২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যেভাবে কেটেছিল শাফিন আহমেদের শেষ সময়

-


দুই সপ্তাহ আগে ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শাফিন আহমেদ। কত পরিকল্পনা, দেশটির এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন। শুরুটা হয়েছিলও তেমন সুন্দর। দ্বিতীয় কনসার্টের আগে যেন খেলেন ধাক্কা। যে ধাক্কা তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ নিমিষেই পাল্টে দেয়। সামলে উঠতে পারেননি আর। বরণ করে নিতে হয় মৃত্যুকে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে উড়ে আসা শাফিনের হঠাৎ মৃত্যুর খবর হতবাক করে দেয়। শাফিন আহমেদ স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

এই মৃত্যুসংবাদ যেন বিনোদন অঙ্গনের সবার পাশাপাশি গানপ্রেমীদের কাছেও একেবারেই অকল্পনীয়। তাই তো কেউ প্রথম শোনায় কেউ বিশ্বাসও করতে পারছিলেন না। কিন্তু সেটাই সত্যি, সবাইকে অবাক করে দিয়ে চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে ব্যান্ড সঙ্গীতের উজ্জ্বল এই তারকাকে।
২০ জুলাই ভার্জিনিয়ার একটি স্টেজ শোতে গাওয়ার কথা ছিল শাফিন আহমেদের। এ দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি আর সুস্থ হয়ে ফেরেননি। গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয় তার। তার আগে আয়োজকদের একটি ভিডিও বার্তা দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেছিলেন এই কথাগুলো, ‘আজকে কনসার্টে আপনাদের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল। তবে শারীরিক কিছু লক্ষণের জন্য আমি একটু মেডিক্যাল চেকআপ করতে আসি। মেডিক্যাল চেকআপ করতে এসে হাসপাতালের চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী সময় লাগছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চেকআপ করতে হচ্ছে। আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি আছি। আপনাদের সাথে হয়তো আজকে আর দেখা হচ্ছে না। দুঃখিত আমার সব শ্রোতা এবং ভক্তদের কাছে, একই সঙ্গে আয়োজকদের কাছেও। আগামীতে নিশ্চয় আপনাদের সাথে দেখা হবে। আমি আশা করব আপনাদের সাথে দেখা হবে। ধন্যবাদ।’
এরপর সে দিন রাতে শাফিন আহমেদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গভীর রাতে গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়। এর পর তিনি আর কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারেননি। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শাফিন আহমেদকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হয়। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ভার্জিনিয়ার সেই হাসপাতালের চিকিৎসক, এমনটাই জানিয়েছেন বড় ভাই দেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ।

বাবার কবরে সমাহিত হবেন : পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বনানী কবরস্থানে বাবার কবরে সমাহিত করা হবে শাফিন আহমেদকে। পাশে তার মা সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের কবর রয়েছে।
১৯৭৪ সালে মারা গেছেন কমল দাশগুপ্ত। ফিরোজা বেগমকে বিয়ের পর ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন কমল দাশগুপ্ত। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুল সঙ্গীত। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা...এ অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।
যে কারণে মাইলস ছাড়েন শাফিন : ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যান্ড ‘মাইলস’। দলটির প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। তার আগে প্রকাশিত হয় দুটি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘আ স্টেপ ফারদার’। এরপর দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যান্ডটি বিভিন্ন জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড হয়ে ওঠে। শাফিন আহমেদ ছিলেন এই ব্যান্ডের মূল ভোকালিস্ট। ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান তার কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা। কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটার বাজাতেন শাফিন। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভাঙন ধরে মাইলসে। যে কারণে তিনবার মাইলস ছেড়েছেন শাফিন আহমেদ।

২০১০ সালের শুরুর দিকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ান শাফিন। যদিও কয়েক মাস পর আবারও দলে ফেরেন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে আবার ব্যান্ড ছাড়েন তিনি। কয়েক মাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে ফের ব্যান্ডে ফেরেন। ব্যান্ডের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট নিরসনে ওই বছর মাইলসকে একটি করপোরেট কাঠামোর আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে শাফিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, ব্যান্ডটিকে একটি করপোরেট কাঠামো দিতে তিনি মাইলস ব্যান্ড লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছেন। ব্যান্ডের সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলবে কোম্পানির আওতায়। কিন্তু এ বিষয়ে মতভেদ থাকায় পরে ব্যান্ড সদস্যদের মধ্যে নোটারাইজড স্ট্যাম্প পেপারে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। সেই এমওইউর কিছু শর্ত নিয়ে ফের বিরোধ দেখা দেয় ব্যান্ডের মধ্যে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement