বার্লিন আদালতের নতুন ‘হলিডে হোম’ নীতি

বার্লিনের আদালতের রায়ের কারণে হাজার হাজার ছুটির আবাস (হলিডে হোম) নিয়মিত ভাড়ার জন্য ফিরিয়ে আনা হতে পারে। বড় শহরগুলোতে আবাসন সঙ্কটের সমাধান ও সাশ্রয়ী ভাড়া চালু করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বার্লিনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো আশা করছে, আদালতের এ রায়ের কারণে হাজার হাজার হলিডে হোম এখন স্বাভাবিক ভাড়ার জন্য উন্মুক্ত হবে। আবাসন সঙ্কটের কারণে বার্লিনে গত দুই বছরে বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে অনেক। মধ্য বার্লিনের কর্তৃপক্ষ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।

বার্লিন টেন্যান্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বেএমফাউ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেবাস্তিয়ান বার্টেলস আদালতের রায়কে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি মনে করেন, আইনটি কার্যকর হলে সারা বার্লিন জুড়ে ১০ হাজারের মতো অ্যাপার্টমেন্ট নিয়মিত ভাড়ার বাজারে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

এয়ার বিএনবি ও বার্লিনের মধ্যকার দীর্ঘ আইনি যুদ্ধ :
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেয়া আদালতের রায়ের মাধ্যমে মধ্য বার্লিনের একটি ভবন নিয়ে চলা আট বছরের আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি হয়েছে। বাড়িটিতে ২৭টি নিয়মিত অ্যাপার্টমেন্টকে ৩৭টি সুসজ্জিত ছুটি নিবাসে পরিণত করা হয়েছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বর্তমানে প্রতি রাতে প্রায় ২০০ ইউরো। সেখানে তিন রাতের জন্য পেন্টহাউসগুলোর ভাড়া ছিলো ৩০০০ থেকে ৪০০০ ইউরো।

পুরানো আইন এখনো প্রযোজ্য আছে দাবি করে ভবনটির মালিক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি শেষ পর্যন্ত জার্মান সাংবিধানিক আদালতে পৌঁছালে তা আবার বার্লিনের আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। আদালত শহর কর্তৃপক্ষের পক্ষে তার আগের রায় বহাল রেখেছে।

জার্মানির রাজধানী বার্লিন ২০১৪ সালে ‘অপব্যবহার নিষিদ্ধকরণ’ আইনের মাধ্যমে আবাসিক ভবনের মালিকদের অ্যাপার্টমেন্ট খালি রাখা বা হলিডে হোম হিসেবে ভাড়া দেয়া নিষিদ্ধ করে। তবে এর কিছু শিথিলতাও রয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টের ছোট একটি অংশ সাবলেট দেয়া যেতে পারে, তবে এর জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।

রাজধানীতে রায়ের প্রভাব :
মধ্য বার্লিনের মেয়র স্টেফানি রেমলিঙ্গার এক বিবৃতিতে এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে, আদালত শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি আবাসন সঙ্কট মোকাবিলা করার শক্তি দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শহরটি এখন অ্যাপার্টমেন্টগুলোর অবৈধ ভাড়া দেয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা ও নিয়মিত ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার মতো অবস্থানে রয়েছে।’

বার্লিন টেন্যান্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেবাস্টিয়ান বার্টেল বার্টেলস জানান, ‘আইনটি পাস না হওয়ায় চলমান হাজার হাজার মামলা করা দীর্ঘদিনেও নিষ্পত্তি করা যায়নি। বেশিভাগ হলিডে হোমগুলো মধ্য বার্লিনের আকর্ষণীয় স্থানে রয়েছে যা ভাড়াটিয়াদের বের করে দেয়ার বিশাল একটি কারণ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এয়ার বিএনবির জন্য নতুন বিধি-নিষেধ:
এয়ার বিএনবি আদালতের রায়ের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। কোম্পানিটির আগের বিবৃতিগুলোতে দেখা যায়, তাদের প্ল্যাটফর্মে অ্যাপার্টমেন্ট সরবরাহকারী বাড়ির মালিক ‘দায়িত্বশীল পর্যটন ও আবাসন সুরক্ষার উদ্যোগের’ নিয়ম মেনেই নিবন্ধন করতো বলে উল্লেখ করা হয়।

এয়ার বিএনবি আরো বলেছে, বার্লিনে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ির মালিক তাদের আয় বাড়ানোর জন্য তাদের ব্যক্তিগত বাড়িগুলো ভাগ করে এয়ার বিএনবিতে ভাড়া দিতো।

অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়নি। তাদের মতে, স্বল্পমেয়াদী ভাড়া দেয়ার জন্য একটি নতুন নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। যার জন্য এয়ার বিএনবির মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল সম্পত্তি নিবন্ধনই নয়, স্থানীয় আইনের সাথে তা সঙ্গতিপূর্ণ কি-না তা পরীক্ষা করতে হবে ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে তথ্য রাখতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ টেনেন্টসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বারবারা স্টিনবার্গেন বলেন, ‘আমস্টারডাম থেকে জাগরেব পর্যন্ত সব বড় শহরেই এই অবস্থা ছিল। শহরগুলো কমিশনকে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলে যা প্ল্যাটফর্মগুলোকে কিছু তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করে। যেমন অ্যাপার্টমেন্টগুলো কোথায়? কতদিন ধরে তাদের ভাড়া দেয়া হয়? কিসের ভিত্তিতে? ভাড়া থেকে আয় কত ছিল?’

এখন স্থানীয় নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই শুধুমাত্র বাড়ির মালিকেরা একটি স্বল্পমেয়াদী নিবন্ধকরণ নম্বর পান যা ব্যবহার করে তারা এয়ার বিএনবিতে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে