মাক্রোঁর জার্মানি সফরে দু’দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ার প্রত্যাশা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ মে ২০২৪, ১৯:৪৩
বার্লিন এবং প্যারিসের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। রাজনৈতিক ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জার্মানি সফরের পর দু’দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী হবেই আশা করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এবং তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ।
জার্মানিতে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় সফর ছিল ২০০০ সালে, জ্যাক শিরাকের সময়ে। দু’দেশের মধ্যে অনেক আগে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে দীর্ঘ বিরতির কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই। কারণ দু’দেশের সরকারপ্রধান ও মন্ত্রীরা কয়েক মাস অন্তর নিয়মিত বৈঠক করেন।
রাষ্ট্রীয় সফরের সময় রাজনীতি নয় বরং দেশের জনগণের সাথে দেখা করাই ফরাসি প্রেসিডেন্টের মূল লক্ষ্য। এই সফরের মূল হোতা চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস নন। সফরের মূল ‘হোস্ট’ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার। জার্মানি সফরে বার্লিন ছাড়াও মাক্রোঁ দম্পতি ড্রেসডেন এবং ম্যুনস্টারে যাবেন। ম্যুনস্টারে ম্যাক্রোঁকে ওয়েস্টফালিয়ার আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। এই পুরস্কার তাকেই দেয়া হয় যিনি ‘একজন অসামান্য ব্যক্তি এবং ফেডারেল ইউরোপে ঐক্য ও শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইমানুয়েল এবং ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর গত বছরের জুলাইয়ে জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্রান্সে অস্থিরতার কারণে প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেন। ম্যাক্রোঁর জন্য অবশ্য পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয়। তবে ইউরোপীয় নির্বাচন দোরগোড়ায়। জরিপ অনুসারে, মারিন লো পেনের ডানপন্থী জনতাবাদী জাতীয় সমাবেশ (রাসেম্বলমেন্ট ন্যাশনাল) ফ্রান্সের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে পারে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউরোব্যারোমিটারের জন্য একটি জরিপ ফরাসিদের মধ্যে ইইউ নিয়ে হতাশার কথা বলেছে।
ইউরোপের মৃত্যু হতে পারে : মাক্রোঁ
ম্যাক্রোঁ এক মাস আগে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপের জন্য আরো সার্বভৌমত্ব এবং সাধারণ প্রতিরক্ষা আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। সেখানে এই কথা বলেন তিনি।
তবে এটাই প্রথম নয়, আগেও ম্যাক্রোঁ ইউরোপের জন্য ‘দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা’ দিয়েছেন। ২০১৭ সালে যখন তিনি ইউরোপীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন তিনি একই সুরে কথা বলেছেন। তারপরে তৎকালীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট (সিডিইউ) চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
এবার ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ইউরোপের হয়ে বক্তৃতার ‘ভালো দিকগুলোর’ প্রশংসা করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে ব্যর্থ হন।
লুডভিগসবুর্গের ফ্রাঙ্কো-জার্মান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মার্ক রিঙ্গেলের মতে, এটা ভিন্ন মানসিকতার ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘ভিশনস হলো এমন বিষয়গুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার ফরাসি উপায় যা আপনি জার্মান ভাষায় খুঁজে পাবেন না। হেলমুট শ্মিডট একবার বলেছিলেন, যদি আপনার দৃষ্টি থাকে, তবুও ডাক্তারের কাছে যান। জার্মানরা ভদ্রভাবে বোঝাতে এমনভাবে বলেন।’
জোটের প্রতি জার্মান আনুগত্য, ফরাসি স্বায়ত্তশাসন
বর্তমানে অনেক বিষয়ে দু’দেশের স্পষ্ট রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে। এক দিকে, প্যারিস যেমন পারমাণবিক শক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অন্যদিকে বার্লিন দেশের শেষ পারমাণবিক চুল্লিটিও বন্ধ করে দিয়েছে। ম্যাক্রোঁ এবং শলৎসের ইউক্রেন যুদ্ধের বাহিনী নিয়েও মতপার্থক্য ছিল। ফ্রাঙ্কো-জার্মান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধ বিমানের পরিকল্পনা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
ম্যাক্রোঁ চান, জার্মানি তার অস্ত্র পরিকল্পনার জন্য ইউরোপীয়, অন্তত ফরাসি কোম্পানিগুলোকে বলুক। অন্যদিকে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কিনতে পেরেই খুশি।
রিঙ্গেল বলেন, ‘প্রতিরক্ষা সবসময় জার্মানি এবং ফ্রান্সের মধ্যে বিতর্কিত বিষয় কারণ আমাদের আলাদা নিরাপত্তা সংস্কৃতি রয়েছে। জার্মানি ন্যাটোর সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। অন্যদিকে, ফ্রান্স নিজের জন্য কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন দাবি করে।’
ফ্রান্স-জার্মানির পরিস্থিতি
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট (সিডিইউ) নেতা ফ্রিডরিখ মেয়ার্ৎস সম্প্রতি অভিযোগ করেন, ফ্রান্স জার্মানি সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে। মেয়ার্ৎস ইউক্রেনের সমর্থনের ইস্যুতে শলৎস এবং ম্যাক্রোঁর মধ্যে ‘ফাটল’-এর কথাও বলেন।
যাইহোক, দুই নেতাই অন্তত বহির্বিশ্বকে দেখাতে চান যে তারা একে অপরকে বোঝেন। এক্স-প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তারা একে অপরের ভাষায় কথা বলেছেন। ম্যাক্রোঁ একজন নাগরিকের একটি প্রশ্ন পড়ে শোনান। ওই নাগরিক জানতে চেয়েছিলেন, ফ্রান্স-জার্মানি অংশীদারিত্ব এখনো গুরুত্বপূর্ণ কিনা। শলৎস ফরাসি ভাষায় এর উত্তর দেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, ফ্রান্স-জার্মান বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী।’ যার জবাবে ম্যাক্রোঁ জার্মান ভাষায় জবাব দিয়ে বলেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ, ওলাফ, আমি আপনার সাথে একমত।’
তারুণ্য বিনিময়
রিঙ্গেল মার্চ মাসে ইনফ্রাটেস্ট পরিচালিত সমীক্ষার উদ্ধৃতি দেন। তিনি জানান, ‘সমীক্ষা বলছে কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে ফ্রান্সের প্রতি জার্মানদের সমর্থন অনেক বেশি। ৮০ শতাংশেরও বেশি জার্মান মনে করেন, ফ্রান্স একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার। অন্যান্য অংশীদারদের তুলনায় ফ্রান্সকে অনেক বেশি সমর্থন করি। ফ্রান্সেও এর প্রতিফলন হয়েছে।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা