জার্মানিতে সুপ্রিম কোর্টকে ক্ষমতা রক্ষার চেষ্টা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৯
সারা বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো তাদের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা করছে। জার্মানিতে কট্টর ডানপন্থি পপুলিস্টদের জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশটির আইনজীবীরা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে চাইছেন।
এই লক্ষ্যে আইনজীবী ও রাজনীতিবিদেরা কাজ করছেন। তারা জার্মানিতে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের হাত থেকে সুপ্রিম কোর্টকে রক্ষা করতে চান। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে চান তারা।
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা বুন্ডেসরাট (সংসদের উচ্চকক্ষ) গতমাসে ১৪ পৃষ্ঠার খসড়া আইন তৈরি করেছে। এতে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত পরিচালনার কিছু নীতি কঠোর করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়া সরকারগুলো সেগুলো সহজে পরিবর্তন করতে না পারে।
জার্মানির সংবিধানে (যেটি ‘বেসিক ল’ নামে পরিচিত) তিনটি ধারা আছে যেগুলোতে সাংবিধানিক আদালতের ১৬ জন বিচারক নির্বাচনের উপায় বলা আছে। ১৬ বিচারকের মধ্যে আটজন নির্বাচন করে সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগ। বাকি আটজনকে নির্বাচন করে বুন্ডেসরাট।
বুন্ডেসরাটে তৈরি করা খসড়া আইন বলছে, সংবিধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘ফাঁক’ রয়েছে যা সাংবিধানিক আদালতের স্বাধীনতা হুমকিতে ফেলতে পারে। বিশেষ করে, নতুন বিচারক নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার বাধ্যবাধকতা নেই, বিচারকের মেয়াদের কোনো সীমা নেই, এবং একজন বিচারকের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে কোনো বাধা নেই। এই নিয়মগুলো ‘অ্যাক্ট অন দ্য ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’-এ উল্লেখ করা আছে, যেটা সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে পরিবর্তন করা সম্ভব। অর্থাৎ, ভবিষ্যতের কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার চাইলে সহজেই পছন্দমতো বিচারক নিয়োগ দিতে পারবে।
এছাড়া বুন্ডেসরাটের খসড়া আইনে বুন্ডেসটাগের এক-তৃতীয়াংশ সাংসদের পক্ষে সাংবিধানিক আদালতের নতুন বিচারক নিয়োগে বাধা দেয়ার সম্ভাবনাও দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।
পোল্যান্ডের ঘটনা থেকে শিক্ষা
২০১৫ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীল ‘পোলিশ ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ পিআইএস। এরপর তারা কনস্টিটিউশনাল ট্রাইব্যুনাল পরিচালনা আইন সংশোধন করেছিল এবং পাঁচজন নতুন বিচারক নিয়োগ দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে তখন পোল্যান্ডে গণবিক্ষোভ হয়েছিল।
এরপর ২০১৯ সালে পিআইএস সরকার সুপ্রিম কোর্টে একটি নতুন চেম্বার গঠন করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের ক্ষমতা নিজহাতে নিয়েছিল। ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস বলেছিল, পোল্যান্ডের বিষয়টি ইইউ আইনের লঙ্ঘন এবং এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে।
এই দুই ঘটনা জার্মানির আইনজীবীদের সাংবিধানিক আদালত রক্ষায় উদ্ভুত হতে সহায়তা করেছে।
জার্মান বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এবং জার্মানির পাবলিক আইনের অন্যতম প্রধান বিশেষজ্ঞ উলরিশ কার্পেনস্টাইন বলেন, মৌলিক অধিকার রক্ষা, ক্ষমতা পৃথকীকরণ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রয়োজন। আর এগুলো রক্ষার জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক আদালত।
বুন্ডেসরাটের সংস্কার প্রস্তাব প্রথমে মধ্য-বাম ও মধ্য-ডানপন্থি সব দল সমর্থন করেছিল। তবে ফেব্রুয়ারির শেষে এসে বিচারমন্ত্রী মার্কো বুশমান ও সংসদে বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনায় স্থবিরতা এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে