২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সব কিছু ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে - সামিনা বাশার

-


সামিনা বাশার। দেশীয় চলচ্চিত্রের নতুন অভিনেত্রী। ভারতের চণ্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্সে মাস্টার্স শেষ করে শোবিজে নাম লিখেয়েছিলেন। নিয়মিত মডেলিংয়ের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও দেখা যায় তাকে। এবারে ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘মোনা : জ্বিন-২’। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাকিবুল হাসান
‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে ছিলেন। এবার ঈদের সিনেমায় প্রধান চরিত্রে কাজ করেছেন। অনুভূতি কেমন?
- ভালো একজন অভিনেত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আসলে শোবিজে পা রাখা। ২০১৯ সাল থেকে শোবিজের বিভিন্ন শাখায় কাজ করছি। নাটকের বাইরে মডেলিং করেছি নিয়মিত। এসব করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বড় পর্দায় কাজ করা। নিজের অভিনয় প্রতিভাকে দর্শকদের সামনে জানান দেয়া। মোনা : জ্বিন-২’ সিনেমার মাধ্যমে আমি দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর একটি পথ পেয়েছি। এটি আমার মধ্যে অন্য রকম উত্তেজনা তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে- রোজার ঈদের মতো এত বড় উৎসবে আমার ছবি মুক্তি পেয়েছে, তাও আবার স্বপ্নের প্রযোজনা সংস্থা থেকে- সব কিছু ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

আপনি প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে কাজ করতে বাসা থেকে পালিয়েছিলেন। ঘটনা কি সত্য?
- গল্পটা আসলে আজিজ (জাজের কর্ণধার) ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলাম। যেহেতু ওনার কাছে বহু ছেলেমেয়ে কাজ করতে আসে, এটি তাদের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে উনি জাজের পেইজে আমার পুরো গল্পটা শেয়ার করেছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, উনি চান সবাই আমাকে দেখে শিখুক আমরা এখানে পড়াশোনাটাকে প্রাধান্য দিই। পড়াশোনা শেষ করে তারপর আসুক আমরা এটি চাই, বাসা থেকে পালিয়ে আসলে সেটি হবে না। অভিভাবকের অবশ্যই সম্মতি থাকতে হবে তার এ জায়গায় কাজ করার ব্যাপারে। পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, এসএসসিতে ‘এ’ প্লাস পেলে আমাকে জাজে কাজ করতে দেবে। তারা শুধু আমাকে বলার জন্য বলেছিল। পরবর্তীতে আমি রাগ হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ফেরানো হয়। এভাবে দু-তিন বার পালিয়ে গিয়েছিলাম শুধু জাজে কাজ করার জন্য। এরপর আমার বাবা-মা আমাকে ভারতের পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ তাদের মনে হতো আমি এখনো ছোট, কিছু বুঝব না। যখন ভার্সিটি শেষ করলাম, তখন বুঝলেন, না ঠিক আছে, এটি তার স্বপ্ন, বাধা দেয়া ঠিক হবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে কাজ হচ্ছে, এটিই বড় কথা।

নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন জাজের মাধ্যমে পূরণ হতে হবে- এমন চিন্তা কেন মাথায় এলো?
- জাজ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রযোজনা সংস্থা। সবাই চাইবে কিন্তু সেরা জায়গায় কাজ করতে। দ্বিতীয়ত বলব, আমি সবসময় তাদের হাউজটিকে নিয়ে গবেষণা করতাম- তারা কোন ধরনের ছবি বানাচ্ছে, কোন কোয়ালিটির, কাদেরকে নিয়ে বানাচ্ছে ইত্যাদি। এগুলোর খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমি দেখলাম তারা সবসময় নতুন মুখ নিয়ে কাজ করে। অন্যান্য প্রযোজনা সংস্থা টাকা ফেরত আসবে কি না এ ভয়ে নতুনদের নিতে চায় না। আর তারা নতুনদের দিয়ে সিনেমা কিন্তু হিট করে। তৃতীয় কারণ, তাদের কনটেন্ট। ‘জ্বিন-২’ ও কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প। হরর টাইপের গল্প কিন্তু আমাদের দেশে খুব কমই হয়েছে। আজিজ ভাই এটি চালু করেছেন। তারা যৌথ প্রযোজনায় কাজ করত, সেটিও আমার একটা ইচ্ছে ছিল- যেহেতু আমি ভারতে পড়াশোনা করেছি। দুই দেশ মিলে কাজ করলে ভালো হতো। দুঃখজনকভাবে আমি যখন দেশে ফেরত আসি তখন তারা এটি বন্ধ করে দেয়।

‘মোনা : জ্বিন-২’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই।
- আমার যেহেতু জাজে কাজ করার ইচ্ছে অনেক আগে থেকে, তাই আমি তাদের একজনের নাম্বার জোগাড় করে কল দিই। তিনিই আমাকে জানান, ছবিটির অডিশন হচ্ছে। আমি চাইলে অংশ নিতে পারি। নির্ধারিত তারিখে জাজের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হই। আমি ভেবেছিলাম আজিজ ভাই আমার অডিশনটা নেবেন। কিন্তু তার বড় মেয়ে মুহু আমার অডিশন নিয়েছিলেন। ওখানে আমাকে কিছু ব্যাসিক কথাবার্তা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আমার ব্যাকগ্রাউন্ডসহ অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে। অভিনয় দক্ষতা যাচাই করার জন্য একটি স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এক-দুই ঘণ্টার মতো একটি অডিশন ছিল। পরের দিন জানলাম, আমি ছবিটির জন্য নির্বাচিত হয়েছি।

এটি কত সালের ঘটনা?
- তিন বছর আগের। ২০২১ সালের দিকের।
তাহলে কি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ করার পর এর অডিশন দিয়েছিলেন?
- না, না। এর অডিশন দেয়ার পর আমি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ করেছিলাম।
টানা ১৭ দিন রাতে না ঘুমিয়ে ছবিটির শুটিং করেছিলেন। কষ্ট লাগেনি?
- শুটিং মানেই তো কষ্ট। এ ছবির শুটিং হয়েছে শীতে। কিন্তু পর্দায় দেখানো হবে গরমকাল। ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টানা ১৭ দিন কাজ করেছি জামালপুরে। এর মধ্যে পুকুরে লাফ দেয়ার দৃশ্যও রয়েছে। পুরো টিম অনেক কষ্ট করেছে। বনের মধ্যে শুটিং করার কারণে বুঝেনই তো কী পরিমাণ ঠাণ্ডা ছিল। সুতি কাপড় পরে শট দিয়েছি, দর্শকদের যাতে ঠিকঠাক উপহার দিতে পারি। একটি শট দেয়ার পরই আমাদেরকে চাদর বা অন্য গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হতো। আমার নিজের অ্যাজমার সমস্যা ছিল, এর মধ্যেও শুটিং করেছি।
অ্যাজমার কারণে শুটিং সেটে কোনো সমস্যায় পড়েননি?
- সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ সেটের সবাই খুবই হেল্পফুল ছিল। দেখা যেত একটু পর পরই গরম চা, পানি এসব এনে দিতো।

শুটিং সেটের ভয়ঙ্কর কোনো স্মৃতি আছে কি?
- আমাদের সহশিল্পী ওমরের গাড়ির একটি দৃশ্য ছিল। যেখানে সে গাড়ি ড্রাইভিং করছিল এবং জোরে জোরে ব্রেক করছিল। আমরা তো পেছনের সিটে নিশ্চিন্তে বসে শট দিচ্ছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম ও ড্রাইভিং পারত না! অথচ আমাদেরকে সে বলেছিল, সামনে স্পিড ব্রেকার ছিল তো তাই এভাবে ব্রেক করছিলাম। পরবর্তীতে সে বলে, আগের দিন দেখছিল কীভাবে গাড়িটা চালানো যায়। ভয়ে পরিচালককে জানায়নি সে গাড়ি চালাতে পারে না। এটি তো সিরিয়াস ঘটনা বললাম, একটি মজার ঘটনা বলি। একদিন শুটিং হচ্ছে। ভোর ৪টার মতো বাজে। বড়দা মিঠু ভাইয়াসহ আমাদের চারজনের শট। সবাই পুকুরে নামব। কনকনে শীত। থ্রি, টু অ্যাকশন বলার সাথে সাথে সবাই নামছে আমি আর নামি না। আমার এমনিতে ‘পানিভীতি’ আছে। তার উপরে ঠাণ্ডা, আবার অ্যাজমা। সব কিছু মিলিয়ে আমি না ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। আমাকে উপর থেকে বলা হচ্ছিল, জাম্প করো, জাম্প করো। কিন্তু আমি করিনি। পরিচালক অনেক চিল্লাচিল্লি করেন এ নিয়ে। যদিও দ্বিতীয়বারের টেকে আমি অনেকদূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম জাম্প করে।

ঈদে ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ওগুলো রেখে আপনার ছবি কেন দেখবে দর্শক?
- আমাদের ছবিটি ভিন্ন ধরনের ছবি। দর্শকরা সবসময় ভিন্ন কিছু দেখতে পছন্দ করে। আমাদের ছবিটি পরিবারের সাথে বসে উপভোগ করতে পারবেন। সবচেয়ে বেশি পছন্দ হবে শিশুদের। আর সবার সিনেমায় দেখা উচিত দর্শকদের। শাকিব খানের একজন ভক্ত হিসেবে তাকে ছাড়া তো ঈদ কল্পনাও করতে পারি না আমি। তার ছবির সাথে আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে এটি আমার জন্য সৌভাগ্যের।
নিজের ছবি ছাড়া ঈদে অন্য কার ছবি আগে দেখবেন?
- কারটা আগে দেখব জানি না। শাকিব ভাইয়া, বুবলি আপু, রাজ ভাইয়াসহ সবারই ছবি দেখার ইচ্ছে আছে এক এক করে। আমি বাংলা সিনেমার বিশাল বড় ফ্যান।

 


আরো সংবাদ



premium cement