২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ আপাতত বন্ধ : সঙ্কটের মুখে ইউরোপের অর্থনীতি

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ আপাতত বন্ধ : সঙ্কটের মুখে ইউরোপের অর্থনীতি - ছবি : সংগৃহীত

বাল্টিক সাগরের ভিতর দিয়ে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন-১ দিয়ে জার্মানিতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি মূলত রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের মূল পাইপলাইন।

রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের অপারেটর কোম্পানি নর্ড স্ট্রিম এজি জানিয়েছে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণকাজের অংশ হিসেবে ওই পাইপলাইনে কাজ চলছে।

কোম্পানিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে কানাডা ও জার্মানিতে মেরামত করা টারবাইন সঠিক সময়ে ফেরত না আসায় এক দফা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে ওই সময় পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানিতে সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয় তারা। তবে এখন যান্ত্রিক পরীক্ষা ও অটোমেশন সিস্টেম পরীক্ষাসহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস রফতানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এর আগে মস্কো বার বার সতর্ক করেছিল যে, পশ্চিম দেশগুলোর বিলম্ব ও অসহযোগিতার কারণে এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস উত্তর জার্মানিতে সরবরাহ করা হয় এবং সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এসব গ্যাস পরিবহন করা হয় যা ইউরোপ মহাদেশের গ্যাসের চাহিদার ৪০ ভাগের চেয়েও বেশি।

রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ইউরোপ বিশেষ করে জার্মানি মারাত্মক সঙ্কটে পড়েছে। সামনের ঠান্ডা দিন ও ইউরোপে গ্যাস সঙ্কটের ফলে এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত। গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো শীতকালীন সময়ের জন্য আলাদা করে গ্যাসের মজুদ করছে এবং তা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি ইউরোপের কিছু দেশ কয়লা উৎপাদনে ফিরে যাওয়ার বা বিকল্প উৎস ব্যবহার করার কথা ভাবছে।

যেমন জার্মানি ঘোষণা করেছে যে, তারা গ্যাসের খরচ বাঁচাতে নিজেদের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে গ্রিডে সংযুক্ত করবে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এই দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস ক্রয় কমানোর বিষয়টি উত্থাপন করে। মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য গ্যাস ক্রয় কমানোর কথা বলে আসছে। ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো যারা রাশিয়ার জ্বালানি শক্তির উৎসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল তাদের জন্য পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারন করেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে তীব্র জ্বালানি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। সেখানে গ্যাসের দাম নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জার্মানির এক কর্মকর্তাদের মতে দেশটিতে গ্যাস মজুদ বর্তমানে ৬১ ভাগ যা এই মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। যদি রাশিয়ার গ্যাস রফতানি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে জার্মানির কাছে মাত্র দুই মাসের জন্য গ্যাসের মজুদ থাকবে।

জার্মানির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও বারট্রাম ব্রোসার্ড এই বিষয়ে বলেন, রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই দেশে ৫৬ লাখ লোক চাকরি হারাতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে গ্যাস সঙ্কট ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য অনেক খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ফলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে এবং এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থান অবনতি হতে পারে। তাই অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে গ্যাস যুদ্ধ ইউরোপ বা এমনকি বিশ্বের উন্নয়নের গতিপথ পাল্টে যেতে পারে।

সূত্র : পার্সটুডে


আরো সংবাদ



premium cement