ইতালির আদালতের নির্দেশে আপাতত স্বস্তি মিলেছে ১০ বাংলাদেশীর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৮
আলবেনিয়ার ক্যাম্প থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের একটি দলকে ইতালিতে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে রোমের একটি আদালত। এর ফলে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পাঁচ বছরের যে চুক্তি করেছিলেন তা একটি বড় বাধার মুখে পড়লো।
নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে যে ১২ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে আলবেনিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী ও দু'জন মিসরের।
রোমের একটি আদালত বলেছে, তাদের ইতালিতে ফিরিয়ে আনা উচিত। কারণ আদালতের মতে এসব অভিবাসন প্রত্যাশীরা এমন দেশ থেকে এসেছে যেখানে ফেরাটা তাদের জন্য নিরাপদ নয়।
আলবেনিয়ার সাথে মেলোনির চুক্তিটি পশ্চিমা সহযোগীদের মধ্যেও বড় ধরণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইতালি সরকার বলেছে, তারা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করবে।
‘কোন দেশ নিরাপদ, এটি আদালতের বলার বিষয় নয়...এটা সরকারের বিষয়,’ জর্জিয়া মেলোনি সাংবাদিকদের বলেছেন। তিনি সোমবার এ নিয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠক ডেকেছেন।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধ অভিবাসন চলতি বছর ৬৪ শতাংশ কমেছে। ইউরোপজুড়ে সরকারগুলো এ ধরণের অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে চাপের মুখে আছে।
আলবেনিয়ার সাথে ইতালির চুক্তির লক্ষ্য হলো ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা তিন হাজার অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।
গত এক মাসে তাদের উদ্ধার করে দু’টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল।
তবে এজন্য আট শ’ মিলিয়ন ইউরোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সমালোচনা করেছে বিরোধী দলগুলোর নেতারা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এলি শ্লাইন বলেছেন এই অর্থ বরং স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় করা যেতে পারে।
আলবেনিয়ার সাথে ওই চুক্তিতে নারী ও শিশুদের রাখা হয়নি। পুরুষদের প্রথম দলটি বুধবার ইতালিয়ান নৌবাহিনীর জাহাজে করে বুধবার আলবেনিয়ায় পৌঁছেছে। এর তিন দিন আগে তাদের ৮৫ জনের একটি দলের সাথে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এর মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশী এবং ছয়জন মিসর থেকে লিবিয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে দু’জন শিশু ও দু’জন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার রোমের বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বাকি অভিবাসীদেরও ইতালিতে ফেরত পাঠানো উচিত, যদিও তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
বিচারকরা বলেছেন যে এসব অভিবাসীদের নিজ নিজ ‘নিরাপদ’ বলে বিবেচনা করা কঠিন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদজি বলেছেন, সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং তার মতে ইতালির ‘অভিবাসী শিবির পরিকল্পনা’ দুই বছরের মধ্যে ইউরোপিয়ান আইনে পরিণত হবে।
ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এখনকার ইউরোপিয়ান আইনটির ব্যাখ্যা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি দেশ তখনই নিরাপদ বলে বিবেচিত হবে যদি ‘নিপীড়ন...নির্যাতন বা অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ বা শাস্তি কখনোই অবলম্বন না করা হয়’।
আলবেনিয়ার সাথে ইতালির চুক্তি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্য সব জায়গায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন তিনি ইতালির চুক্তির এ ‘ধারণাটি’ নিয়ে গত মাসে মেলোনির সাথে আলোচনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা একমত হয়েছেন যে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর গতি বাড়ানো উচিত।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইন বলেছেন নতুন প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ চলছে এবং তিনি মনে করেন অভিবাসীদের মধ্যে যাদের সুরক্ষা দরকার তাদরে ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশে’ সুরক্ষা দেয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে ডাচ সরকারও তাদের নিজস্ব অভিবাসন পরিকল্পনা নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে। ওই পরিকল্পনাতেও যাদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করা হবে, তাদের ‘কথিত ফেরত পাঠানোর’ বিষয়টি আছে।
আশ্রয় আবেদন যাদের বাতিল হয়েছে, তাদের উগান্ডায় পাঠানোর বিষয়টি প্রথমে সামনে নিয়ে এসেছিলেন ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টির নেতা ও ফরেন ট্রেড মিনিস্টার রেইনেত্তে ক্লেভার।
তিনি তার পূর্ব আফ্রিকা সফরের সময় এই ধারণার কথা বলেছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামিটে এ ধারণার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডিক শুউফ। যদিও তিনি এটিকে ‘সৃজনশীল সমাধান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার উগান্ডার সরকারের দিক থেকে আসা একটি বক্তব্যেও একটি পরিষ্কার হয়ে যায়। ‘আমরা শরণার্থীদের উগান্ডায় পাঠানোর বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের সাথে কোনো কিছু আলোচনা করিনি,’ বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেজে অডঙ্গো।
তিনি বলেন, ‘এমন কোনো প্রস্তাব এলে আমরা প্রতিটি ঘটনা আলাদা করে দেখব।’
সূত্র : বিবিসি