‘আলো আসবে’ গ্রুপে ছাত্র আন্দোলন বানচালের নীলনকশা
- সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
- ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে ছাত্রদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা নীলনকশার পরিকল্পনায় মত্ত ছিল আওয়াপন্থী তারকারা। সরকার পতনের আগ মুহূর্তেই এসব পরিকল্পনার সুতা বাঁধা হচ্ছিল। চাটুকার খ্যাতি পাওয়া সেসব তারকার কাজ ছিল বিনোদন জগতে কারা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে, আর কারা বিপক্ষে তা চিহ্নিত করা। বলে রাখা ভালো, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দেশের তারকা অঙ্গন দু’ভাগ হয়ে যায়।
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিল্পীদের কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাধারণ শিল্পীরা এ গ্রুপের সাথে জড়িতদের ধিক্কার জানিয়ে এদের বিচার দাবি জানিয়েছেন।
এই গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। সক্রিয় ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, রফিক (রজনীগন্ধা), সুবর্ণা মুস্তফা, বিজরী বরকতুল্লাহ, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভিন সুইটি, রওনক হাসান, মাসুদ পথিক, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, জামশেদ শামীম, উর্মিলা, মামুনুর রশিদ, খান জেহাদ, এবার্ট খান, সাজু খাদেম, হৃদি হক, ফজলুর রহমান বাবু, আশরাফ কবীর, দীপান্বিতা মার্টিন, সাবেক এমপি হাসান মাহমুদ, সাইমন সাদিক, জুয়েল মাহমুদ, জায়েদ খান, হারুনুর রশিদ, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি, সৈয়দ আওলাদ, সাইদ খান, সাখাওয়াত মুন, স্মরণ সাহা, সায়েম সামাদ, শাকিল (দেশনাটক), শহীদ আলমগীর, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, সঙ্গীতা মেখাল, সৈয়দা শাহানুর, মো: শাহাদাত হোসেন, গুলজার, নাহিদ, মিলন, প্রণীল, এস এ হক অলীক, রুনি, রুবেল শঙ্কর, রাজিবুল ইসলাম রাজিব প্রমুখ।
সম্প্রতি দেশে ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কথা ফাঁস হয়ে যায়। সেখান থেকেই পাওয়া যায় এসব ভয়ঙ্কর তথ্য। সেই গ্রুপে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের গায়ে গরম পানি ঢেলে দিতে বলেছেন। আবার কখনো আন্দোলনের পক্ষে যারা প্রোফাইল লাল করেছিলেন তাদের চিনে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে ‘সাইজ করার’ হুমকিও দিয়েছেন।
শুধু এতেই থেমে যাননি অরুণা। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ‘হারামজাদা’, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘রাজাকার’ তকমা দেয়া, আবার শিল্পীদের স্ট্যাটাস-কর্মকাণ্ডে তুলে ধরে তাদের চিহ্নিত করে রাখতে বলেছেন এই অভিনেত্রী।
অন্য দিকে ছাত্রদের পক্ষ নেয়ায় সঙ্গীতশিল্পী ও গান বাংলা টেলিভিশনের কর্ণধার কৌশিক হোসেন তাপসকে উদ্দেশ্য করে অরুণা বিশ্বাসের একটি মেসেজ ছিল, ‘এই যে দেখেন সরকারের প্রিয় মানুষ তাপস (গান বাংলা)। বয়স যদি কম থাকত পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম।’
এদিকে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস গোপনে দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে খবর এসেছে। শিল্পীর ঘনিষ্ঠজনের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপরই নিজের কৃতিকর্মের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই দেশত্যাগ করেন এই অভিনেত্রী।
অন্য দিকে এ গ্রুপে সাথে জড়িতদের নিয়ে এক ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। তার দাবি, ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের মতো আরো একটি গ্রুপ আছে। যেখানে তিনি এদের কার্যক্রমের ভয়ঙ্কর বর্ণনা তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া নায়িকা পরীমনি সামাজিক মাধ্যমে এ গ্রুপের কার্যক্রমে ধিক্কার জানিয়েছেন। তাতে তিনি অরুণাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘অমানুষ! হিংস্র! লোভী! এত হিংসা নিয়ে কখনই শিল্পী পরিচয় বহন করতে পারেন না আপনি। ধিক আপনাকে। থু...।’
অপর দিকে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ নিয়ে গতকাল জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি এদের বিচার দাবি করেন। ফারুকী লিখেছেন, এটা নিশ্চয়ই বেদনার যে আমাদের দেশে শিল্পীর সাইনবোর্ড নিয়ে এমন লোকজন ঘুরে বেড়াত যারা গণহত্যায় প্রত্যক্ষ উসকানিদাতা অথবা কেউ কেউ নীরব সমর্থক ছিল। এরা শুধু শিল্পী হিসেবে না, মানুষ হিসেবেও নীচু প্রকৃতির। একাত্তরে জন্ম নিলে এরা রাজাকারের দায়িত্ব পালন করত। ফলে এদের এ যুগের রাজাকার বলতে পারেন। নিশ্চয়ই এদের বিচার হবে গণহত্যায় সমর্থন এবং উসকানি দেয়ার অপরাধে।
‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ খ্যাত এই নির্মাতা আরো লিখেছেন, কিন্তু আশার দিকটা আপনাদের বলি। দেখবেন এই গ্রুপের বেশির ভাগই আসলে কোনো শিল্পচর্চার সাথে সেই অর্থে জড়িত না। আমাদের মেইনস্ট্রিম (মানে টেলিভিশন, ওটিটি এবং ফিল্মে যারা প্রধান শিল্পী; তথাকথিত এফডিসি বোঝানো হয়নি মেইনস্ট্রিম শব্দটা দিয়ে) অভিনয় শিল্পী বা ফিল্মমেকারদের কেউই এদের সাথে নাই। এরাই আমাদের প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা