একটা কনটেন্ট দিয়ে সমাজ বা রাষ্ট্রকে বার্তা দেয়া হয় : তানজিকা
- ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
২০০৪ সালের লাক্স আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ তানজিকা আমিন। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে কাজের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এ দিকে সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে কয়েক মাস আটকে আছে রায়হান রাফীর ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানজিকা আমিন। সম্প্রতি এই অভিনেত্রী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অমীমাংসিত আসছে... আসতেই হবে।’ এ নিয়ে কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাকিবুল হাসান
নতুন সরকার গঠনের পর আপনার অভিনীত ওয়েব ফিল্ম ‘অমীমাংসিত’ নিতে একটি পোস্ট দিয়ে ছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। সরকার পরিবর্তনের সাথে এই ওয়েব ফিল্মের কি কোনো সম্পর্ক আছে?
অবশ্যই সম্পর্ক আছে। একটি সত্য ঘটনা নিয়ে আমি ‘অমীমাংসিত’ সিরিজে কাজ করেছি। কিন্তু সেটি মুক্তির বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সরকার। এখন পটপরিবর্তনের পর সিনেমাটি দর্শকের কাছে পৌঁছাবে এটি যে কত বড় আনন্দ তা বলে বোঝানো যানে না।
এটা কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে?
আমাদের প্রযোজক মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট যেহেতু সেন্সরের কথা কিন্তু ছিল না। যেহেতু আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চেয়েছিলেন, তাই সেন্সরে জমা দেয়া হয়। এর পর থেকে সেন্সরেই আটকে আছে। আমরা চাইলেও মুক্তি দিতে পারব না। এখন আবার দেখা হবে, মুক্তির ব্যাপারে আমরা ইতিবাচক।
এটা কি প্রেক্ষাগৃহে দেবে?
মনে হয় না। আইস্ক্রিনে দেখানো হবে।
‘অমীমাংসিত’ মুক্তি পাচ্ছে, খবরটা তো স্বস্তির?
খুবই স্বস্তিদায়ক খবর। আরো কয়েকটা ছবি আটকে ছিল, সেগুলোও মুক্তি পাবে একে একে। আটকে থাকার এই প্রথা যেন ভাঙে। কোনো ছবি যেন আর আটকে রাখা না হয়। একজন শিল্পীর সামনে যেন কোনো বাধার দেয়াল না থাকে। ‘অমীমাংসিত’ সিনেমায় আমি নিহত সাংবাদিক রুনির চরিত্র করছি, এটা শুনেই পরিবারের সদস্যরা বলেছিল, ‘জীবনেও এটা মুক্তি দিতে দেবে না।’
একটা কনটেন্ট আটকে থাকা শিল্পীর জন্য কতটা হতাশার?
হতাশা শুধু শিল্পীর নয়, পুরো টিমের। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা লগ্নি করে, এটাও হতাশার। একটা কনটেন্ট দিয়ে সমাজ বা রাষ্ট্রকে বার্তা দেয়া হয়। দেশে যে এত বর্বরতা ঘটেছে, এসব নির্মাতাকে তুলে আনা উচিত। আমি নির্মাতাদের বলব, দেশ স্বাধীনের পর যত ঘটনা ঘটেছে, সব কিছু চলচ্চিত্রের গল্পে ওঠে আসুক। মানুষের এসব দেখা উচিত। এত দিন হাত-পা বাঁধা ছিল। এমনটি সব সরকারের আমলে কমবেশি হয়েছে, শুধু এর আগের সরকারের সময় নয়।
ছাত্ররা এবার যে আন্দোলন করলেন সেটি কি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে ছিল নাকি সরকারের থাকা স্বৈরাচারী মনোভাব ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে?
দেখুন, একজন শিল্পী বা সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে আপনি বা আমি কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তি কখনো করতে পারি না। কারণ এতে আপনি আপনার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলবেন। তা ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, এই সত্যকে তো আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় যখন এই দল একটা স্বৈরতান্ত্রিক ও পরিবারতান্ত্রিক দল হয়ে ওঠে, তখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, কথা বলা- একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য। গত ১৫-১৬ বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে; শুধু দলীয়করণ নয়, সঙ্গে মোটা অঙ্কের পার্সেন্টেজের বিনিময়ে নিয়োগবাণিজ্য বা টেন্ডারবাণিজ্য চলেছে। আগের সরকারগুলোও একই কাজ করেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এমন এক সিস্টেম বানাল, যেখানে দলীয় আনুগত্য ও চাটুকারিতা সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াল। এ শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিত্র নয়; ক্যান্সারের মতো এ ব্যাধি সমাজের সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে পাথেয় করে জীবনে এগোতে চেয়েছি, আমাদের নিশ্বাসও বন্ধ হয়ে আসছিল, তার পরও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ে এক রকম চুপ ছিলাম। কিন্তু ছাত্রদের বুকে গুলি চালানোর পর, বিশেষ করে আবু সাঈদের মৃত্যু, সব ভয়কে এক ঝটকায় যেন দূর করে দেয়! আমরাও দলেবলে সরকারের ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী মনোভাব ও কার্যক্রমের বিরদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং সবাইকে দাঁড়াতে উৎসাহিত করলাম।
একটি দলের এমন পরিণতি থেকে অন্য সব রাজনৈতিক দলের কোনো শিক্ষা নেওয়ার আছে কি?
আমি আশাবাদী মানুষ হলেও পুরনো দলগুলো নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখি না। কারণ রিফর্ম বা সংস্কার করতে হলে সবার আগে দরকার খোলা মন, যা এদের কারো আছে বলে আমার মনে হয় না। এরা ক্ষমতাকে জনগণের আমানত মনে করেন না; বরং নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ ভাবে। এত বছরে বাংলাদেশের জনগণ এদের সবার চরিত্র বুঝে গেছে, তাই এখন প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী নতুনদের দল; যারা ক্ষমতাযন্ত্রকে টাকা বানানোর মাধ্যম হিসেবে মনে করবে না, নিজেদের অপরাধকর্মকে আইন দ্বারা লেজিটিমেসি দেবে না। আর পুরোনো দলগুলোকে টিকে থাকতে হলে তাদের শিখতে হবে নিজেদের ভুল থেকে, তা না হলে তাদেরও অদম্য তারুণ্যের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
নতুন সরকার গঠনের পর কাজে ফিরেছেন?
কাজ তো করছি বেশ কিছু দিন ধরে। ‘সিটি লাইফ’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ শুরু করেছি। পরিচালনা করছেন শাহরিয়ার তাশদিক। আমার সহশিল্পী নাঈম। নাটকটি মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারও শুরু হয়ে গেছে। দু’টি পরিবারের গল্প। একটা গ্রাম থেকে এসেছে আর আমরা বাড়িওয়ালা। এদের মধ্যকার নানা ঘটনায় এগিয়ে যায় গল্প।
ওয়েবে ছোট চরিত্র করেও নজর কাড়েছেন। এর রহস্য কী?
কোনো রহস্য নেই। গল্প যখন বাছাই করেছি, ব্যাপ্তিকাল দেখিনি, গুরুত্বটা দেখেছি। ‘মহানগর’ সিরিজের বোনটাকে যারাই দেখেছে, কতক্ষণ আছি তা দেখেনি, যতক্ষণ ছিলাম মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। প্রশংসা করেছে। ‘কালপুরুষ’এও তাই।
সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
একটাই প্রত্যাশা, আগের সরকারের কাছ থেকে তারা যেন শিক্ষা নেয়। এটা সব দলেরই নেয়া উচিত। ছাত্র-জনতাকে যেন কোনোভাবে কেউ দুর্বল না ভাবে, বোকা না ভাবে। জনগণই চাইলে সব কিছু করতে পারে, এটা বারবার প্রমাণিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা