ইউক্রেন সম্মেলনে তোপের মুখে পুতিনের শান্তি প্রস্তাব
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৬ জুন ২০২৪, ১০:৪৩
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির জন্য যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইটালি ও জার্মানির নেতারা। ইউক্রেন সঙ্ঘাতের অবসানের লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডে বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতারা এখন শান্তি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রুশ প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাকে ‘প্রোপাগান্ডা’ অর্থাৎ অপপ্রচার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যার অর্থ হলো রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেন থেকে সরে আসতে হবে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ পুতিনের প্রস্তাবকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক শান্তি’ আখ্যা দিয়ে নাকচ করে দিয়েছেন।
শান্তি সম্মেলনে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা এবং দেশটির বিরুদ্ধে যেকোনো পারমাণবিক হুমকিকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ যাতায়াত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শুক্রবার পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন যদি চারটি অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে তাহলে তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত আছেন।’
ওই চারটি অঞ্চলের কিছুটা এখন রাশিয়ার দখলে এবং রাশিয়া এগুলোকে তার নিজ ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চীফ অফ স্টাফ আন্দ্রিই ইয়েরম্যাক সুইস এই সম্মেলনে এসে বলেন, ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডগত অখণ্ডতা নিয়ে কোনো আপোষ নেই।’
ইউক্রেন শান্তি নিয়ে ওই সম্মেলনে পুতিন তার প্রস্তাব প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, সম্মেলনটির লক্ষ্য হলো যুদ্ধ অবসানে করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা।
৯০টির বেশি দেশ ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এটাই ইউক্রেন বিষয়ে সবচেয়ে বড় জমায়েত।
তবে, রাশিয়া ও চীন এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পায়নি। তাই তারা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না। সে কারণে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
পুতিনের প্রস্তাবের বিষয়ে বলতে গিয়ে জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘ইউক্রেনকে ইউক্রেনের মাটি থেকে সরে যেতে বলাটা আমার কাছে কোনো কার্যকর মধ্যস্থতা প্রস্তাব বলে মনে হয় না।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, ‘যেসব দেশ অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে সহায়তা করছে ‘তারা ইতিহাসের ভুল দিকে আছে।’
ইউক্রেন এই সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলোর সংখ্যা এবং এর বৈশ্বিক প্রচারের দিকে ইঙ্গিত করে সম্মেলনটিকে একটি সফলতা হিসেবে উপস্থাপন করছে।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ‘কূটনীতিকে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছে’ এবং দেখাতে চাইছে যে ‘সবার সম্মিলিত চেষ্টায় যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এ সম্মেলনে যে একটি ইতিহাস তৈরি হচ্ছে, তার সাক্ষী হচ্ছি আমরা। হয়তো শিগগিরই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’
তার সহযোগী ইয়েরম্যাক, ইউক্রেনের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র।
তিনি সম্মেলনে চীনের না থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য একটি যৌথ পরিকল্পনা প্রস্তুত হবে, সেটি রাশিয়াকে দেয়া যেতে পারে।’
তিনি বলেন ‘আমরা মনে করি সেটা হতে পারে নেতাদের দ্বিতীয় সম্মেলনে।'১৯ পুতিন অবশ্য ইউক্রেনের প্রস্তাবিত যেকোনো ধরনের শান্তি প্রক্রিয়া আগেই নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি চান যে চারটি অঞ্চল রাশিয়া আংশিক দখল করে আছে সেগুলো থেকে ইউক্রেন সরে যাক।
এর আগে, ২০২২ সাল থেকেই ওই এলাকাগুলোকে রাশিয়া নিজেদের সাথে সংযুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন ডার লাইন বলেন, ‘ইউক্রেনের ভূমিতে দখলদার বিদেশী বাহিনী রেখে সঙ্ঘাতকে বাঁচিয়ে রাখাটা কোনো সমাধান নয়।’
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে এটি ভবিষ্যৎ আগ্রাসন ও যুদ্ধের উপকরণ হয়ে থাকবে।’
এর আগে, ১৪ জুন শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ ইটালিতে হওয়া সামিটে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করতে দিতে সম্মত হয়েছে। এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তার জন্য ইউক্রেনকে দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এটা রাশিয়াকে আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া যে ‘আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না’, তবে মস্কো-এর পাল্টা হিসেবে ‘সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক’ পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
এই অর্থ চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম কিন্তু এটিকে দেখা হচ্ছে ইউক্রেনকে যুদ্ধ ও দেশটির অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা হিসেবে।
ইটালিতে জি-৭ সামিটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং বাইডেন ১০ বছর মেয়াদী একটি দ্বিপাক্ষিয় নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তিটিকে কিয়েভ ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে কিন্তু এখানে ওয়াশিংটন সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করবে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রায় ৩২৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজ বা জব্দ করা আছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এসব জব্দ করা হয়।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা