অবশ্যই ভাগ্য এবং দর্শকের আস্থার একটা ব্যাপার আছে -মেহজাবীন চৌধুরী
- ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- মেহজাবীন চৌধুরী। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। প্রতিনিয়তই দর্শকপ্রিয় নাটক ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে লাক্স সুন্দরী নির্বাচিত হয়ে। সে হিসাবে অভিনয়ে ১৪ বছরের পথচলা তার। কিন্তু এবার ঈদে তাকে দেখা গেছে মাত্র একটি নাটকে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাকিবুল হাসান
ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ আপনি। অথচ এবার ঈদে মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। কারণ কী?
সব সময় একই ফ্লোতে চলা যায় না। তাই কাজের সংখ্যা মাঝে মধ্যে কমাতে হয়। এটা যেমন জরুরি, তেমন কঠিনও। আমি যখন ক্যারিয়ার শুরু করি, তখন অনেক শেখার প্রয়োজন ছিল, অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল। সে জন্য অনেক নির্মাতা-শিল্পীর সাথে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। প্রতিক্রিয়া যেমনই আসুক না কেন, প্রত্যেকটা কাজ থেকে আমি শিখেছি। ওই শিক্ষাটা নিয়েই আমার এত বছরের ক্যারিয়ার। আমাদের দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে গিয়ে অভিনয় শেখা যাবে। তাই কাজের মাধ্যমেই শিখতে হয়। এই চেষ্টায় আমি নির্মাতাদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও সুযোগ দিয়েছেন তাদের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করার। তাদের শেখানো পথেই আমি হেঁটেছি; তাই এখন বলতে পারি, গল্প পছন্দ হলেই কাজ করব, অন্যথায় না। আর এই স্যাক্রিফাইসটা অবশ্যই কঠিন। কারণ প্রত্যেক শিল্পী চান, বছরজুড়ে তার অনেক কাজ থাকবে, জনপ্রিয় হবে। কিন্তু এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার পর এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, পরবর্তী প্রতিটি কাজ আলাদা হোক। এ কারণেই এবার একটু বিরতি নেয়া।
ঈদের একমাত্র নাটক ‘তিথিডোর’ থেকে কেমন সারা পাচ্ছেন?
অনেক ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সাধারণত এ রকম ডার্ক টপিক নিয়ে কাজ করলে খুব একটা রেসপন্স পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ঈদের আমেজে মানুষ রোমান্টিক ও একটু কমেডি গল্প দেখতে পছন্দ করে। সেই জায়গায় এ রকম একটা ভারী কাজ, একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে। তারপরও মানুষ দেখছে, প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, ব্যাপারটা ভালো লাগছে।
নাটকে অভিনয় প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন মনে হলো এই গল্পে কাজ করাটা প্রয়োজন?
আমি এমন কাজই করতে চাচ্ছি, যেটা দেখার পর কোনো না কোনোভাবে মানুষের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলবে, তাদের ভাবতে বাধ্য করবে। আমাদের আশপাশে এই ধরনের অনেক মানুষ আছে। ডিপ্রেশনে ভুগছে; কিন্তু জানে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছে না। এই ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা অনেকের মাথায় ঘর বানায়। জীবনের একটা আলোকিত দিক আছে। লড়াই করে সেই আলোতে আসা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রত্যেকটা মানুষের মনোবল আলাদা। অল্প বয়স থেকেই আমাদের ওপর পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজনের নানা চাপ পড়ে। এই চাপ নিতে নিতে মানুষের বয়সের তুলনায় মানসিক বয়স দ্বিগুণ হয়ে যায়। মা-বাবারা ভাবতেই পারেন, শিশুদের পড়াশোনা করতে বলাটা সঠিক; কিন্তু কতটুকু বলা বা চাপ দেয়া উচিত, সেটা বোঝা জরুরি। যখন পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের আনন্দে খেলাধুলা করার কথা, তখন অতিরিক্ত চাপের কারণে তারা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এসব চাপ, ডিপ্রেশন মোকাবেলা করেও বাঁচা যায়, সেই বার্তা রয়েছে ‘তিথিডোর’-এ।
অনেকে হতাশায় হয়তো আত্মহননের কথা ভাবছে। তাদের উদ্দেশে কোনো পরামর্শ দেবেন?
আমি তো পেশাদার কনসালট্যান্ট নই। আমি কোনো পরামর্শ দিলে সেটাই সঠিক- ব্যাপারটা তাও না। তবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমার মাধ্যমটাকে ব্যবহার করে মানুষের চিন্তাভাবনাকে যদি পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে সেটা অনেক বড় পাওয়া হবে। আমার হাতিয়ার তো অভিনয়। সেটার মাধ্যমেই চেষ্টা করেছি বার্তা দিতে। নিজেকে শেষ করে দেয়া কখনো কোনো সমাধান হতে পারে না। মাঝে মধ্যে নিজের জন্য স্বার্থপর হতে হয়, আবার মাঝে মধ্যে পরিবারের কথা ভেবেও জীবনটা কাটাতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আমাদের আশপাশে অনেকেই বিভিন্ন চিন্তাভাবনায় ডুবে আছে। কোনো না কোনো বিষয়ে লড়াই করছে। কারো আচরণে যদি অস্বাভাবিকতা দেখতে পান, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন, তার মনের খবরটা নিন।
নির্মাতা ও অভিনেত্রী জুটির সাফল্যের জন্য কী জরুরি?
যেকোনো কাজে পুরো টিমের লক্ষ্য যদি এক হয়, তাহলেই সেটা সফল হয়। আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, নির্মাতা হিসেবে ভিকি ভাইয়াও সে ধরনের গল্প তুলে ধরতে চান। এ কারণে হয়তো আমাদের কাজ দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এখানে অবশ্যই ভাগ্য এবং দর্শকের আস্থার একটা ব্যাপার আছে। আর শুধু নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীই নয়, টিমের অন্য কুশলীদেরও একই লক্ষ্য থাকতে হয়। তাহলেই কাজটা কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছে।
এই সময়ের অভিনেত্রীদের কেউ কেউ আপনাকে আইডল মানেন। বিষয়টা কেমন লাগে?
আমার মনে হয় না, আইডল মানার মতো কোনো জায়গায় পৌঁছেছি। তবে আমার ক্যারিয়ারটা যদি কেউ দেখে, তাহলে একটু হলেও ভাববে। কারণ আমি অনেক ধরনের গল্পে কাজ করেছি। চাইব, যারা কাজ করছে, তারা ইন্ডাস্ট্রিকে যেন নিজের পরিবার মনে করে দায়িত্ব নিয়ে ভালো কিছু উপহার দেয়।
এখনকার নাটকের নাম, সংলাপ নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা হয়। এটা নিয়ে আপনার পর্যালোচনা জানতে চাই...
এখানে দর্শকের অনেক বড় দায়ভার আছে। দর্শক যখন ভালো গল্প দেখবে, তখন যেগুলো মানসম্পন্ন কাজ না, সেগুলো এমনিতেই পিছিয়ে যাবে। ধরুন একটা কনটেন্ট, যেটার নাম খুব আকর্ষণীয় (খারাপ সেন্সেই হয়তো বলছি), সেই নাম দেখার পরও আপনি কেন ক্লিক করবেন? এটা কি আপনার রুচিবোধের সাথে যায়? দর্শক হিসেবে কোন কাজটি দেখব, কোনটা নিয়ে কথা বলব, সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করব, সেটা নিজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু দর্শকের সামনে মানসম্পন্ন কাজ নিয়ে আসার দায়টা শিল্পের সাথে জড়িতদের নয় কি?
হ্যাঁ, দায়টা উভয়পক্ষের ওপরেই পড়ে। আমি কী বানাচ্ছি, কী দেখাচ্ছি, সেটার পেছনের তাৎপর্য কী, সেটা বোঝা যেমন দরকার; তেমনি যিনি দেখছেন, কেন দেখছেন, তারও ভাবা উচিত। আমি মনে করি, যার মধ্যে একটা ভালো গল্প বলার আত্মবিশ্বাস আছে, সে সব সময় এগিয়ে থাকবে। অনেক ট্রেন্ডি জিনিস আসে, সেগুলো আসলে ক্ষণস্থায়ী।
দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কবে মুক্তি পাবে? নতুন কোনো ছবিতে কি যুক্ত হয়েছেন?
নতুন ছবির কথা চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। যে দুটি ছবির (সাবা ও প্রিয় মালতী) কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে শিগগিরই ঘোষণা আসবে। অবশ্যই এই বছরের মধ্যে সুখবর আসবে।
শেষ প্রশ্ন। আমি চাই এর উত্তরটা মনের ভেতর থেকে দিন। সব কাজ শেষে ঘরে ফিরে একান্ত নিজের কাছে মেহজাবীন আসলে কেমন?
খুবই কঠিন একটা প্রশ্ন। নিজেকে নিজে বর্ণনা করা সবচেয়ে কঠিন। আমার কাছের বা পরিবারের মানুষকে এই প্রশ্ন করলে হয়তো উত্তর দিতে পারবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি আরো পরিশ্রম করতে চাই। অভিনয়ের মাধ্যমে যেন নিজের দেশকে তুলে ধরতে পারি, সেই ইচ্ছাটা আছে। আর দিনশেষে আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। চাহিদার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছি। জীবন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা