ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন : ঝুঁকির মুখে যেসব বিষয়
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রায় ৪০ কোটি নাগরিক আগামী মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য (এমইপি) নির্বাচনে ভোট দেবে। এটি অন্যতম বৃহত্তম বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক কর্মসূচি।
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং কৃষকদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে অতি-ডানপন্থী দলগুলো আরো ক্ষমতা অর্জন করতে চাইছে। অপরদিকে, গাজা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ ভোটারদের চিন্তায় রয়েছে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি হলো ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন ইইউর সর্বাধিক দৃশ্যমান মুখ হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন কিনা।
আসন্ন নির্বাচন এবং ঝুঁকিতে থাকা সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো এখানে এক নজরে তুলে ধরা হলো।
ভোট কবে?
২৭ সদস্যের এই জোট অর্থাৎ ইইউর নির্বাচন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এই বছরটি ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনের পর দশম নির্বাচন এবং ব্রেক্সিটের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
ভোট ৬ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। সকল সদস্য রাষ্ট্রে ভোট কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে, প্রথম ফলাফলটি শুধুমাত্র ৯ জুন সন্ধ্যায় প্রকাশ করা হবে।
ভোটটি কিভাবে কাজ করে?
নেদারল্যান্ডসে কোনো এক বৃহস্পতিবার নির্বাচন শুরু হয় এবং রোববারে শেষ হয়। বেশিভাগ দেশে রোববারে তাদের নির্বাচন শুরু হয়। ভোট একটি একক ব্যালটে সরাসরি সর্বজনীন ভোটাধিকারে সম্পন্ন করা হয়।
প্রতিটি দেশে নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা দেশটির জনসংখ্যার আকারের ওপর নির্ভর করে। এটি মাল্টা, লুক্সেমবার্গ এবং সাইপ্রাসের জন্য ছয় থেকে শুরু করে জার্মানির জন্য ৯৬ পর্যন্ত হতে পারে। ২০১৯ সালে ইউরোপীয়রা ৭৫১ জন আইনপ্রণেতাকে নির্বাচিত করে। ২০২০ সালে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিদায়ের পর, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা ৭০৫ এ নেমে আসে। ব্রিটিশ এমইপিদের দখলে থাকা ৭৩টি আসনের মধ্যে কিছু আসন অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে পুনর্বন্টন করা হয়।
নির্বাচনের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ১৫ জন অতিরিক্ত সদস্য থাকবেন। ফলে মোট সদস্য সংখ্যা হবে ৭২০ এবং ১২টি দেশ অতিরিক্ত এমইপি পাবে।
নির্বাচনগুলোতে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কিন্তু একবার তারা নির্বাচিত হয়ে গেলে বেশিভাগ আইনপ্রণেতারা তখন আন্ত-রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক দলগুলোতে যোগদান করে।
কারা ভোট দিচ্ছেন?
কিছু দেশে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভোটের অনুমতি দেয়া হয়। বেলজিয়ামে ২০২২ সালে গৃহীত একটি আইন ন্যূনতম ভোট দেয়ার বয়স ১৬-তে নামিয়ে আনে। জার্মানি, মাল্টা এবং অস্ট্রিয়াও ১৬ বছর বয়সীদের ভোট দেয়ার অনুমতি দিচ্ছে। গ্রিসে সর্বকনিষ্ঠ ভোটদানের বয়স হলো ১৭ বছর। অন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রে তা ১৮ বছর।
নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্যও একটি ন্যূনতম বয়স প্রয়োজন। বেশিভাগ দেশে ১৮ বছর থেকে শুরু, ইতালি এবং গ্রিসে তা ২৫ বছর।
ভোটারদের উপস্থিতি কী রকম?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনগুলো সাধারণত বিপুল সংখ্যক ভোটার নিয়ে আসে না। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে এ ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। তবে ১৯৭৯ সাল থেকে ক্রমাগত পতনের পরে ভোটারদের উপস্থিতি ৫০.৭ শতাংশে আসে যা ২০১৪ সালের নির্বাচনের তুলনায় ভোট দানের পরিমাণ আট পয়েন্ট বেশি ছিল। ১৯৭৯ সাল উপস্থিতি হার ৬২ শতাংশে আসে।
এপ্রিলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ইউরোব্যারোমিটারের সর্বশেষ সংস্করণে আসন্ন নির্বাচনে আগ্রহের ঢেউ দেখা যায়। প্রায় ৭১ শতাংশ ইউরোপীয় জানান, তারা খুব সম্ভবত ভোট দেবেন।
প্রধান সমস্যাগুলো কী কী?
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন নাগরিকদের মনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে প্রধান প্রচারণার বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে ইইউএর প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নয়টি দেশে প্রথম উল্লেখ করা হয়।
অর্থনীতি, চাকরি, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বর্জন, জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইউরোপের ভবিষ্যতও সমস্যা হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা হচ্ছে।
ইইউ আইনপ্রণেতারা কী করেন?
ইউরোপীয় পার্লামেন্টই একমাত্র ইইউ প্রতিষ্ঠান, যা ইউরোপীয় নাগরিকদের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। এটি শক্তিশালী ইইউর নির্বাহী শাখা, ইউরোপীয় কমিশনের আসল প্রতিপক্ষ।
পার্লামেন্টের আইন প্রণয়নের প্রস্তাব উত্থাপনের অধিকার নেই। কিন্তু এর ক্ষমতা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। এটি এখন বিস্তৃত বিষয়গুলোর ওপর দক্ষ। তারা জলবায়ু, ব্যাংকিং নিয়ম, কৃষি, মৎস্য, নিরাপত্তা বা ন্যায়বিচার সম্পর্কিত আইনের ওপর ভোট প্রদানে সক্ষম। আইনসভাটি ইইউর বাজেটেও ভোট দেয়, যা ইউরোপীয় নীতি বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্রেনের কাছে সরবরাহকৃত ত্রাণ।
আইনপ্রণেতারাও পরীক্ষণ ও ভারসাম্য রক্ষা ব্যবস্থার একটি মূল অংশ কারণ তাদের সমস্ত ইইউ কমিশনারদের মনোনয়ন অনুমোদন করতে হয়, যারা মন্ত্রীদের সমতুল্য। তারা পুরো কমিশনকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটের মাধ্যমে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করতে পারে।
সংসদটির বর্তমান রূপ কী?
মধ্য-ডান ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি এপ্রিলে গত পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সমাপ্তির সময়ে ৭০৫টির মধ্যে ১৭৬টি আসন নিয়ে, ইউরোপীয় সংসদটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।
ভন ডার লিয়েন ইপিপির অন্তর্গত এবং নির্বাচনের পরে ইইউর নির্বাহী শাখার নেতৃত্বে থাকার আশা করছেন।
দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রুপ হলো এস অ্যান্ড ডি, ইউরোপিয়ান সোশ্যালিস্টের মধ্য-বাম রাজনৈতিক দল। তারা বর্তমানে ১৩৯টি আসন ধারণ করে রেখেছে। উদারপন্থী এবং ইউরোপীয়পন্থী রিনিউ রাজনৈতিক দলটির আসন সংখ্যা ১০২। তারা ৭২টি আসন ধারণ করা গ্রিন এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোটটির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
চরম ডানপন্থীরা আরো আসন লাভের প্রত্যাশা করছে
উগ্র ডানপন্থী দু’টি দল, ইউরোপিয়ান কনজারভেটিভস অ্যান্ড রিফর্মিস্ট (ইসিআর) এবং আইডেন্টিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আইডি), ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তৃতীয় এবং চতুর্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। দু’টি দলের মধ্যে অনেক ভিন্নতা রয়েছে এবং তারা কতটা জোটবদ্ধ হতে পারে এবং ইইউর অ্যাজেন্ডাকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ইইউর প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে তা স্পষ্ট নয়।
ইপিপি এবং এস অ্যান্ড ডি স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদারপন্থী এবং গ্রিন উভয়ই আগের নির্বাচনে বড় বিজয় লাভ করা সত্ত্বেও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
নির্বাচনের পর কী হবে?
একবার প্রতিটি রাজনৈতিক দলের শক্তি যাচাই করা হয়ে গেলে, এমইপিরা ১৬ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তাদের সভাপতি নির্বাচন করবে। তারপরে সম্ভবত সেপ্টেম্বরে কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর, তারা সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাব অনুসরণ করে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি মনোনীত করবে।
২০১৯ সালে ভন ডার লিয়েন একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে (পক্ষে ৩৮৩ ভোট, ৩২৭টি বিপক্ষে, ২২টি অনুপস্থিতি) প্রথম নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাচিত হন। একক ভোটে তাদের অনুমোদনের আগে সংসদ সদস্যরাও ইউরোপীয় কমিশনারদের বক্তব্য শুনবেন।
ভন ডার লিয়েনের অন্য দলে নিয়োগ পাওয়ার ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে তাকে যথেষ্ট সংখ্যক নেতাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে কঠোর ডানপন্থীদের নিয়েও কাজ করতে পারেন বলে আভাস দিয়ে অনেক আইনপ্রণেতার বিরাগভাজন হয়েছেন।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা