কেন কান উৎসবের সর্বোচ্চ জিতলো আনোরা
- আলমগীর কবির
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:০৫
৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপাম জিতে নিয়েছে আমেরিকান ছবি আনোরা। নিজের লেখা গল্পে এটা পরিচালনা করেছেন শন বেকার। কানের প্যালেস দি ফেস্টিভালে প্রিমিয়ারে চমক দেখিয়ে ছিল এটি। ২০১১ সালে ‘দ্য ট্রি অফ লাইফ’ সিনেমার জন্য কান উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতে নিয়ে ছিলেন টেরেন্স ম্যালিক। এরপর শন বেকারই প্রথম আমেরিকান পরিচালক যিনি এই পুরস্কার জিতলেন।
উৎসবের মূল প্রতিযোগিতার প্রথম ছবি হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছিল আনোরা। এ সময় প্রশংসার পাশাপাশি সিনেমাটি দর্শকদের কাছ থেকে পেয়েছিল ১০ মিনিট স্ট্যান্ডিং ওভেশন। পাঁচের মধ্যে আনোরার স্কুর ছিল ৩ দশমিক ৩।
নিউ ইয়র্কের নাইটক্লাবের একজন নৃত্যশিল্পী আনোরাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে সিনেমার গল্প। যে ইভান নামের এক রাশিয়ান ছেলের প্রেমে পড়েন। সব কিছু ঠিক আছে ভেবে এক সময় তারা বিয়েও করেন। তবে চিত্রনাট্যের মারপ্যাচে বিষয়টি যেনে ফেলে ইভানের বাবা-মা। আর সে সময় ডিভোর্সের জন্য একের পর এক চেষ্টা শুরু করেন তারা। আনোরা ও ইভানের রূপকথার মতো বিয়ে তখনই হুমকির মুখে পড়ে।
আধুনিককালের শ্রমজীবী মানুষের কঠিন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলে আনোরা। শ্রেণী শোষণ কিংবা বৈষম্যের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিককে কৌতুকপূর্ণ এক সূরে চিত্রায়িত করেছে এটি।
চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মার্কিন অভিনেত্রী মাইকি ম্যাডিসন। চরিত্রটির জন্য সমালোচকদের থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সিনেমাটিতে নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে রুশ অভিনেতা মার্ক অডিলেস্টিনকে। আনোরা মুক্তির তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গত নভেম্বরে ছবিটির স্বত্ব কিনে নিয়েছে আমরিকান প্রতিষ্ঠান নিয়ন। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে মুক্তি পাবে আনোরা।
গত ২৫ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া উৎসবের সমাপনী আয়োজনে স্বর্ণপাম জয়ী ছবির নাম ঘোষণা করেন মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের প্রধান আমেরিকান পরিচালক গ্রেটা গারউইগ। পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছিল এই আয়োজন। পুরস্কার জয়ের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় শন বেকার বলেন, ‘আজ রাতে কী কী হচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।’
এবারে আসরে নাম উজ্জ্বল করেছে ভারত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতেছে পায়েল কাপাডিয়ার ভারতীয় সিনেমা ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’। গেল তিন দশকের মধ্যে এটাই ভারতের প্রথম সিনেমা, যা কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান করে নিয়ে পুরস্কার জিতেছে। এতে অভিনয় করেছেন কানি কুশ্রুতি, দিব্যা প্রভা, ছায়া কদম, ঋধু হারুন।
২৩ মে প্রদর্শনীর পর থেকেই সমালোচকরা উচ্ছ্বসিত ছিলেন পায়েল কাপাডিয়ার সিনেমাটি নিয়ে। বিবিসি, ভ্যারাইটি ছবিটিকে ‘জাদুকরি’ বলে অভিহিত করেছে। শেষ পর্যন্ত উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার জিতল ড্রামা ঘরানার সিনেমাটি।
এর গল্প প্রভা ও অনু নামের দুই নার্সকে ঘিরে। ভারতের অন্য শহর থেকে কাজের সূত্রে মুম্বাই আসার পর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই বন্ধুত্বের গল্প নিয়েই এগিয়েছে সিনেমাটি। কানে পুরস্কার জয়ের পর ৩৮ বছর বয়সী নির্মাতা তার সিনেমার অভিনেত্রীদের ধন্যবাদ জানান। মজা করে বলেন, ‘আশা করি কান থেকে ভারতের পরের পুরস্কারটি জিততে ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হবে না।’
এবারের কান উৎসবটা দুর্দান্ত গেছে ভারতের জন্য। এর আগে গত ২৪ মে রাতে আঁ সার্তে রিগা বিভাগে ‘দ্য শেমলেস’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান অনসুয়া সেনগুপ্ত।
সেরা পরিচালক মিগুয়েল গোমেজ, পর্তুগাল : ছিলেন মূলত সিনেমা সমালোচক। ২০০০ সালে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘ক্রিসমাস ইনভেনটোরি’ দিয়ে নির্মাণে হাতেখড়ি। এরপর টানা কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য বানান, তার নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘দ্য ফেস ইউ ডিজার্ভ’ মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অন্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘আগস্ট’ ও ‘টাবু’। নিজের ষষ্ঠ সিনেমা ‘গ্র্যান্ড ট্যুর’-এর জন্য কানে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন গোমেজ। সিনেমার প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের বার্মা। প্রেমিকাকে ফেলে এক সরকারি চাকুরের এশিয়া সফরের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
সেরা অভিনেত্রী আদ্রিয়ানা পাজ, কার্লা সোফিয়া গাসকোন, সেলেনা গোমেজ ও জোয়ি সালদানা, ‘এমিলিয়া পেরেজ’, ফ্রান্স, মেক্সিকো : স্বর্ণপাম জয়ী ফরাসি নির্মাতা জ্যাক অদিয়াঁরের নতুন সিনেমাটি মিউজিক্যাল ক্রাইম কমেডি ঘরানার। ছবিটি মেক্সিকোর মাদক সম্রাটের, যিনি পরে নারীতে রূপান্তরিত হন। এই এমিলিয়া পেরেজের চরিত্রে অভিনয় করেন গাসকোন। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়া চারজনের মধ্যে কেবল গাসকোনই সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি প্রথম ট্রান্স নারী, যিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন। পুরস্কারটি গাসকোন সংগ্রামরত ট্রান্স জনগোষ্ঠীর সব মানুষকে উৎসর্গ করেন।
সেরা অভিনেতা জেসি প্লেমনস, ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র : চলচ্চিত্র উৎসবগুলোয় নির্মাতা ইয়োর্গোস লান্থিমোসের সিনেমার পুরস্কার যেন বাঁধা। এবার কানে তার নতুন সিনেমা ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’-এর অভিনেতা জেসি প্লেমনস পেলেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার।
৩৬ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেতা পরিচিতি পান ড্রামা সিরিজ ‘ফ্রাইডে নাইট লাইটস’ দিয়ে। এরপর তাকে ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এও দেখা যায়। ২০১৫ সালে ব্ল্যাক কমেডি সিরিজ ‘ফার্গো’ দিয়ে সমালোচকদের প্রশংসা পেতে শুরু করেন। একাধিক পুরস্কারে মনোনীত হন। ২০২১ সালের আলোচিত সিনেমা ‘দ্য পাওয়ার অব দ্য ডগ’-এর জন্য অস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সেবার পুরস্কার পাননি, এবার কান থেকে পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা