আজও গুরুত্ব বহন করে অতীত যুগের জার্মান শিল্পীর চিত্রকর্ম
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩১
ইউরোপের কয়েক শ’ বছর পুরোনো চিত্রকর্ম মিউজিয়ামে দর্শকদের আকর্ষণ করে। মানুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে এক জার্মান শিল্পীর সৃষ্টি আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগেও বিশেষ কদর পাচ্ছে।
জলবায়ু সঙ্ঘট বিষয়টিকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের অন্যতম বিখ্যাত তৈলচিত্রের নাম ‘ওয়ান্ডারার অ্যাবাভ দ্য সি অফ ফগ’, অর্থাৎ কুয়াশার সাগরের ওপরের পথিক। সেটি এঁকেছেন কাস্পার ডাভিড ফ্রিডরিশ। তাকে ওই প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জার্মান শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিউরেটর মারকুস ব্যার্চ বলেন, ‘বিখ্যাত ওয়ান্ডারার অ্যাবাভ দ্য সি অফ ফগ সর্বত্র চোখে পড়ে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে তো বটেই। অনেক মানুষ এই ছবিটির সাথে একাত্ম বোধ করেন। সেই অর্থে ফ্রিডরিশ আবার যেন কালজয়ী পপ তারকা হয়ে উঠেছেন।’
হামবুর্গে এক রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীতে ৬০টিরও বেশি চিত্রকর্মের মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।
জার্মানির এই চিত্রশিল্পী আজকের শিল্পীদেরও কিভাবে প্রেরণা দিচ্ছে, সে দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু সঙ্কটের এই যুগে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।
মারকুস ব্যার্চ বলেন, ‘সমসাময়িক সময়ে ফ্রিডরিশ সম্পর্কে ধারণার বিষয়ে আমাদের সমান বড় ও বিস্তৃত এক প্রদর্শনীও রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, যখন আমরা প্রকৃতির গোটা কাঠামোয় পরিবর্তন দেখছি, প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে গেছে। নতুন অনেক চিত্রকর্ম ফ্রিডরিশের নির্দিষ্ট সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর নতুন অবস্থার সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করছে।’
কাস্পার ডাভিড ফ্রিডরিশ ১৭৭৪ সালে জার্মানির উত্তর পূর্ব অঞ্চলে বাল্টিক সাগর উপকূলে জন্মগ্রহণ করেন। নিজের মা ও দুই ভাইবোনের অকালমৃত্যু তার শৈশবের ওপর কালো ছায়া ফেলেছিল। তার জীবনের অনেকগুলো বছর বিষণ্ণতা ও দারিদ্র্যে ভরা ছিল। তার সৃষ্টিকর্ম এই বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন ঘটায়। তার অনেক চিত্রকর্ম শীতল, অন্ধকার নিসর্গ ও রুক্ষ প্রকৃতির রূপ তুলে ধরে।
ফ্রিডরিশ ঊনবিংশ শতাব্দীর রোম্যান্টিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি। যুক্তি, গণিত ও বিজ্ঞানসর্বস্ব রেনেসাঁর ঠিক পরেই সেই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
রোম্যান্টিকরা জগতের সৌন্দর্য্য ও বিস্ময় তুলে ধরতেই বেশি আগ্রহী ছিল। কিভাবে বিশ্ব চলে, সেই উত্তরের সন্ধান তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
ফ্রিডরিশের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো তার চরিত্রগুলো কখনো দর্শকের দিকে মুখ করে থাকে না। বরং পেইন্টিংয়ের গভীরের দিকেই যেন তাকিয়ে থাকে।
কিউরেটর হিসেবে ইয়োহানেস গ্রাভে মনে করেন, ‘চরিত্রগুলো কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার দিকে নজর দিচ্ছে, নাকি অন্তর্মুখী দৃষ্টিতে মগ্ন রয়েছে, আমরা আসলে তা জানি না। ফ্রিডরিশের পেইন্টিং সম্পর্কে আমরা কত কী জানি না। আমার মতে, আমাদের বার বার তা উপলব্ধি করা উচিত। সেটাও একটা শক্তি হতে পারে।’
এই রোম্যান্টিক চিত্রশিল্পী সম্পর্কে যা জানা গেছে, তা হলো মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্কের এই অন্বেষণ ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং জগতে রূপান্তর আনতে সাহায্য করেছিল। নতুন যুগের এই শিল্পশৈলি ২০০ বছর পরেও প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে