জীবিকার তাগিদে সেনেগালের মৎস্যজীবীরা স্পেনে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:০৯
সেনেগালের সাগরে চাইলেও মাছ ধরতে পারছে না স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। সাগর পেরিয়ে তারা পাড়ি দিচ্ছে স্পেনে। সেখানেও জীবন অনিশ্চিত।
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সালকেই দেশে পর্যাপ্ত মাছ না থাকার জন্য দায়ী করছেন মৎস্যজীবী খলিফা এনদৌর। বাধ্য হয়ে উত্তরপূর্ব স্পেনে কৃষি খাতে সহকারীর কাজ খুঁজছেন তিনি।
সেনেগালে তার অপেক্ষায় স্ত্রী মারিয়াতো এমবোদজে। রাজধানী ডাকারের দক্ষিণের শহর বারগনিতে থাকেন তিনি ও তাদের তিন সন্তান। মাছ প্রক্রিয়াকরণের কাজ জানা এই নারীও কাজ পাচ্ছেন না। দিন রাত স্বামীর কাজের অনুমতি পাওয়ার খবর শোনার আশায় থাকেন মারিয়াতো।
খলিফার মতো আফ্রিকার হাজারো সাবেক মৎস্যজীবীরা ছোট পালতোলা নৌকা বা ডিঙিতে চেপে বিপজ্জনক যাত্রায় পাড়ি দেন। কারণ পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় নজরে পড়ছে মাছের অভাব।
খলিফার মতো বহু মানুষেরই অভিযোগ সরকারের দিকে, কারণ দেশের পানিতে মাছ চাষের অনুমতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) বা চীনের মতো শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। রোববার সেনেগালে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে নির্বাচন। সেখানেও বড় ইস্যু হয়ে সামনে আসছে মাছের অভাবের দিকটি।
এনদৌরের মতে, ‘সেনেগালের সাগর মরে গেছে। কারণ ম্যাকি সাল সব পানিই বেচে দিয়েছেন।’
ম্যাকি সাল ২০১২ সাল থেকে সেনেগালকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার সরকারের মৎস্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের তরফে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এই ম্যাকি সালের নেতৃত্বেই ইইউর সাথে একটি চুক্তি করে সেনেগাল। ১০ হাজার টন টুনা মাছ চাষ করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে ইইউ সেনেগালকে ১৭ লাখ ইউরো দিয়েছে। এছাড়া জাহাজের মালিকদেরও বছরে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ইউরো দিতে হয় বলে জানাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
বেসরকারি সংস্থাদের মতে, বিদেশী ট্রলারগুলোই ওই অঞ্চলে মাছ কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে।
এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশন (ইজেএফ) ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অবাণিজ্যিক বা পরিবারভিত্তিক মৎস্যজীবীদের ধরা মাছের পরিমাণ ৫৮ শতাংশ কমেছে।
যে সাগরে কাজ নেই
পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে মৎস্যজীবীরা তাদের পরিবারের ভরনপোষণ ঠিকমতো করতে পারছে না বলে জানায় ইজেএফকে সাক্ষাৎকার দেয়া মৎস্যজীবীদের ৭৮ শতাংশ।
২০ বছর বয়সী এনগোম এনদৌরের সাথে রওয়ানা দিয়ে এসে পৌঁছায় কাটালুনিয়ার গুইসোনা শহরে। একটি বাজারে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, ‘আগের মতো ১০০ শতাংশ কর্মক্ষম নেই এই সাগর। তাই আমরা নৌকা করে এখানে এসেছি।’
রোববারের নির্বাচনে লড়ছেন আনতা বাবাকার। জয়ী হলে ইইউর সাথে করা চুক্তিকে পুনর্বিবেচনা করবেন বলে জানান তিনি। সেনেগালিজ প্রেস অ্যাজেন্সিকে তিনি বলেন, এই চুক্তির কারণেই সেনেগালের তরুণরা মাছের অভাবে নৌকায় চেপে ইউরোপের দিকে রওয়ানা দিচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপে এসে পৌঁছায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ, ৩৯ হাজার ৯১০ জন। এই সংখ্যা আরো বাড়ছে বলে জানায় তারা।
অভিবাসী অধিকার সংস্থা ওয়াকিং বর্ডার্সের মতে, এই পথে আসতে গিয়ে গত বছর ছয় হাজার সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন।
ক্যানির দ্বীপে পৌঁছে এনদৌর ও এনগোম গুইসোনার দিকে যান। যদিও মৎস্যজীবীর কাজই তাদের প্রথম পছন্দ, কিন্তু সেই কাজের অভাবে কৃষিকাজে সহকারীর কাজে তাদের আপত্তি নেই। বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পেতে তাদের তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এনগোমের দাদা সুলেমানে ফায়েও একজন সাবেক মৎস্যজীবী। তার নাতি সেনেগাল ছাড়ায় তিনি খুশি, কারণ পরিবার চালানোর আর কোনো উপায় ছিল না। সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আসা মৎস্যজীবীদের দেখেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এই যে দেখুন, তারা মাছ ধরে এসেছে। বাক্সগুলো দেখুন, একদম খালি, কিছুই নেই।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে