বর্তমানের গুরুত্বই আমার কাছে বেশি - ফজলুর রহমান বাবু
- ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০৫
অভিনয়ে বারবার নিজেকে ভাঙা এবং নতুন করে গড়া- এমন কথাটিই বোধ হয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করে শুধু দর্শকপ্রিয়তাই অর্জন করেননি, সাধারণ মানুষের কাছে পেয়েছেন দারুণ ভালোবাসা। গুণী এই মানুষটি বর্তমান ব্যস্ততায়ও ঈদ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাকিবুল হাসান
আর কিছু দিন পরই কোরবানির ঈদ। এই উৎসব নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
ঈদ নিয়ে আমার সেইভাবে পরিকল্পনা নেই। তবে এখন ঈদ আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে গিয়ে করি। সেখানেই আত্মীয়স্বজনরা যায়, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয়। ঈদের আনন্দটা এখন আসলে রিইউনিয়ান। ছোট বেলায় এক ধরনের আনন্দ ছিল। আর এখনকার আনন্দ হচ্ছে যে, গ্রামের বাড়িতে গেলে আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা হয়, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। এই যে সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া এটাই আমার মনে হয় সবচেয়ে ভালো লাগা।
ঈদের সালামি নিয়ে আপনার কোনো মজার স্মৃতি আছে?
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সামজিকভাবে সালামি দেয়ার রেওয়াজটা ছিল না। তবে আম্মা ঈদ উপলক্ষে ১০টা টাকা দিতেন। আব্বা, আব্বাকে অবশ্য পেয়েছি অনেক কম। কারণ আমি ছোট বেলাই বাবাকে হারিয়েছি। আম্মা যে ১০ টাকা দিতেন সেটা দিয়েই চলতাম, আনন্দ করতাম, জামা কিনতাম। আর এখন তো ছোট যারা আছে, বিশেষ করে বন্ধুবান্ধবের ছেলে মেয়েদেরও সালামি দেই। এটা আমার কাছে ভালোই লাগে। যে এর মাধ্যমে ঈদের আনন্দটা ভাগ করে নিতে চাই।
ঈদের সময় কি ছোট বেলায় সিনেমা দেখতেন?
সিনেমা আমি দেখতাম। তবে ঈদের দিন কোনো দিন সিনেমা দেখি নাই। আমি হয়তো ঈদের সিনেমা দেখাতাম পরবর্তীতে কোনো একটা দিন। ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়াটা ছিল মূল আনন্দ।
গত ঈদে আপনার দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। ‘ওমর’ এবং অপরটি ‘মেঘনা কন্যা’। দুটি সিনেমাই দর্শক মহলে প্রশংসিত ছিল। ওই ছবিগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন?
দর্শক ভালো গল্প চায় সব সময়। ওমর সিনেমায় শক্তিশালী গল্প ছিল। অন্য দিকে মেঘনা কন্যা সিনেমায় দারুণ গল্পের খোঁজ পেয়েছেন দর্শক। দুটি সিনেমা করে আমি অভিনেতা হিসেবে তৃপ্ত। ছবি বাছাইয়েরে ক্ষেত্রে আমি এই বিষয়গুলোকেই বেশি গুরুত্ব দেই।
পারিপার্শ্বিক দিক নিয়ে আপনার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন?
জীবন জীবনের মতোই, সবার জীবন তো এক না। ছোটবেলায় জীবন নিয়ে আমার কোনো ভাবনা ছিল না। একটা পর্যায়ে এসে মনে হলো, জীবনটা এমনও হতে পারে। যে কাজটিকে আমার সবচেয়ে পছন্দের, ভালোবাসা হিসেবে নিয়েছি; সেটাকেই আমি পেশা হিসেবে নিতে পেরেছি। সে দিক থেকে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার জীবন নিয়ে আমি অনেক বেশি সুখী। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সংগঠন- সব মিলিয়ে আমি আমার জীবনটা যেমন চেয়েছিলাম, প্রায় সে রকমই হয়েছে আর কি। তবে মানুষের জীবন তো আর নির্ঝঞ্ঝাট হয় না, নানান ধরনের উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাই থাকে। এর মধ্যেও মনে করি, অনেকটাই নির্ঝঞ্ঝাট জীবন আমি পেয়েছি।
সেই নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের সেরা সময়টা যদি আলাদা করে বলতেন।
সেরা সময় নিয়ে তো আসলে ওই ভাবে চিন্তা করি না। তবে কৈশোরের কিছু দিন, যখন আমার বাবা মারা গেলেন, ওই সময়টা ছাড়া জীবনের আর সব সময়কেই আমার কাছে সেরা সময় মনে হয়। এর কারণ হলো, বর্তমানটাকেই আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, যখন যা বর্তমান ছিল সেই সময়টাকেই আমি উপভোগ করেছি। আমি মনে করি, এখন আমার সেরা সময়। অতীত নিয়ে আমি বেশি ভাবি না, আর ভবিষ্যৎ তো অবশ্যই মানুষের আছে, যা আমরা জানি না। তাই বর্তমানের গুরুত্বই আমার কাছে বেশি।
চলচ্চিত্রে এখন ভিন্নধারার গল্পের ছবি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। একই ফরম্যাটের মধ্যে ছবির গল্প এখন আর দর্শক নিতে চায় না। চলচ্চিত্রের এই যে পরিবর্তন এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
দেখুন, এক সময় বলা হতো টেলিভিশন কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা কিংবা কলাকুশলীরা মেইন স্ট্রিম বা মূলধারার না। অথচ সারা পৃথিবীতে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এত ধারা নেই। সবই কিন্তু ফিল্ম। একটা বিজ্ঞাপনও কিন্তু ফিল্ম। আসল কথা হলো- গল্পটা কে কিভাবে এবং কত সময় ধরে দর্শকদের বলবেন কিংবা দেখাবেন। আমাদের এখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা কিংবা অভিনয় শিল্পীদের খুব সুন্দরভাবে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে আশার কথা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু ভিন্নধারার গল্প ও ভিন্নধারার নির্মাণশৈলীর ছবি নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলো জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। আমি যদি সর্বশেষ ‘আয়নাবাজি’র কথাই বলি তাহলে বলতে হবে বেশ কয়েক বছর আগে একটি সিনেমা মুক্তি পায় যেটা অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা সফলও হয়েছে। মজার একটি কথা বলি- ‘আয়নাবাজি’র আগে ‘মনপুরা’ সিনেমাটি চলচ্চিত্র অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই দুটি ছবির পরিচালকই আমাদের টিভি মিডিয়ার এবং দুটি ছবির শিল্পী-কলাকুশলীরা টিভি মিডিয়ারই। এখানে একটি কথা না বললেই নয় সেটি হলো- আয়নাবাজির মতো আমাদের অজ্ঞাতনামাও অনেকদিন ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলতো যদি ছবিটির প্রচার-প্রচারণা আরো জোরালোভাবে করা হতো। আমাকে এখনো অনেকে ফোন করে বলেন, ছবিটি তারা দেখতে চায়, কোন হলে গেলে দেখা যাবে এমন প্রশ্ন প্রতিনিয়ত শুনছি। ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা ভালো গল্প ও ভালো নির্মাণের পাশাপাশি এর প্রচার-প্রচারণা অন্যরকম ছিল। তাই তো দর্শক আকৃষ্ট হয়েছে সিনেমাটির প্রতি। আমার বিশ্বাস ‘অজ্ঞাতনামা’র প্রচার-প্রচারণা আরো করলে দর্শক অনেক দিন ধরে সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে পেতো। তাই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমার অনুরোধ একটি ভালো সিনেমা হলে সেটার প্রচারের জন্য ভিন্নধর্মী কিছু আইডিয়া করুন। দেখবেন দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখবেই। এ দেশের দর্শক হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চায়। শুধু প্রয়োজন ভালো গল্পের ভালো সিনেমা। আর আমাদের গল্প, আমাদের সমাজ, আমাদের ক্রাইসিস এবং আমাদের স্বপ্নের কথা বলবে যেসব সিনেমা সেটাই আমার কাছে মূলধারার সিনেমা।
এখন টিভি নাটকের কেমন অবস্থা মনে হয় আপনার কাছে?
ভালো। তবে আগের চেয়ে দর্শক কিছুটা কমেছে। এটার মূল কারণ আমাদের নাটকের বাজেট এবং প্রপারলি দর্শকদের নাটকটা দেখতে না দেয়ার পরিবেশ এর মধ্যে তো রয়েছেই ভিনদেশী চ্যানেলের আগ্রাসন। তবে এ কথা সত্যি যে, আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো প্রোডাকশন নির্মিত হচ্ছে। এই অঙ্গনকে ভালোবেসে এখনো অনেক তরুণ কাজ করছেন বলেই সম্ভব হচ্ছে। তবে টিভি নাটকের দর্শকদের ফিরিয়ে আনার জন্য টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক, বিজ্ঞাপন দাতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিল্পীদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। শুধু একজন আরেকজনকে দোষ দিলেই হবে না। ইন্ডাস্ট্রিটা আমাদের এবং এটাকে বাঁচাতে সম্মিলিতভাবে আমাদেরই কাজ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা