২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৮৩-তে ফেরদৌসী রহমান

-

বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের একজন পথিকৃৎ ফেরদৌসী রহমান। একাধারে তিনি পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত ও প্লেব্যাক সিঙ্গার। সঙ্গীতজীবনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা সেই যে ছোটবেলায় শুরু হয়েছিল তা এখনো বহমান। জীবন চলার পথে গানে গানে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা, সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের এ গর্বিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের এ নক্ষত্র গতকাল শুক্রবার ৮৩-তে পা দিয়েছেন। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন এই কিংবদন্তি শিল্পীর জন্ম।

ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘দেখতে দেখতে জীবনের এতটা বছর পেরিয়ে আজ ৮৩-তে পা রাখছি। এখন আসলে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে, জরুরি কাজ না থাকলে ঘরের বাইরে বের হই না। ঘরে বসে যাদের গান ভালোলাগে মাঝে মধ্যে তাদের গান শুনি। যেমন শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনকচাঁপা, শাকিলা জাফর, আলম আরা মিনু- এদের সবার কণ্ঠে আমার গান শুনতে ভালোলাগে। শাহনাজ, রুনা, সাবিনার তো মাইলফলক কিছু গান আছে, যার জন্য শ্রোতা দর্শক মনে রাখবে তাদের আজীবন। পরবর্তীতে বাপ্পা মজুমদার, ন্যান্সি, কনা, লিজা, অপু আমান, ইউসুফ আহমেদ খানও ভালো করছে। তারপরও সবশেষে আমার একটি কিন্তু থেকে যায়। এখন যারা গান করছে তারা গানের গ্রামার জেনে গানের চর্চাটা করছে না। বাকি সব ঠিকই করছে। গান আসলে সাধনার বিষয়। এর বিকল্প বা শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। যে কারণে আমি কিন্তু কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিটিভির এসো গান শিখি অনুষ্ঠানটি করেছি। যাতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমি গানে আমার জ্ঞানটুকু দিয়ে যেতে পারি। যাই হোক আমি সবার দোয়া প্রার্থী।’ ফেরদৌসী রহমান জানান, এরই মধ্যে তার ছেলে রুবাইয়াত দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। বাবা-মাকে সময় দিচ্ছেন তিনি।

সবার প্রিয় ফেরদৌসী রহমান জীবনের প্রথম রেডিওর ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানে গান করেন ১৯৪৮ সালে। ‘আসিয়া’ সিনেমাতে তারই বাবা পল্লী সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের সুরে আব্দুল করিমের লেখা ‘ও মোর কালারে’ গানটি গান। অবশ্য তার আগেই ‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমা মুক্তির মধ্যদিয়ে একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তার অভিষেক হয়। ফেরদৌসী রহমানের জন্ম কোচবিহারে ১৯৪১ সালের ২৮ জুন। ফেরদৌসী রহমান বাংলাবাজার স্কুল থেকে এসএসসি, ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খালামনি হিসেবেও এখনো দারুণ জনপ্রিয় তিনি। ফেরদৌসী রহমান হারুনর রশীদ (হারুনুর না) পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রঙ’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তবে প্রয়াত রবিন ঘোষের সাথে যৌথভাবে তিনি ‘রাজধানীর বুকে’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেন প্রথম। প্রায় ২৬০টি সিনেমাতে গান গেয়েছেন তিনি। তিনটি লং প্লে, ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড, প্রায় ২০টি ক্যাসেটসহ পাঁচ সহস্রাধিক গান তার রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সাথে ফেরদৌসী রহমানের বিয়ে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement