২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জার্মানিতে বারান্দায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে

জার্মানিতে বারান্দায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে - সংগৃহীত

শুধু বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বাসার জ্বালানির একাংশ উৎপাদন করলে কেমন হয়? জার্মানিতে সরকারি উৎসাহে বারান্দায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বিনিয়োগের খরচও দ্রত উঠে আসছে।

জার্মানিতে বাসার বারান্দায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। ব্যালকনি সোলার প্লান্ট ছাদের ওপর ফটোভোল্টাইক সিস্টেমের মতোই কাজ করে, তবে অনেক ছোট আকারে। সেটা বারান্দায় বসানো যায়, বারান্দার রেলিংয়ে ঝুলিয়ে দেয়া যায়। তাছাড়া সাধারণ ব্র্যাকেটই ইনস্টলেশনের জন্য যথেষ্ট।

ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে রোব্যার্ট ডিটরিশ প্রায় এমন এক শ’ ইউনিট বসিয়েছেন। পুরো প্রণালী ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত বারান্দার সিস্টেমে একটি বা দু’টি সোলার মডিউল থাকে। সেই মডিউলের ক্রিস্টাল সূর্যের আলোকে ডিসি কারেন্টে রূপান্তরিত করে। এই ইনভার্টার ডিসিকে সাধারণ বাসায় ব্যবহৃত এসি বিদ্যুৎ হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলে। তারপর আমি এই গ্রাউন্ডেড প্লাগ সকেটে ঢুকিয়ে দেই। তখন সেই শক্তি বাসায় ব্যবহার করা যায়। আমি তখন সোলার সিস্টেম ব্যবহার করে মিক্সার বা কেটলি চালাতে পারি।’

বারান্দায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ দ্রুত ব্যবহার করলে সরাসরি উপকার পাওয়া যায়। বাড়তি বিদ্যুৎ পাবলিক গ্রিডে চলে যায়।

জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক সংস্থার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিস্টেমের মাধ্যমে অনেক অর্থ সাশ্রয় করা যায়। সংস্থার প্রতিনিধি পেটার স্ট্রাটমান বলেন, ‘কোনো বাসায় ভালো রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থানে দক্ষিণমুখী একটা বড় বারান্দা থাকলে ব্যালকনি সিস্টেম ব্যবহার করে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।’

খুবই আকর্ষণীয় সম্ভাবনা বটে। কাগজে-কলমে গোটা জার্মানি জুড়ে প্রায় চার লাখ বাসায় ব্যালকনি সিস্টেম চালু আছে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, আসল সংখ্যা এর প্রায় দ্বিগুণ। ফাইনের ঝুঁকি থাকলেও অনেকে নিজেদের বারান্দার বিদ্যুৎকেন্দ্র নথিভুক্ত করেননি। গোটা ইউরোপজুড়ে এমন প্রণালীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

সমালোচকদের মতে, এই সব প্যানেল খুবই দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে হেরিটেজ তকমাযুক্ত ভবনের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। ঠিকমতো ইনস্টল করা না হলে সেগুলো ভবনের বাইরের অংশের ক্ষতি করতে পারে অথবা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তবে বাড়ির মালিক না হয়েও ভাড়াটিয়া হিসেবে এমন প্যানেল ব্যবহারের পথ আরো সহজ হয়ে উঠেছে।

বার্লিনে পদার্থবিদ হিসেবে অলিভার লাং সোলার সেল নিয়ে গবেষণা করতেন। এখন তিনি ব্যালকনি সিস্টেম বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, বেশিভাগ মডেলই চীনে তৈরি। সবচেয়ে সস্তারগুলোর দাম দেড় শ’ ইউরোর মতো। ক্রেতাদের জন্য সেই বিনিয়োগের দ্রুত সুবিধা আদায়ের সুযোগ রয়েছে।

অলিভার বলেন, ‘নিজেই সবকিছু জোড়া দিলে, বেশি দামি ব্র্যাকেট না বেছে নিলে, সবচেয়ে সস্তার মডেল কিনলে এবং বাসায় বেশি সময় কাটালে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। চীনে তৈরি এমন মডেল বেশ কয়েক বছর নির্ভরযোগ্যভাবে চালু থাকে।’

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর ফলে পরিবেশেরও কি সুবিধা হচ্ছে? কারণ ফোটোভোল্টাইক প্যানেল তৈরি করতেও তো অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়। বাস্তবে কিন্তু এমন উদ্যোগ অবশ্যই সার্থক। কারণ দু’বছরের মধ্যেই সেগুলো এত জ্বালানি উৎপাদন করে, যা উৎপাদন, পরিবহন ও বাতিল হওয়ার পর ফেলে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সমান। তাছাড়া সোলার প্যানেল সামগ্রিকভাবে বেশ টেকসই হয়ে উঠেছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement