যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রক্রিয়ার ‘শেষ’ মুহূর্তে গাজা যুদ্ধ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ জুন ২০২৪, ১৩:৫০
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রক্রিয়া ‘শেষ’ করতে চাওয়ার ঘোষণার মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কাঁপছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্য সফর সমাপ্ত করে শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার বলেছেন, গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তির চুক্তি এখনো সম্ভব।
হামাসের মিত্র লেবাননের ইরান-সমর্থিত প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর একজন সিনিয়র কমান্ডার নিহত হওয়ার এক দিন পর তারা এই হামলা চালায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা যুদ্ধবিরতি রোডম্যাপ প্রচারের জন্য একটি সফরের শেষ পর্যায়ে দোহায় ব্লিঙ্কেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘চুক্তিটি শেষ করতে’ আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে কাজ করবে।
হামাস মঙ্গলবার মধ্যস্থতাকারী কাতার এবং মিসরের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীর কিছু কার্যযোগ্য এবং কিছু সম্পাদনযোগ্য নয়।
হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেন, তারা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চেয়েছে।
তবে ইসরাইল এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং আরব শক্তিগুলোর অনুমোদিত তিন-পর্যায়ের পরিকল্পনায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি, বন্দী বিনিময় এবং গাজার আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, হামাসের ‘অনেক’ দাবি ‘ছোট এবং অপ্রত্যাশিত নয়’। অন্যদিকে ‘অন্য দাবিগুলো জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনে যা উল্লেখ করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি আলাদা।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরাইল এই পরিকল্পনার পেছনে ছিল, তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের উগ্র-ডানপন্থী সদস্যরা এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে সমর্থন করেনি।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, দেশটির উত্তরের (লেবানন) পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বন্দী মুক্তির ইস্যুতে হামাসের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আলোকে’ তিনি বুধবার একটি ‘নিরাপত্তা মূল্যায়ন’ বৈঠক আহ্বান করছেন।
ব্লিঙ্কেন আশা প্রকাশ করেন, চুক্তির মতপার্থক্যগুলোর নিরসন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে আগামী দিনে সেই ফাঁকগুলো পূরণ করা যায় কিনা।’
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হামাস ব্লিঙ্কেনকে ইসরাইলের ওপর ‘সরাসরি চাপ’ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস বলেছে, ‘তিনি ইসরাইলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের চুক্তির বিষয়ে কথা বলে চলেছেন। কিন্তু আমরা কোনো ইসরাইলি কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে কথা বলতে শুনিনি।’
রক্তক্ষয়ী গাজা যুদ্ধ এখন নবম মাসে চলে আসছে, লেবাননের সাথে ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে ভয়াবহ সহিংসতা তীব্র হয়েছে।
লেবাননের একটি সামরিক সূত্র বলেছে, মঙ্গলবার একটি ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর এক কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় প্রতিদিন গুলি বিনিময় হচ্ছে। বুধবার হিজবুল্লাহ প্রায় ১৫০টি রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের তিনটি ঢেউ উত্তর ইসরাইলের দিকে আছড়ে পড়ে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, এতে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ওপর একটি ড্রোন হামলাসহ আরো ১০টিরও বেশি হামলার দাবি করেছে।
হিজবুল্লাহর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাশেম সাফিউদ্দীন ‘তাদের আক্রমণের তীব্রতা, শক্তি,পরিমাণ এবং গুণমান বৃদ্ধি’ করার হুমকি দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে সতর্ক করে দিয়েছিলেন সেনাবাহিনী ‘উত্তরের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার’ করতে ‘খুব তীব্র অভিযানের জন্য প্রস্তুত’।
দোহায় ব্লিঙ্কেন বলেন, হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করার ‘সর্বোত্তম উপায়’ ছিল ‘গাজার সঙ্ঘাতের সমাধান এবং একটি যুদ্ধবিরতি’।
হামাস-শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৩৭ হাজার ২০২ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিভাগই নারী ও শিশু এবং বেসামরিক নাগরিক।
মধ্য গাজার বুরেজ শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আহমেদ আল-রুবি বলেন, তিনি আশা করেন একটি চুক্তি যেটি ভয়াবহ দুর্ভোগের অবসান ঘটাবে।
তিনি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি একটি যুদ্ধবিরতির আশা করছি।’
বাইডেনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ইসরাইলি প্রচারাভিযান গ্রুপ হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলি ফোরাম বলেছে, হামাসের প্রতিক্রিয়া ইসরাইলের বন্দী চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করার দিকে আরেকটি পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে।
সংস্থাটি ইসরাইলকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচকদের পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ‘যেকোনো বিলম্ব একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে বিপন্ন করতে পারে।’
কিছু গাজাবাসীও হামাসকে একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আরো কিছু করার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজার অভ্যন্তরে তার বোমাবর্ষণ এবং স্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে বিমান ও আর্টিলারি গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।
আল-নাসের হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, রাফাহতে বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরাইলি বোমা হামলায় একটি শিশু নিহত হয়েছে। খান ইউনিসের কাছাকাছি বিমান হামলা ও কামানের গোলা আঘাত হেনেছে।
আরো উত্তরে সিভিল ডিফেন্স অ্যাজেন্সি গাজা শহরের জেইতুন ও আশপাশের একটি বাড়িতে হামলায় কমপক্ষে চারজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। যেখানে একটি হাসপাতাল আগে বলেছে, ভোরের আগে একটি অভিযানে সাতজন নিহত হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের একটি তদন্ত বুধবার এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে গাজা যুদ্ধের সময় ইসরাইল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের চেষ্টা’।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তদন্ত কমিশন উল্লেখ করেছে, গাজার বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি ব্যাপক বা পদ্ধতিগত আক্রমণ যার মধ্যে যুদ্ধের একটি পদ্ধতি হিসেবে অনাহারে মৃত্যুর চেষ্টা রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যুদ্ধের এই মাসগুলোতে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে একটি অনন্য স্তরের ধ্বংস এবং এক অনন্য মাত্রার হতাহতের ঘটনা দেখেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গাজায় তীব্র অপুষ্টির জন্য পাঁচ বছরের কম বয়সী আট হাজার টিরও বেশি শিশুকে চিকিৎসা করা হয়েছে। যেখানে গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য শুধুমাত্র দুটি কেন্দ্র বর্তমানে চালু আছে।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা