২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সেন্সর বোর্ড পুরোপুরি বাতিল চান ফারুকী

সেন্সর বোর্ড পুরোপুরি বাতিল চান ফারুকী -

চলচ্চিত্র মুক্তির ক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ডের আর কোনো প্রয়োজন দেখেন না নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি মনে করেন, এই বোর্ড স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বাধা। জীবন ঘনিষ্ঠ ও সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা বানাতে গেলে এ ধরনের বোর্ড কেবল বাধাই সৃষ্টি করবে যা আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যকে দূরে সরিয়ে দেয়। তিনি এ বিষয়টিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার লাইনের সাথে মিলিয়ে বলেছেন, ‘গাহি নো সেন্সরের গান’! তার আগেই ১৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম জানান চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড সংস্কারের কথা। কারণ এই বোর্ড নিয়ে সিনেমার প্রায় সব স্তরের মানুষের রয়েছে অভিযোগ। যেখানে আটকে আছে অনেক ছবি। সম্ভবত উপদেষ্টার ইচ্ছার সাথে নিজের পরামর্শগুলো যুক্ত করতে চাইলেন ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা। যে ছবিটি অপ্রকাশিত কারণে আটকে রয়েছে সেন্সর বোর্ডের হিমঘরে। এদিন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সেন্সর বোর্ডের সংস্কার না করে পুরোপুরি বাতিলের যুক্তি তুলে ধরেন। প্রয়োজনে সিনেমার রেটিং সিস্টেম চালুর পরামর্শও দিয়েছেন নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। আলাপে তুলে এনেছেন প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের প্রসঙ্গও।
শুরুতেই কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন ফারুকী। বলেন, ‘আপনি কি চান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ছবি হোক? মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান গুমের মতো নিষ্ঠুর এবং অমানবিক যে কাজটি হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকী মিলে করেছে সেটি নিয়ে ছবি হোক? ব্রিগেডিয়ার আজমি বা ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক? কেউ তার ছবিতে প্রশ্ন করুক ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণে আমাদের উপস্থিতি ছিল না কেন? অথবা চান উল্টা দিকে কেউ বিএনপির ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ছবি করুক? তাহলে সেন্সর বোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!’ ফারুকী মনে করেন, এখন যে সেন্সর নীতিমালা রয়েছে, সেটি এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো ছবি আটকে দেয়া যায়। নির্মাতার চাওয়া, ‘আমরা চাই যে দলই সরকারে থাকুক ফিল্মমেকারদের গলা যেন কেউ চেপে ধরতে না পারে। তার বদলে একটি রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে বলে দেয়া হবে কোনটি অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটি প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে ইত্যাদি।’ নিজের দেখানো পথের বিপরীতটাও উল্লেখ করেছেন নির্মাতা। বলেছেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে পারে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটি ছবি বানায়, যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখালো কোনো আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টো দিকে আরেক অন্ধভক্ত একটি ছবি বানালো যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এসব মোটা দাগের বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে, যেখানে ফিল্মমেকাররা ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে। পাশাপাশি আমি জানি ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা বলবেন সরকারি কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। আমার উত্তর, সেখানেও কী বিধান রাখতে চান স্পষ্ট ল্যাঙ্গুয়েজে রাখেন। ভেইগ টার্মে কিছু রাখা যাবে না, যেটার ব্যাখ্যা একশ’ রকম হতে পারে এবং এই সুযোগ নিয়ে সরকার কাউকে হয়রানি করতে পারে।’
ফারুকী তার এই আলাপে তুলে আনলেন সদ্যবিদায়ী প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সাথে এ বিষয়ে আলাপের তিক্ত অভিজ্ঞতাও। স্মৃতি থেকে টেনে ফারুকী বলেন, ‘আমার মনে আছে যে আওয়ামী লীগ সরকার শেষ যে ডামি নির্বাচন করল, তার আগে আমরা একটি আন্দোলন করেছিলাম সব ফিল্মমেকার মিলে। সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে। তখন আরাফাত সাহেবের সাথে আমাদের একবার মিটিং হয়েছিল এবং উনি আমাদের সাথে সব বিষয়ে একমত ছিলেন। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? ক্ষমতার চেয়ারে বসেই উনি আগের ফিল্ম সেন্সর নীতিমালা তো বাতিল করলেনই না; বরং ওটিটির জন্যও একটি সেন্সর নীতিমালা নিয়ে এলেন! এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিল্মমেকারদের গলা চেপে ধরা, যাতে ওনাদের কোনো সমালোচনা না হয়। ফলে চলচ্চিত্র সেন্সর নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি ওটিটি সেন্সর বাতিল করতে হবে। আপনি আমাদেরকে খেলতে বলবেন নেটফ্লিক্স-প্রাইমের সাথে আর হাত পা রাখবেন বেঁধে- এটি তো হয় না।’
সেন্সর প্রথা বাতিল করার আগের সময়টুকু নিয়েও বেশ সচেতন পরামর্শ দিলেন এই নির্মাতা। বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি চলচ্চিত্র সেন্সর নীতি সংশোধনের আগ পর্যন্ত আপাতত কাজ চালানোর জন্য সেন্সর বোর্ডটি তো পুনর্গঠন করতে হবে। করেন সেটি। কিন্তু দয়া করে প্রাগৈতিহাসিক এফডিসির ততধিক প্রাগৈতিহাসিক পরিচালক বা প্রযোজকদের এই কমিটিতে ঢোকানোর যে আজব অভ্যাস আছে, সেটি থেকে বের হয়ে আসেন। বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নেন প্লিজ। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন। সেটি করার অনেক উপায় আছে। বিস্তারিত সাক্ষাতে।’
সেন্সর বোর্ড নিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই প্রতিক্রিয়া বা পরামর্শে এটুকু স্পষ্ট, তিনি বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলামের নজরে আনতে চাইলেন। এমনকি চাইলেন মুখোমুখি বসতেও!
এটিও বলা দরকার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে নিজেকে উচ্চকিত রেখেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, যা এখনো অব্যাহত।


আরো সংবাদ



premium cement