তুরস্ক কেন আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪০
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নাগোর্নো-কারাবাখ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ ককেশাসের এই অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুটো দেশে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
সবাই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও একমাত্র দেশ তুরস্ক এই সংঘাতে সরাসরি আজারবাইজানের পক্ষ নিয়েছে। নৈতিক সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি আঙ্কারা আজারবাইজানকে সামরিক সহযোগিতা দেয়ার কথাও ঘোষণা করেছে।
সাতাশে সেপ্টেম্বর, রোববার সকালে হঠাৎ করে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর আজারবাইজানের পক্ষে সমর্থন জানাতে তুরস্ক একটুখানিও বিলম্ব করেনি। আঙ্কারা সাথে সাথেই ঘোষণা করে যে, এই লড়াইয়ে তারা আজারবাইজানকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।
নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরোধ চলছে। এই অঞ্চলের মালিকানা কার- এই প্রশ্নে এই দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা ছাড়াও ওই অঞ্চলে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনা তৈরির পাশাপাশি সামরিক সংঘর্ষও হয়েছে।
এই বিরোধ মেটাতে মিনস্ক গ্রুপ নামে একটি মধ্যস্থতাকারী দল কয়েক বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা ওএসসিই।
তুরস্কের বক্তব্য হচ্ছে, এতো বছরের কূটনৈতিক চেষ্টা ও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার পরেও এই সঙ্কটের কোনো সমাধান হয়নি। তাই তারা মনে করে, নাগোরনো-কারাবাখ থেকে আর্মেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে আজারবাইজান যদি ওই অঞ্চলটুকু দখল করে নেয় সেটাই হবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান এবং এর পরেই সেখানে স্থিতি ও শান্তি ফিরে আসবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী নাগোরনো-কারাবাখ দখল করে নিয়েছিল। আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের বলে স্বীকৃত, কিন্তু এটি পরিচালনা করে জাতিগত আর্মেনীয়রা।
এর মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ নিজেদের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে সরকারও গঠন করেছে। কিন্তু আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া কেউই তা মেনে নেয়নি। এই এলাকাটিকে তারা তাদের নিজেদের দেশের অংশ বলে মনে করে। তার জের ধরেই সর্বশেষ এই যুদ্ধের সূত্রপাত। যাতে এখন পর্যন্ত শতাধিক বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
ভৌগলিক কৌশলগত কারণে আজারবাইজান তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। একারণে তুরস্ক বিভিন্ন সময়ে আজারবাইজানকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে নাগোরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়ার সাথে আজারবাইজানের যুদ্ধের সময় আজারবাইজানে অস্ত্র ও সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছিল তুরস্ক। ২০১০ সালে দুটো দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তিতেও সই করেছে।
এবছরের জুলাই মাসেও আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর থেকে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দুটো দেশ মিলে যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়েছে।
এবারের সংঘাত শুরু হওয়ার পর আজারবাইজানের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, আজারবাইজানকে তারা সব ধরনের সহায়তা দেবেন।
আর্মেনিয়াকে তিনি ওই অঞ্চলে শান্তির জন্য ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে সারা বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন, তার ভাষায়, ‘আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে’ রুখে দাঁড়ানোর জন্য।
তুরস্কের ভূমিকা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুরস্কের পক্ষ থেকে আজারবাইজানকে বিভিন্ন রকমের সামরিক সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে :
আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী আর্মেনিয়ার ওপর বোমা হামলা চালাতে তুরস্কের অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করছে।
আজারবাইজানের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে তুরস্কের জঙ্গি বিমান। আর্মেনিয়া অভিযোগ করেছে, তুরস্ক তাদের একটি এসইউ-২৫ বিমান ২৯ সেপ্টেম্বর গুলি করে ধ্বংস করেছে।
তুর্কী সমর বিশেষজ্ঞরা আজারবাইজানের বাহিনীকে উপদেশ ও পরামর্শ দিচ্ছে।
তুরস্কের জেনারেলরাও আজারবাইজানের যোদ্ধাদের পাশাপাশি এই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে বলে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ।
আজারবাইজানের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য তুরস্ক সিরিয়া থেকে ভাড়াটে যোদ্ধাদের সেখানে নিয়ে যাচ্ছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তুর্কী এফ-১৬ দিয়ে নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে আঙ্কারা।
আজারবাইজানের প্রতি তুরস্কের এই অকুণ্ঠ সমর্থনের নিন্দা করেছে আর্মেনিয়া। তারা বলেছে, এর ফলে সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আঙ্কারার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ইয়েরাভান বলছে, ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই তারা বাকুকে সমর্থন দিচ্ছে।
তুরস্কের একজন বিশ্লেষক ইলহান উজগেল বলেছেন, ‘তুর্কী সৈন্যরা ফ্রন্ট লাইনে থাকবে না। আজেরি বাহিনীর তাদের প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে আঙ্কারা সবসময়ই বাকুর সামরিক মিত্র। আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীকে তারা আগে থেকেই সমর্থন দিচ্ছে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া ছাড়াও তারা বাকুর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুদ্ধে তুরস্ক কতোটা অগ্রসর হবে সেটা নির্ভর করে রাশিয়ার অবস্থানের উপরে। কারণ দক্ষিণ ককেশাসে আধিপত্য বিস্তার করে রাশিয়া। সেকারণে আঙ্কারা চাইবে না মস্কোর সাথে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়াতে। এরপরেও তুরস্ক কেন আজারবাইজানের পক্ষ নিচ্ছে?
জ্বালানি স্বার্থ
ককেশাসের ওই অঞ্চল জ্বালানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জ্বালানির উৎস এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুই কারণেই।
এবছরের মে মাসে তুরস্ক তার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস আমদানি করেছে আজারবাইজানের কাছ থেকে। কাস্পিয়ান সাগরে পাওয়া তেলও আজারবাইজান তুরস্কের কাছে বিক্রি করে থাকে। আজারবাইজানের কারণে গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর তুরস্কের নির্ভরশীলতাও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে।
রাশিয়ার সাথে তুরস্কের জ্বালানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে। আঙ্কারার পরিকল্পনা হচ্ছে এর পর তারা ট্রান্স আনাতোলিয়ান গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে আজারবাইজান থেকে গ্যাস এনে তাদের চাহিদা পূরণ করবে।
এবছরের জুলাই মাসে আজারবাইজানের তভুজ অঞ্চলে যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ হয়েছিল তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে আঙ্কারা। যে পাইপলাইনের সাহায্যে তুরস্কে গ্যাস সরবরাহ করা হয় তার খুব কাছেই ওই এলাকা।
তুর্কী সরকারের জ্বালানিবিষয়ক একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তুরস্কের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজারবাইজান থেকে জ্বালানির সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য তুরস্ক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’
তুরস্কের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আঙ্কারাভিত্তিক সাংবাদিক সরোয়ার আলম বলেন, ‘জ্বালানিরর জন্য তুরস্ক আজারবাইজানের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। আজারবাইজান থেকে গ্যাস ও তেল দুটোই তুরস্কে রপ্তানি করা হয়। কাস্পিয়ান সাগরে পাওয়া আজারবাইজানের তেল ও গ্যাসের জন্য তুরস্ক একটি বড় বাজার।’
সরোয়ার আলম বলেন, এই গ্যাস ইউরোপে পাঠাতে হলেও সেটা তুরস্কের ভেতর দিয়ে ট্রান্স আনাতোলিয়ান গ্যাস পাইপলাইনের সাহায্যে পাঠাতে হবে।
ঐতিহাসিক কারণ
আজারবাইজানের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দুটো দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘এক জাতি, দুই দেশ’ এই নীতিতে বিশ্বাসী। শুধু রাষ্ট্রীয় বা সরকারি পর্যায়ে নয়, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সাধারণ জনগণও তাদেরকে একই জাতি বলে মনে করে।
যদিও তারা তাদের ইতিহাসে কখনো এক রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলো না, তারপরেও তুর্কী ও আজেরিরা বিশ্বাস করে যে, তাদের উৎস এক এবং তারা একই রক্ত, ইতিহাস ও সংস্কৃতির উত্তরসূরি।
‘তারা নিজেদের শুধু বন্ধু হিসেবে মনে করে না, তারা বিশ্বাস করে যে তারা একে অপরের ভাই বোন।’
গত শতাব্দীর শুরুতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের একেবারে শেষের দিকেও তাদের মধ্যে একই ধরনের সম্পর্ক ছিল। ১৯১৮ সালে আজারবাইজান আর্মেনিয়া ও রাশিয়ার দিক থেকে আক্রমণের মুখে পড়লে বাকুকে রক্ষার জন্য উসমানীয় সাম্রাজ্য তাদের সামরিক সহযোগিতা দিয়েছিল। তারাই আজারবাইজানকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতিও দিয়েছিল।
সেসময় আজারবাইজান ও উসমানীয় শাসকদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল, নতুন রাষ্ট্রটি যখনই হুমকির মুখে পড়বে তখনই তারা উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছে সামরিক সহযোগিতা চাইতে পারবে। তার পরপরই বাকুকে রক্ষার জন্য সেখানে উসমানীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছিল।
পরে ১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আজারবাইজানের পতন ঘটে। এবং ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আজারবাইজান আবার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন এই দেশটিকে স্বীকৃতি দিতে এবারো তুরস্ক বিলম্ব করেনি।
তার পর থেকে দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক সবসময় একই রকমের উষ্ণ রয়ে গেছে। আর্মেনিয়ার সাথে সবশেষ সংঘাত শুরু হওয়ার পরেও তুরস্ক সাথে সাথেই বাকুর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আর্মেনীয় গণহত্যা
তুরস্কের সাথে আর্মেনিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই শত্রুতামূলক।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয় তুর্কী শাসকদের হাতে বহু আর্মেনীয় নিহত হয়। আর্মেনিয়া একে গণহত্যা বলে উল্লেখ করলেও তুরস্ক একে গণহত্যা বলে স্বীকার করতে রাজি নয়।
আর্মেনিয়ার দাবি, উসমানীয় শাসকরা ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করেছে। বহু মানুষকে পাঠিয়েছে নির্বাসনে।
উসমানীয় তুর্কী শাসকরা এই আর্মেনীয়দের সন্দেহ করতো। তারা মনে করতো খ্রিস্টান আর্মেনীয়রা উসমানীয় খেলাফতের প্রতি যতটা অনুগত, তার চেয়েও অনেক বেশি অনুগত ছিল খ্রিস্টান সরকারগুলোর প্রতি।
আর্মেনিয়া প্রতি বছরের ২৪ এপ্রিল দিনটিকে গণহত্যার সূচনা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্যে দেশটি বহু আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি তুরস্কের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে আর্মেনিয়ার কৌশল।
কিন্তু উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি আজকের তুরস্ক দাবি করে সেটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গৃহযুদ্ধের ফল।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি
আজারবাইজানকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এমনকী সামরিক- যেকোনো ধরনের সমর্থন দেয়ার জন্য তুরস্কের রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকেও সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।
বর্তমানে রজব তাইওয়ানের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিসহ প্রধান বিরোধী দলও কট্টর তুর্কী জাতীয়তাবাদী দল। উভয়েই আজারবাইজানের পক্ষে।
বাকুকে সমর্থন দেয়ার পক্ষে তুর্কী জনগণও। এবছরের জুন মাসে তুরস্কের কাদির হেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে ৬৫ শতাংশের বেশ তুর্কী মনে করে আজারবাইজান তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
‘সেকারণে দেখা গেছে তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হলে সরকার প্রধান সবসময় আজারবাইজান সফরের মধ্য দিয়ে তার বিদেশ সফরের সূচনা করেন,’ বলেন আঙ্কারার সাংবাদিক সরোয়ার আলম।
সরকারপন্থী পত্রিকা হুরিয়াতের সম্পাদক আহমেদ হাকান লিখেছেন, ‘আমাদের কথা এক। সাংস্কৃতিক ভিত্তি এক। আমাদের লোকসঙ্গীতও এক।’
আঞ্চলিক আধিপত্য
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক গত দুই দশক ধরে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করছে। সামরিক পেশি-শক্তি প্রদর্শন করেছে লিবিয়া থেকে শুরু করে উত্তর ইরাক ও উত্তর সিরিয়াতেও।
এসবের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিতে এখন যুক্ত হয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সংঘাত।
ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বা আইসিজি বলছে তুরস্ক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সব পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
আইসিজি বলছে, ‘শীতল যুদ্ধের অবসানের পর থেকে তুরস্ক তার পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন করেছে। ধীরে ধীরে সামরিক ও বাণিজ্যিক শক্তি হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে এমন একটি দেশ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে যারা নিজেদের ইচ্ছে অনুসারে ভূমিকা রাখতে পারে।’
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতে আজারবাইজানের পক্ষে সরাসরি সমর্থন ঘোষণা করে তুরস্ক ওই অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখছে।
কতো দূর যাবে তুরস্ক
এই যুদ্ধে তুরস্ক কতখানি অগ্রসর হবে সেটা পরিষ্কার নয়।
ফ্রান্স আঙ্কারাকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে তুরস্কের যুদ্ধংদেহী মনোভাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এবিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যেও কথা হয়েছে এবং তারা দুজনেই অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়া চাইবে না ওই অঞ্চলে নতুন শক্তি হিসেবে তুরস্কের আবির্ভাব ঘটুক।
তুর্কী বিশ্লেষক উজগেল বলেন, ‘তুরস্কের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ককেশাস মূলত রাশিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চল। তারা হয়তো আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে তুর্কী-আজেরি সামরিক অভিযান সহ্য করবে না। তুরস্ক ও আজারবাইজান যদি সেখানে বড় ধরনের সামরিক সাফল্য আশা করে তাহলে মস্কোর সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
আর্মেনিয়ার সাথেও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। সেদেশে তাদের সামরিক ঘাটিও রয়েছে। আজারবাইজানের সাথেও মস্কোর সম্পর্ক রয়েছে এবং দুটো দেশের কাছেই তারা অস্ত্র বিক্রি করে। ওই অঞ্চলে রাশিয়ার নীতি হচ্ছে : শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধে যদি তুরস্ক জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেটা মস্কোর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই ককেশাসের পাহাড়ি অঞ্চলে সামরিক অভিযানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তুরস্ক নিশ্চয়ই রাশিয়ার কথা বিবেচনা করবে।
অনেকে মনে করেন, ককেশাস অঞ্চলে তুরস্ক হস্তক্ষেপ করলে সেটা রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতে পারে। সিরিয়া ও লিবিয়ার ইস্যুতে ইতোমধ্যেই কিছু বিরোধ তৈরি হয়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা