২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মেঘে মোড়ানো জনশূন্য দ্বীপে যে কারণে যায় কৃষকরা

লিটলা দিমুন দ্বীপ - সংগৃহীত

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে অবস্থিত ছোট্ট একটি দ্বীপ। ফ্যারোয় দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ১৮টি দ্বীপের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে ছোট দ্বীপটির নাম লিটলা দিমুন। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, নিজের অস্তিত্বকে মেঘের আড়ালে ঢেকে রাখতে চায় দ্বীপটি।

জনমানবশূন্য লিটলা দিমুন দ্বীপটি যেন গলা উঁচু করে ছোট পাহাড়ের মতো সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে সেই দ্বীপের দেখা পাওয়াই দুষ্কর। মেঘ যেন আপাদমস্তক কম্বলের মতো মুড়ে রেখেছে তাকে।

স্থানীয়দের মতে, লিটলা দিমুন দ্বীপটি রহস্যময়। আশপাশে কোথাও মেঘ না থাকলেও নিয়ম মেনেই যেন দ্বীপের মাথা থেকে মেঘ পুঞ্জীভূত হতে হতে একেবারে সমুদ্রের পানির সাথে মিশে যায়। এই ধরনের পরিবেশের জন্যই নাকি সেই দ্বীপে কেউ থাকতে পারে না। তবে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অন্য গ্রামের কৃষকেরা বিশেষ কারণে সেই দ্বীপে যায়।

২৪৭ একর জমি ঘিরে রয়েছে লিটলা দিমুন দ্বীপ। ভালবা এবং স্যান্ডভিক নামের দু’টি দ্বীপ থেকে সরাসরি মেঘে ঢাকা লিটলা দিমুন দ্বীপের দেখা পাওয়া যায়। এই দুই গ্রামের কৃষকেরাই মূলত বছরে অন্তত এক বার লিটলা দিমুন দ্বীপে যান। কারণ, সেই দ্বীপের মালিক তারাই।

স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, নব্য প্রস্তর যুগে উত্তর ইউরোপ থেকে একপাল কালো ভেড়া নিয়ে লিটলা দিমুন দ্বীপে আস্তানা গড়েছিল সেখানকার বাসিন্দারা। যুদ্ধ হওয়ার কারণে সেখানকার সকল বাসিন্দাই পালিয়ে নরওয়ে চলে যায়। দ্বীপের মধ্যে ফেলে যায় ভেড়াগুলো।

জনমানবশূন্য লিটলা দিমুন দ্বীপ ডেনমার্কের তৎকালীন সম্রাটের দখলে চলে যায়। সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য সেখানে বসতি গড়তে চাইলেও তা অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ দ্বীপের চারদিক সব সময় মেঘের আস্তরণে ঢাকা থাকত। ফলে আবহাওয়া বসবাসের অনুকূল থাকত না বেশিভাগ সময়।

লিটলা দিমুন দ্বীপটি এতটাই খাড়া প্রকৃতির যে উঠে সেখানে বাস করাও কঠিন। তাই ডেনমার্কের তরফে দ্বীপটিকে নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৮৫২ সালের ২৪ জুলাই ভালবা গ্রামে লিটলা দিমুন দ্বীপটি নিলামে ওঠে। ভালবা এবং স্যান্ডফিক গ্রামের তরফে এই দ্বীপটি প্রায় ৫৭ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নেয়া হয়। দ্বীপটি কিনলেও সেখানে গিয়ে বসবাস করতে পারতো না তারা।

লিটলা দিমুন দ্বীপ কালো ভেড়ার পাশাপাশি প্রচুর সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল। ছোট লেজবিশিষ্ট, কালো লোমযুক্ত ভেড়াগুলো বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামে নিয়ে যায় ভালবা এবং স্যান্ডভিক গ্রামের বাসিন্দারা।

প্রতিবছর শরতের সময় পালতোলা নৌকা নিয়ে লিটলা দিমুন দ্বীপে যায় ভালবা এবং স্যান্ডভিক গ্রামের অধিবাসীরা। ওই সময় দ্বীপের আবহাওয়া সামান্য অনুকূল থাকে এবং কিছু সময়ের জন্য মেঘের পরিমাণও কমে যায়। দড়ি বেঁধে দ্বীপের মধ্যে যান তারা।

লিটলা দিমুন দ্বীপের ভেড়াগুলো বেঁধে আবার নৌকা করে ভালবা এবং স্যান্ডভিক গ্রামে ফিরে যায় সেখানকার বাসিন্দারা। তারপর গ্রামেই সেই ভেড়া পালন করেন। বহু শতাব্দী ধরে এভাবেই দ্বীপ থেকে ভেড়া গ্রামে নিয়ে যায় গ্রাম দু’টির বাসিন্দারা।

১৯১৮ সালে ডেনমার্ক থেকে লবণের একটি জাহাজ লিটলা দিমুন দ্বীপের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ঝড়ের মুখে পড়ে। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যায় ওই জাহাজের ছয় কর্মী। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উদ্ধার করে দ্বীপে আশ্রয় নেয় তারা।

স্থানীয়দের মতে, লিটলা দিমুন দ্বীপে একটি কাঠের ঘর দেখতে পায় জাহাজের কর্মীরা। সেখানে জ্বালানি কাঠের অভাব ছিল না। ১৭ দিন সেই ঘরেই আটকে ছিল তারা। দ্বীপের ভেড়া এবং পাখি খেয়েছিলেন তারা।

বেশিভাগের দাবি, ১৭ দিন পর একটি মাছ ধরার নৌকা নজরে পড়লে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।

লিটলা দিমুন দ্বীপের মাথার ওপর মেঘের আস্তরণ কী করে তৈরি হলো, সে বিষয়ে জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

তাদের মতে, উঁচু জায়গায় বায়ুপ্রবাহ বাধা পেয়ে অনেক সময় একই স্থানে পাক খেতে থাকে। এই অবস্থায় বায়ুর অংশবিশেষ ওপরের দিকে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে এই ধরনের মেঘ তৈরি করতে পারে। আকাশে এই মেঘ দেখা গেলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement