২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জার্মানির স্কুলে সহিংসতা বাড়ছে

জার্মানির স্কুলে সহিংসতা বাড়ছে - সংগৃহীত

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জার্মানির স্কুলগুলো থেকে সহিংসতাসহ নেতিবাচক সংবাদ আসা বেড়েই চলেছে। যা জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, পিআইএসএ শিক্ষা র‌্যাঙ্কিংয়ে জার্মান-ছাত্রদের গণিত ও পড়ায় পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ২০২৪ সালের ইয়ুথ স্টাডির জরিপ অনুসারে, স্কুলগুলোতে ডিজিটালাইজেশনেরও যথেষ্ট ঘাটতি দেখা গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চাকরি খুঁজে পাওয়া ও বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে মনে করছে না।

শুলবারোমিটার (স্কুল ব্যারোমিটার) নামে পরিচিত সংস্থার এপ্রিলে পরিচালিত সমীক্ষায় পাওয়া গেছে আরো উদ্বেগজনক ফলাফল।

সেখানে উঠে আসে, প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের কাছ থেকে মানসিক বা শারীরিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন।

জরিপের জন্য এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা রবার্ট বশ ফাউন্ডেশনের সাবেক শিক্ষক এবং শিক্ষা গবেষণার প্রধান ডাগমার ওল্ফ বলেন, ‘আমরা একটি অসুস্থ ব্যবস্থার একটি খণ্ড চিত্র দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপীড়নের কথা বলছি, আমরা ভাঙচুরের কথা বলছি, তবে শারীরিক সংঘর্ষের কথাও বলছি, যার মধ্যে কিছু স্কুল সীমানার বাইরে পর্যন্ত চলে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের জড়িত থাকার খবরও পেয়েছি। এটি অস্বাভাবিকের চেয়েও বেশি, তবে এমন নয় যে এটা আগে ঘটেনি।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সহিংসতা
সম্প্রতি ‘জাতীয় ধর্ষণ দিবসে’ অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে টিকটকে ভাইরাল হওয়া একটি মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য বার্লিনের শিক্ষামন্ত্রীকে ২৮ বিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করতে হয়েছিল।

ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট ও যুদ্ধেরও প্রভাব রয়েছে এতে।

ওল্ফের মতে, স্কুল প্রশাসকেরা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতা দেখেছেন। এটি যে শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেই হচ্ছে তা নয়। এমনকি ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও উৎপীড়ন ও হাতাহাতি বেড়েছে।

শরণার্থীদের একীভূত করা জার্মানির স্কুলগুলোর জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডাগমার ওল্ফ বলেন, ‘গত দু’বছরে আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা দুই লাখেরও বেশি শিশুকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা যেখানে বড় অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে বা গৃহযুদ্ধ রয়েছে সেখানকারও শিক্ষার্থী রয়েছে। অবশ্যই এটি পরিস্থিতিকে ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও।’

স্মার্টফোন, কোভিড-১৯ নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে
টরস্টেন মুলার (ছদ্মনাম) জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার একটি নামকরা স্কুলের একজন সমাজকর্মী।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি শিক্ষার্থীদের চাপ, ক্লান্তি, অবসাদ বাড়ার জন্য স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ‘এটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। তরুণরা নিজেদের চেয়ে অন্যের সম্পর্কে বেশি কথা বলে এবং যে কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। এছাড়া আমরা এখনো করোনভাইরাস মহামারীর পরবর্তী প্রভাবগুলোর সাথে মোকাবিলা করছি, যা মানসিক অসুস্থতার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।’

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কয়েক মাস ধরে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওই সময় জার্মান-ছাত্রদের ১৮০ দিনেরও বেশি সময় বাড়িতে থাকতে হয়েছিল, যা অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

প্রয়োজন আরো মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী
মুলার মনে করেন, জার্মানির স্কুলগুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ছোট ক্লাস, পর্যাপ্ত শিক্ষক, সমাজকর্মী এবং মনোবিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা প্রয়োজন।

কিন্তু জার্মান শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্টেফান ডুল আরো ভালো কিছু করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মনোবিজ্ঞানী, প্রশাসনিক সহকারী ও যুব কর্মীদের পাশাপাশি আমাদের এমন অনেক লোক দরকার যারা জার্মান শেখাতে পারে। কিন্তু আমরা চাইলেই সহজে নিয়োগ করতে পারি না। চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু শ্রমশক্তি কমে যাচ্ছে। এভাবে পুরো ব্যবস্থা চলতে পারে না।’

শিক্ষকদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। তাদের শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর চেয়ে দ্বন্দ্ব অবসানে মধ্যস্থতা করতে হচ্ছে বেশি। ‘স্কুল ব্যারোমিটার’-এর জরিপ অনুসারে, তিনজনের মধ্যে একজন শিক্ষক প্রায়ই আবেগগতভাবে ক্লান্ত বোধ করেন এবং ২৭ ভাগ বলেছেন, তারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবেছেন। তাদের সবার কাছেই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীদের আচরণ।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে : মির্জা ফখরুল বিদেশে বসে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে : হাসনাত আবদুল্লাহ ‘আমার তাহাজ্জুদগুজার ছেলেকে কিভাবে গলাকেটে হত্যা করল ওরা’ রাজবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান পরে কোনো বিপ্লব হলে সেটা ভয়াবহ হবে : মুয়ীদ চৌধুরী আবার লড়াই করে গণতন্ত্র ফেরত আনব : টুকু মিয়ানমারের জান্তার সাথে সংলাপে প্রস্তুত বিদ্রোহীদের একাংশ চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিচারের দাবি জামায়াতের কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশী আহত, পতাকা বৈঠক সখীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

সকল