোধ প্রত্যখ্যান করেছিল।

তবে ইউক্রেনের অধিবাসীদের মধ্যে এ বিষয়ে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। স্ভিতলানার মতো কেউ কেউ ট্রাম্পের বিজয়ের ব্যাপারে শঙ্কিত।

কিয়েভের বাসিন্দা স্ভিতলানা বলেন, ‘ট্রাম্প বড় অদ্ভূত এক মানুষ, তার চিন্তাগুলোও অদ্ভূত।’

তবে ইভানের মতো অন্যরা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এ ব্যাপারে এক ধরনের নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন।

কিয়েভেরই অধিবাসী ইভান বলেন, ‘ট্রাম্পতো আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেনই, তার পদ্ধতিগুলোতো জানাই আছে এবং আমার মনে হয়, ভয় পাবার কিছু নেই।’

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রতি অত্যন্ত উদার ছিল। পুরোদমে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনর জন্য ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে ইউক্রেনের নেতাদের মনে এ নিয়ে হতাশা আছে। তারা বলছেন সহায়তা খুব দেরিতে পৌঁছায়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এখন, যখন আমাদের সহযোগী, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য সরবরাহের জন্য অপেক্ষমান তখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। আর ঠিক সেজন্যই দ্রুতগতিতে সরবরাহের অর্থ হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রকে স্থিতিশীল করা।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচিত হলে কমলা হ্যারিসের নীতিগুলো সম্ভবত হবে বাইডেনের মতোই এবং এটি অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা কিছু লোকের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে অন্যরা এ নিয়ে শঙ্কিত যে যুদ্ধ হয়ত চলতেই থাকবে।

কিয়েভের রাজুমকভ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপভুক্তদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মনে করেন যে ইউক্রেন ও রাশিয়ার দ্রুতই শান্তি আলোচনা শুরু করা উচিৎ, তবে বেশিরভাগই মনে করেন পুতিনের শর্তগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

ইউরোপে ইউক্রেনের শীর্ষ সমর্থকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ায়, এখানে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে বাঁচার উপায় হিসেবে দেখছেন, যদিও তা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement

সকল