লেনিন যেভাবে সোভিয়েত প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বে কমিউনিজম ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ মে ২০২৪, ১৫:১০
সময়টা ১৯১৭ সালের ১৬ এপ্রিল রাত। পেত্রোগ্রাদের (এখনকার সেন্ট পিটার্সবার্গ) ফিনল্যান্ড স্টেশনের এক প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার মানুষ ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে অপেক্ষা করছে।
এক পর্যায়ে, ট্রেনের সিঁড়ি থেকে নেমে আসেন এক ব্যক্তি, তারপর তিনি জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন, ‘মানুষের শান্তির প্রয়োজন, মানুষের রুটির প্রয়োজন, মানুষের জমি দরকার...।’
তিনি যাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন তারা রাশিয়ার নাগরিক এবং যিনি বলেছেন তিনি হলেন ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। লেনিন নামেই যিনি বেশি পরিচিত।
এভাবেই বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের একজন ব্যক্তি ব্যাপক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন এবং পরে তার ক্ষমতার ওপর একের পর এক আঘাত এসেছিল।
যিনি রাশিয়ার ইতিহাস চিরতরে পরিবর্তন করতে এসেছিলেন, যতটা প্রশংসিত ছিলেন ততটাই ভয়ের সৃষ্টি করেছেন।
জারবাদী রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন লেনিন। তিনি তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় নিজ দেশের বাইরে কাটিয়েছেন।
কিন্তু ১৯১৭ সালের সেই রাতে তার প্রত্যাবর্তন, বিপ্লবের তাড়নায় নিমজ্জিত একটি দেশের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে ঠিক পাঁচ বছর পরে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম নেতা হন।
কিন্তু কিভাবে তিনি সাত বছরেরও কম সময়ে রাশিয়ায় বিপ্লব ঘটাতে পেরেছিলেন? এবং তার প্রধান আদর্শ কী ছিল? তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
১. একটি একদলীয় রাষ্ট্র
ভ্লাদিমির লেলিনের জন্ম ১৮৭০ সালে ভলগা নদীর তীরের রাশিয়ার ছোট শহর সিমবির্স্কে। পরবর্তীতে লেনিনের সম্মানে এই শহরটির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বদলে উলিয়ানভস্ক রাখা হয়। লেলিনের বংশীয় উপাধি উলিয়ানভ থেকে এই নামকরণ করা হয়।
যথেষ্ট ধনী পরিবারে বেড়ে উঠলেও লেনিন শুরু থেকেই বিদ্রোহী ব্যক্তিত্বের ছিলেন। তবে একটি ঘটনা তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মানসিকতাকে জাগ্রত করেছিল। আর সেটা ছিল তার বড় ভাই আলেকজান্ডারের মৃত্যুদণ্ড।
১৮৮৭ সালে আলেকজান্ডারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তিনি তৎকালীন জার আলেকজান্ডার তৃতীয়কে হত্যার চেষ্টা করেছেন।
ওই সময়ে রুশ সাম্রাজ্যে মোট জনসংখ্যার বেশিভাগ মানুষের জন্য জীবনযাপন বেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে যারা কৃষি পেশায় ছিলেন, তারা ভীষণভাবে ক্ষুধা ও দরিদ্রতায় ভুগছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে লেনিন তার প্রথম বিপ্লবী পদক্ষেপ নেন এবং ১৮৯৫ সালে তিনি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক (সামাজিক গণতন্ত্র) ধারার প্রচার ও বিস্তারের জন্য কারাগারে যান।
এক বছরেরও বেশি সময় পরে, তিনি মুক্তি পান কিন্তু প্রত্যন্ত সাইবেরিয়ায় তাকে আরো তিন বছর নির্বাসনে কাটাতে হয়েছিল।
এরপর ১৯০০ সাল পর্যন্ত তিনি সুইজারল্যান্ড জেনেভায় পালিয়ে ছিলেন। সেখানে তিনি অন্যান্য সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সাথে তার প্রথম বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন।
ওই প্রকল্পের নাম ছিল সংবাদপত্র ইসক্রা। ইসক্রা ছিল রাশিয়ান সমাজতান্ত্রিকদের একটি রাজনৈতিক সংবাদপত্র যা রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির (আরএসডিএলপি) আনুষ্ঠানিক অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই প্রকাশনীর নাম ইংরেজিতে ‘দ্য স্পার্ক’ হিসেবে অনুবাদ করা যেতে পারে। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়াতে পারে ‘স্ফুলিঙ্গ’। এই সংবাদপত্রটি রাশিয়ার বাইরে থেকে রাশিয়ান সামাজিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমন্বয় করতে চেয়েছিল।
এই কয়েক বছরের নির্বাসনের সময় লেলিনের সাথে তার স্ত্রী নাদিয়া ক্রুপস্কায়া ছিলেন। স্ত্রী নাদিয়াও লেলিনের মতো একই বিপ্লবী ধারণা পোষণ করতেন।
দু’জনেই জার্মান নাগরিক কার্ল মার্কসের বিকশিত মার্কসবাদী ধারণার সমর্থক ছিলেন।
১৯০৩ সালের পর থেকে লেনিন সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক প্রভাব রাখতে শুরু করেন। তখন তিনি অস্থায়ীভাবে লন্ডনে বসবাস করছিলেন, কেননা ওই সময় সেখানে রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই কংগ্রেসে লেনিন ছিলেন প্রধান চরিত্র।
ওই কংগ্রেসের মাধ্যমে সমস্ত রাশিয়ানদের একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে যারা জারবাদ এবং পুঁজিবাদের বিরোধিতা করেছিল।
তবে এই কংগ্রেস দু’টি পক্ষের প্রকৃত চরিত্র ও দৃশ্যমান বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছিল। একদিকে ছিলেন মেনশেভিকরা, যারা আরো মধ্যপন্থী এবং ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত। এবং অন্যদিকে ছিলেন বলশেভিকরা, তাদের নেতা ছিলেন লেনিন এবং যাদের লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় আসা।
সমসাময়িক ইতিহাসের অধ্যাপক জুলিয়ান ক্যাসানোভা বলেন, ‘মেনশেভিকদের মতবাদ পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজের সাথে বেশি মিলে যায়, এ জন্য তাদের সাথে বেশি সংযোগ স্থাপন করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘বলশেভিকরা ছিল একটি কেন্দ্রীভূত, শক্তিশালী, সচেতন, অগ্রগামী দল যা পার্লামেন্টারি পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের ব্যাপারে বেশি একটা চিন্তিত ছিল না।’
বলশেভিক মডেলটি শেষ পর্যন্ত টিকে যায় এবং তারা কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করে, যারা ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন সৃষ্টির পর থেকে শাসন করে আসছে।
কমিউনিস্ট পার্টি ছিল একটি এক-দলীয় রাষ্ট্রের মডেল এবং যার প্রথম নেতা ছিলেন ভ্লাদিমির লেনিন।
কিন্তু বলশেভিকরা কিভাবে এই মডেলটি চাপিয়ে দিতে পেরেছিল?
২. সহিংসতা এবং দমন
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যা রাশিয়ার ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দিয়েছিল এবং আমরা ইতোমধ্যেই শুরুতে উল্লেখ করেছি যে সেটি হয়েছিল ১৯১৭ সালে। ওই সময় লেনিন নির্বাসনে ছিলেন এবং রাশিয়ার জনগণের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
বরং গ্রামাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শিল্প কারখানায় শ্রমিকরা নানাভাবে শোষণের শিকার হতো। তার সাথে যোগ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ।
এভাবে সেই বছর রাশিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ফেব্রুয়ারিতে বা আমাদের প্রচলিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মার্চ মাসে, ১৯১৭ সালের প্রথম বিপ্লব হয়।
এই বিদ্রোহের কারণে দ্বিতীয় জার নিকোলাস ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন।
যিনি ইতোমধ্যেই তার অনেক জনপ্রিয় সমর্থন হারিয়েছিলেন এবং এর মধ্য দিয়েই রাশিয়ান রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।
এই পথ ধরেই একটি অস্থায়ী সরকার গঠন হয়। যার মধ্যে মেনশেভিকরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও তারা শিগগিরই তথাকথিত পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের বিরোধিতা বা পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের ক্ষমতার পাল্টা ধাক্কার মুখে পড়ে। (আজকের সেন্ট পিটার্সবার্গ তখন পেত্রোগ্রাদ নামে পরিচিত ছিল)
অধ্যাপক জুলিয়ান ক্যাসানোভা স্পষ্ট করে বলেন, ‘পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েত পরিচালনা করত বলশেভিকরা, যাদের সাথে জারবাদের পূর্ববর্তী পতনের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’
এক মাস পরে এর ভূমিকা সামনে আসে।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের খবর পেয়ে লেনিন সুইজারল্যান্ডে তার নির্বাসন ত্যাগ করেন এবং জার্মানি, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা করে রাশিয়ায় আসেন।
নিবন্ধের শুরুতেই রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ফিনল্যান্ড স্টেশনের কথা বলা হয়েছিল। এবং আপনি নিশ্চয়ই তার সেই আগমনের উদ্দেশ্য অনুমান করতে পারছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজস্ব বিপ্লব অর্থাৎ বলশেভিকদের বিপ্লব চালু করা।
এ কারণেই এপ্রিলের রাতে লেলিনের বক্তব্য এভাবে শেষ হয়েছিল:
‘আমাদের অবশ্যই সামাজিক বিপ্লবের জন্য লড়াই করতে হবে, শেষ অবধি লড়ে যেতে হবে, সর্বহারা শ্রেণীর সম্পূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক সামাজিক বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। (লং লিভ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল রেভোলিউশন)।’
এভাবেই রাশিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে অক্টোবরে বা আমাদের জন্য নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় বিপ্লব সঙ্ঘটিত হয়।
অস্থায়ী সরকার তখনও খুব দুর্বল এবং অস্থির অবস্থায় ছিল। ফলে বলশেভিকরা সহজেই সোভিয়েতদের উৎখাত করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করার এই ঘটনা অক্টোবর বিপ্লব নামে পরিচিত। একই সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে বের করে আনার মাধ্যমে লেনিন তার বিখ্যাত বক্তৃতার প্রথম উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হন এবং সেটা ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা।
এ জন্য ব্রেস্ট-লিটোভস্ক চুক্তির প্রতি ধন্যবাদ জানাতে হবে।
এটি ছিল রাশিয়ার সাথে জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে ১৯১৮ সালের ৩ মার্চ স্বাক্ষরিত একটি পৃথক শান্তি চুক্তি, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণের অবসান ঘটায়।
কিন্তু বন্ধ দরজার পেছনে এই শান্তি ছিল কেবলই একটি মরীচিকা, কারণ অক্টোবর বিপ্লবের পরে রাশিয়ানদের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। কেননা বলশেভিক শাসন সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়নি।
মূলত বিপ্লবের পরে রাশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে এই লড়াই শুরু হয়।
এর একদিকে ছিল ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকদের রেড আর্মি, যারা সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই করছিল। অন্যদিকে ছিল রক্ষণশীল, উদারপন্থী এবং আরো মধ্যপন্থী সমাজতন্ত্রীদের হোয়াইট মুভমেন্ট।
এই সঙ্ঘাতে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ওই সময়েই বলশেভিকরা সাবেক জার নিকোলাস দ্বিতীয় এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে।
অধ্যাপক ক্যাসানোভার মতে সেটি ছিল ভীষণ নিষ্ঠুর এক সঙ্ঘাত।
তিনি বলেন, ‘বলশেভিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এবং সহিংতার ধারণা পোষণ করা জারবাদী সৈন্যদের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধে নৃশংসতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। এবং এই সহিংতা শুধুমাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক বা ভিন্ন মতাদর্শ ধারণ করাদের বিরুদ্ধে ছিল না।’
ক্যাসানোভা বলেন, ‘বরং এই সহিংসতা কৃষকদের বিরুদ্ধেও হয়েছিল যাদের ফসল রেড আর্মি অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে দখল করে নেয়া হয় এবং অন্যান্য সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের কিছু অংশের বিরুদ্ধেও সহিংসতা হয় যেখানে রাশিয়ানদের সংখ্যা লেনিনের জন্য তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।’
সহিংসতা ও দমন-পীড়নকে লেনিন ন্যায্যতা দিয়েছিলেন নতুন রাষ্ট্রের একীভূতকরণ অর্জনের একমাত্র উপায় হিসেবে। অন্যান্য নির্যাতিত দলগুলোর মধ্যে ছিল ছিল বুদ্ধিজীবী বা রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ।
অবশেষে রেড আর্মি জয়লাভ করে এবং ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়, যার প্রধান ছিলেন লেনিন। কিন্তু তিনি এক বছরের কিছুটা বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। কারণ ১৯২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি স্ট্রোকে মারা যান।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, দমনমূলক শাসনের ভিত্তি স্থাপনের জন্য তিনি যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। পরে জোসেফ স্ট্যালিন দায়িত্বে এসে সেটা আরো নিখুঁত করে তোলেন।
মস্কোর রেড স্কয়ারে লেলিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় লক্ষাধিক লোক হাজির হয়েছিল এবং তার লাশ রাসায়নিক উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়, যা আজও রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাকে সমাধিস্থ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল, তবে কেউ এখন চাইলে তার লাশ মুসোলিয়াম বা সমাধি পরিদর্শন করে দেখে যেতে পারে।
৩. একটি ‘আন্তর্জাতিক’ কমিউনিজম
পরিশেষে বলতে গেলে তৃতীয় পয়েন্টে লেনিনের আদর্শ বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে তিনি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
আপনাকে শুধু তার বিখ্যাত বক্তৃতার শেষের অংশে নজর দিতে হবে। যা ছিল, ‘আন্তর্জাতিক সামাজিক বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।’ (লং লিভ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল রেভোলিউশন)
মনে রাখতে হবে যে লেনিনের নীতি ছিল মার্কসবাদের থিসিসের ওপর ভিত্তি করে। যাইহোক, মার্কস এবং এঙ্গেলস যখন ‘সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব’ সম্পর্কে ভেবেছিলেন তখন তারা সেটা জার্মানির মতো একটি উন্নত দেশের প্রেক্ষাপটেই তা ভেবেছিলেন। রাশিয়ার মতো আরো পশ্চাদপদ দেশের জন্য নয়।
কিন্তু লেনিন এটাকে কোনো সমস্যা হিসেবে দেখেননি, কারণ তার জন্য রুশ বিপ্লব ছিল বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং তার লক্ষ্য ছিল উন্নত দেশগুলোতেও সমাজতন্ত্রের প্রসার ঘটানো।
সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে লেনিন এবং বিশ্বের বেশ কিছু মার্কসবাদী ১৯১৯ সালে চালু করেন থার্ড ইন্টারন্যাশনাল (তৃতীয় আন্তর্জাতিক) যা কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামেও পরিচিত।
সুতরাং তখন থেকে, এর সদস্যরা কমিউনিস্ট হিসাবে পরিচিতি পেতে শুরু করে।
কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্প্রসারণের প্রকল্প সফল হয়নি। এবং একে ক্যাসানোভা ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে:
‘আন্তর্জাতিককরণের প্রক্রিয়া ১৯১৮, ১৯ এবং ২০ সাল পর্যন্ত হয়েছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া বা হাঙ্গেরিতে বিদ্রোহের চেষ্টা করা হয়েছিল। এবং পরবর্তীকে মাত্র একটি দেশে কয়েক মাসের জন্য ব্লা কুন বলশেভিকদের মতো ক্ষমতায় আসেন।’
ব্লা কুন ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান কমিউনিস্ট বিপ্লবী এবং রাজনীতিবিদ যিনি ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরিয়ান সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে শাসন করেছিলেন।
ক্যাসানোভা বলেন, ‘কিন্তু যত বিপ্লবের চেষ্টা করা হয়েছিল সেগুলোয় প্রচুর রক্তপাত হয় কারণ ক্ষমতার কেবল বলপ্রয়োগ, শৃঙ্খলা, পুঁজিবাদের ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সেই সমস্ত দেশে খুব শক্তিশালী আধাসামরিক গোষ্ঠী ছিল যারা বলশেভিক-বিরোধী, সমাজতন্ত্র-বিরোধী এবং গণতন্ত্র-বিরোধী ছিল।’
লেনিন তার সময়ে সমাজতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত সম্প্রসারণ অর্জন করতে পারেননি, কিন্তু তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন কেমন হবে তার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন: এক পরাশক্তি যা বিশ্ব আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে এসেছিল এবং পরবর্তী ৭০ বছর ধরে তার প্রভাব বিস্তার করে গেছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা