০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

ব্রিটেনের নির্বাচনে বড় জয়ের পথে লেবার পার্টি

ব্রিটেনের নির্বাচনে বড় জয়ের পথে লেবার পার্টি - ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটেনের নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪১০টি আসনে জয় নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে এবং এই পূর্বাভাস সত্যি হলে স্যার কিয়ের স্টারমার হবেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী।

এই জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ১৭০ আসনের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পাবে। আর কনজারভেটিভ পার্টি ইতিহাসের সবচেয়ে কম ১৩১টি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে।

এছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ৬১টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকতে পারে। এর বাইরে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির আসন কমে ১০ এবং রিফর্ম ইউকে পেতে পারে ১৩টি আসন।

স্যার জন কারটিস এবং একদল পরিসংখ্যানবিদের তত্ত্বাবধানে করা এই বুথ ফেরত জরিপের জন্য ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের ১৩০টি ভোট কেন্দ্রের ভোটারদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড এই জরিপের আওতায় আসেনি।

গত পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপের সত্যাসত্য ছিল এক দশমিক পাঁচ থেকে সাড়ে সাত শতাংশ আসনের মধ্যে।

এই জরিপ সত্যি হলে, এটা হবে লেবার পার্টির জন্য দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। দলটি যুদ্ধ-উত্তর সময়ে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বাজে ফল করেছিল। তখন ৮০ আসন বেশি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি।

তবে কিছু জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির ভেসে যাওয়ার যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল সেটি সম্ভবত দলটি এড়াতে পারবে। কিন্তু তারপরেও এটিই হবে দলের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে নির্বাচনী ফল। ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২৪১ আসন হারিয়ে তারা এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে।

এর ফলে ২০১০ সালের পর আবারো ডাউনিং স্ট্রিটে একজন লেবার প্রধানমন্ত্রী আসছেন। অন্যদিকে কনজারভেটিভদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই হবে কারণ মনে হচ্ছে ঋষি সুনাক নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।

কনজারভেটিভ অর্থাৎ টোরিরা লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টির দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। কারণ এই দল দু’টি আগের চেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টোরি থেকে রিফর্ম ইউকে পার্টিতে যাওয়া লি অ্যান্ডারসন তার নতুন দলের হয়ে প্রথমবারের মতো অ্যাশফিল্ড আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওই আসনে দ্বিতীয় আসনে আছে লেবার পার্টির প্রার্থী।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল স্যার রবার্ট বাকল্যান্ড হলে এবার প্রথম টোরি এমপি যিনি তার নিজের আসনে পরাজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, তার দল নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে এবং লেবারদের সম্ভাব্য জয় হলো পরিবর্তনের জন্য বড় ভোট।

তিনি নির্বাচনী প্রচারণা অপেশাদারিত্ব ও বিশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ তুলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানসহ তার দলের কয়েকজন সহকর্মীর তীব্র সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা ও পদের জন্য তামাশা করা নিয়ে আমি খুব বিরক্ত।

তিনি টোরি নেতৃত্ব নিয়ে সামনের প্রতিযোগিতার বিষয়েও সতর্ক করেন।

লেবার পার্টির এবার বিজয়ের যেই সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে তাতে ১৯৯৭ সালের টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে পাওয়া আসনের চেয়ে অল্প কিছু কম হতে পারে।

দলটির রাচেল রিভস, যাকে প্রথম কোন নারী চ্যান্সেলর মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার ব্রিটেনের মানুষ পরিবর্তনের জন্য এবং স্যার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ভোট দিয়েছে।’

জয়ের পর দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাকে হারতে দেবো না এবং শুরু করার জন্য আমার আর তর সইছে না।’

অন্যদিকে রিফর্ম ইউকের নাইজেল ফারাজ অনুমান করে বলেন, তারা অনেক, অনেক আসনে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে টোরিদের ভোট কমিয়েছে , যেখানে চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপসসহ কয়েকজন মন্ত্রী ঝুঁকিতে পড়েছেন।

দলটির নেতা স্যার এড ড্যাভি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক প্রজন্মের জন্য এটাই আমাদের সেরা ফল।’

দলটি কনজারভেটিভ পার্টি থেকে হ্যারোগেট ও কেনেয়ারসবরো আসন বড় ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা মন্ত্রী স্যার জ্যাকব রিস-মগ বলেন, কনজারভেটিভদের জন্য এটি পরিষ্কারভাবে একটি হতাশার রাত। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট নিয়ে বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও সুনাকের টানাটানিকে ভোটাররা সরিয়ে দিয়েছেন।

স্কটিশ ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার কেইট ফোর্বস বলেন, তার দল একটি কঠিন রাতের মুখে। কারণ বুথ ফেরত জরিপ অনুযায়ী তারা ৩৮টি আসনে হারতে যাচ্ছে।

তবে বুথ ফেরত জরিপের এমন ফল সত্ত্বেও ঋষি সুনাক বলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি এখনো জিততে পারেন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement