জেলেনস্কির বিজয় পরিকল্পনার প্রতি পাশ্চাত্য জোটের সীমিত সমর্থন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা ও ন্যাটোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সামনে তার ‘বিজয় পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করেন এবং দেশটির মিত্ররা এই পরিকল্পনার প্রতি সীমিত সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তবে একজন নেতা বলেন, আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর এটি বিবেচনায় নেয়া হবে।
গত বুধবার ইউক্রেনের সংসদে জেলেনস্কি যে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেন তাতে অন্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ন্যাটোতে যোগদানের নিঃশর্ত আমন্ত্রণ পাবার আহ্বান এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অপারমানবিক প্রতিরোধক মোতায়েন করা।
তিনি বলেন, তার পরিকল্পনা বড় জোর আগামী বছরই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
ন্যাটোর মিত্ররা ও নেতৃত্ব যদিও বলছেন যে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটোর সাথেই বাঁধা রয়েছে, ন্যাটোতে যুক্ত হবার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ এখনো জানানো হয়নি। ন্যাটো জোটের সদস্যরা বলছেন একটি দেশ যখন যুদ্ধে থাকে তখন সে ন্যাটোর সদস্য হতে পারে না। তবে এই যুদ্ধ জয়ের জন্য ইউক্রেনের যতটুকু সমর্থন প্রয়োজন তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে জেলেনস্কির পরিকল্পনা উপস্থাপনের পর ন্যাটো-ইউক্রেন পরিষদ বৃহস্পতিবার দিনের শেষে মিলিত হয়।
ব্রাসেলস-এ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট বলেন, ওই বৈঠকে পাশ্চাত্য জোটের কাছ থেকে ইউক্রেনে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়।
রুট বলেন, ‘আমরা সকলেই অবশ্যই জানি যে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে, সুতরাং প্রশ্নটি হচ্ছে ঠিক কবে এবং কখন তারা আমন্ত্রণটি পাবে। তবে গত রাতের বিতর্কের মূল বিষয় সেটা ছিল না।’
শুক্রবার ব্রাসেলস-এ এক ব্রিফিংয়ের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের কাছে জেলেনস্কির পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই বিজয় পরিকল্পনাটি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পরিকল্পনা এবং আমরা যতটুকু পারি তার সবটুকুই করবো এবং প্রেসিডেন্ট যখন তার লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন তখন আমরা তাকে নিরাপত্তা সহযোগিতা দেবো।’
অস্টিন আরো বলেন, ‘প্রকাশ্যে তার পরিকল্পনা মূল্যায়ন করা আমার কাজ নয়। গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা বড় রকমের নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান করে তাকে সমর্থন করে যাচ্ছি। আমরা তা অব্যাহত রাখবো।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের সাথে বৈঠক করতে বার্লিনে ছিলেন। তাদের আলোচনায়ও ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার ওপর আলোকপাত করা হয়।
ওই বৈঠকের অবকাশে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কার্বি সংবাদদাতাদের বলেন, হোয়াইট হাউস এখনো জেলেনস্কির পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখছে।
তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে ন্যায়সঙ্গত শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পরিকল্পনা। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে শান্তির স্বরূপটা যাই হোক না কেন, সেটি তার কাছে এবং ইউক্রেনের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
ইউক্রেনের মিডিয়া জানিয়েছে যে ব্রাসেলস-এ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকের পর শুক্রবার পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সংবাদদাতাদের বলেন, ওই পরিকল্পনা সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে ‘কোন ঐকমত্য’ হয়নি।
তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন এটি কতখানি বাস্তবসম্মত কারণ ‘এর অনেকটাই নির্ভর করছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ওপর।’
টাস্ক বলেন, আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর এই পরিকল্পনাটি পূনর্মূল্যায়ন করা হবে। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ রকম আভাস দিয়েছেন যে ইউক্রেনকে অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রদান তিনি সমর্থন করেন না, কমপক্ষে বর্তমান পর্যায়ে তো নয়ই।
শুক্রবারই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলে যে ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হবার পর থেকে বৃহস্পতিবার ছিল রাশিয়ার জন্য দ্বিতীয় সবচেয়ে ভয়াবহ দিন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে তাদের অ্যাকাউন্টে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে এক হাজার ৫৩০ জন রুশ হতাহত হয়েছেন।
সূত্র : ভিওএ