জার্মানিতে এএফডির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ভাবনা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৪
অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টির জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায় তা দেখা গেছে। কিন্তু একইসাথে এএফডির অভিবাসন-বিরোধী নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ।
জার্মানিতে অতি-দক্ষিণপন্থি এএফডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কী হতে পারে সেই ব্যবস্থা?
জার্মানির পার্লামেন্টে এখন এএফডির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ক্ষমতাসীন জোটের তিন শরিক এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিন পার্টির সদস্যরা এএফডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তাব এনেছেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে এবং যারা জোর করে মানুষকে উৎখাত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মিডিয়া রিপোর্ট করেছে যে এএফডি কর্মকর্তারা এবং সিডিইউয়ের কয়েকজন নেতা একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে রিমাইগ্রেশন বা জার্মানি থেকে জোর করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়।
পার্লামেন্টে বিতর্কের সময় এএফডি নেতা বাউম্যান বলেন, ‘ওই মিটিংটা আসলে ছোট ব্যক্তিগত ও বেসরকারি একটি বিতর্কসভা ছিল। এটা কোনো গোপন বৈঠক ছিল না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের গণতন্ত্রবিরোধী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ন্যান্সি ফ্রেজার বলেন, ‘তিনি শেষ বিকল্প হিসেবে এএফডিকে নিষিদ্ধ করার কথাও ভাবতে পারছেন।’
কিভাবে একটি দল নিষিদ্ধ হতে পারে?
২০১৭ সালে এনপিডি পার্টিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল এবং তা ব্যর্থ হয়েছিল। তারপর তারা নাম বদল করে নিজেদের নাম রেখেছে হোমল্যান্ড। সাংবিধানিক আদালত ওই সময় রায় দিয়েছিল, এই দল এতটাই গুরুত্বহীন যে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের বিপদের কোনো কারণ নেই। তাই তারা ওই দলকে নিষিদ্ধ করেনি।’
কিন্তু এএফডির অবস্থা এনএফডির মতো নয়। এএফডির পিছনে এখন যথেষ্ট জনসমর্থন রয়েছে। জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে এই দলকে চরম দক্ষিণপন্থী দল বলা হয়েছে।
ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে অতি কঠিন মাপদণ্ড রেখেছে।
সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিয়ান পেস্তালোজ্জা জানিয়েছেন, ‘কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি আবশ্যিক শর্ত হলো, সেই দল কোনো না কোনো সময় তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিসঞ্চয় করেছিল।’
অর্থ না দেয়া :
তবে সরকারের থেকে দল যে অর্থ পায় সেটা বন্ধ করার কাজটা অত কঠিন নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থ আসে সদস্য চাঁদা, ডোনেশন এবং করদাতাদের অর্থ থেকে। কোনো দল যত বেশি ভোট পায়, তত বেশি সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সাহায্য পায়। এএফডি এখন এক কোটি ইউরো (১১৯ কোটিরও বেশি বাংলাদেশী টাকা) রাষ্ট্রের কাছ থেকে পায়।
ক্রিশ্চিয়ান বলেন, ‘যদি কোনো দল কোনো অসাংবিধানিক লক্ষ্য নেয়, তাহলে তাদের অর্থ বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। তারা যে ওই লক্ষ্যের প্রতি দায়বদ্ধ এটা দেখাতে পারলেই অর্থ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব।’
ক্রিশ্চিয়ান জানিয়েছেন, ‘যদিও এএফডির রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা শুনে মনে হবে, সেগুলো একেবারেই ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা আলাদা।’
তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘এই শর্তগুলো পূরণ হয়েছে কি-না সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। এটা সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
কয়েকটি রাজ্যে এএফডির কাজকর্মের উপর নজরদারি রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নজরদারি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ওই রাজ্যগুলোতে এএফডির সরকারি সাহায্য বন্ধ করা সম্ভব। তবে তার জন্য পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনতে হবে। তারপরেও সাংবিধানিক আদালত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে।
এছাড়া আরেকটা উপায় আছে। সেটা হলো, ব্যক্তিদের মূল অধিকার প্রত্যাহার করে নেয়া হতে পারে। তাহলে তারা কোনো সরকারি পদে থাকতে পারবেন না।
পার্লামেন্টে যখন বিতর্ক হবে, তখন আরো কিছু পন্থা বের হয়ে আসতে পারে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে