আমার ৫০ ভাগ দর্শক বাংলাদেশের অঞ্জন দত্ত
- সাকিবুল হাসান
- ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:০৬
অঞ্জন দত্ত মানেই বাঙালির নস্ট্যালজিয়া। আবেগ। বাঙালির হৃদয়ে তাঁর আলাদা জায়গা চিরকাল রয়েছে। কলেজ জীবনে বেঞ্চ বাজিয়ে তাঁর কণ্ঠে বেলা বোস-এ ঠোঁট মেলায়নি, এমন খুব কমই দেখা যায়। কত প্রেম বিনিময় হয়েছে তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে। একের পর এক হৃদয়স্পর্শী গান, সাথে রঞ্জনার মতো এমন মায়াবি চরিত্রের সৃষ্টি, এমনটা বোধহয় একমাত্র অঞ্জন দত্তের পক্ষেই সম্ভব। এই কণ্ঠশিল্পী, নির্মাতা, অভিনেতা দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হয়েছিলেন ‘চালচিত্র এখন’ সিনেমা নিয়ে। ২৬ জানুয়ারি ছবিটির প্রদর্শনীর পর জাতীয় জাদুঘরে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিকদের।
সেখানেই জানিয়েছেন তার ৫০ ভাগ দর্শক বাংলাদেশের। তিনি বলেন, আমার ৫০ শতাংশ দর্শক বাংলাদেশের। সেটা নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী হতে পারেন, লন্ডন প্রবাসী হতে পারেন, সেটা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীও হতে পারেন। এক কথায় আমার দর্শক-ভক্তদের অর্ধেক বাংলাদেশের। সেই কারণেই কলকাতার মতো ঢাকা ঘিরেও আমার রয়েছে অন্যরকম অনুভূতি। তাই ঢাকার দর্শকদের নিয়েও আমার অন্যরকম ভালোলাগা, ভালোবাসা ও উচ্ছ্বাস কাজ করে।
অঞ্জন দত্তকে সিনেমায় যুক্ত করেছিলেন মৃণাল সেন। ‘মৃণাল সেন না থাকলে আমি সিনেমায় আসতে পারতাম না। তিনি আমার জন্য সিনেমার দরজাটা খুুলে দিয়েছিলেন। সিনেমা করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না, তিনি আমাকে প্রায় জোর করে সিনেমায় ঢুকিয়েছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে তাঁর সহকারী হলাম। অভিনেতা তো হলামই, তাঁর গল্প লিখলাম, চিত্রনাট্য, সহযোগী প্রযোজক ও বন্ধু হলাম।’ অঞ্জন দত্ত বললেন, মৃণাল সেন যখন জীবিত ছিলেন তখনই ওনাকে পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। তাতে সায় ছিল মৃণালের। তবে যেভাবে তিনি মৃণালকে কাছ থেকে দেখেছেন, সেটিই তুলে ধরতে বলেন নির্মাতা। পরে আর সেই অর্থে গুরুকে নিয়ে কাজ করা হয়নি অঞ্জনের। এই নিয়ে আফসোস ছিল অঞ্জন দত্তের। এরপর কেটে গেছে দুই যুগের বেশি সময়। গানের বাইরে সিনেমা নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি পেলেও দীর্ঘদিন ধরে মাথায় গেঁথে থাকা মৃণাল সেনের গল্পগুলো ঘুরছিল। একসময় নিজেই অর্থায়ন করে গুরুর শতবর্ষে নিয়ে আসেন সিনেমা ‘চালচিত্র এখন’। সেই সিনেমার গত বছর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় কলকাতায়। পুরস্কারও পেয়েছিল সিনেমাটি। ২৬ জানুয়ারি সিনেমাটি দেখানো হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সিনেমাটির বাংলাদেশ প্রিমিয়ারের পর পরিচালক অঞ্জন দত্ত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, ‘আমি মৃণাল সেনকে পুজো করিনি।’
অঞ্জন দত্ত বলেন, ‘আমি গান লিখেছি, সিনেমা বানিয়েছি, নাটক করেছি কিন্তু মৃণাল সেন কখনোই কাজে আসেনি অর্থাৎ আমার কাজে রিফ্লেক্ট হয়নি। কিন্তু তিনি এমন একজন মানুষ, তাঁর সাথে দীর্ঘদিন থেকে দূর থেকেও চিনেছি। কাউকে দূর থেকে না চিনলে কোনো কাজ করা উচিত নয়। ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আমি চিনি। তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ একটা সময় ধরে গল্প লিখছিলাম। এর মধ্যেই শতবর্ষ উদযাপন চলে এলো। আমার ভেতর থেকে মনে হলো, কিছু না করলে অন্যায় হবে। তখন শুরু হলো গল্পের কাজ। একসময় আমি গল্পটি পেয়ে গেলাম।’
সিনেমাটিতে উঠে এসেছে, অঞ্জন কাছ থেকে মৃণাল সেনকে কিভাবে দেখতেন, সেই ভাবনা। আরোপিত কোনো কিছু করতে চাননি। চ্যালেঞ্জিং এই সিনেমার নির্মাণ নিয়েও ভাবনায় পড়েন। দীর্ঘ সময় ধরে অভিনেতা খুঁজেছেন। পরে নিজের অর্থায়নেই গুরুকে ট্রিবিউট দেন।
কিন্তু মৃণাল সেন মানে বৃহৎ এক অধ্যায়। সেখানে কোনো কোনো গল্প তুলে ধরবেন, সেটা নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, ‘আমি গল্পটা একটা সময়ের মধ্যে আবদ্ধ রেখে দিতে চাইছি না। আমি অনেক কিছুই করেছি, যেটা নিজের মতো করে নির্মাণ না করলে আমাকে করতে দেয়া হতো না। আমি মৃণাল সেনকে পুজো করিনি এই সিনেমায়। একটা মানুষ হিসেবে দেখিয়েছি। তিনি কতটুকু মজার মানুষ, তাঁর জীবনযাপন কেমন ছিল, তাঁর অভ্যাস খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উঠিয়ে এনেছি। এসবই আমার কাছ থেকে দেখা।’
ঢাকায় সিনেমাটির প্রদর্শনী নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অঞ্জন দত্ত। কারণ, তিনি মনে করেন, তাঁর ৫০ ভাগ দর্শক বাংলাদেশের। তিনি এসব দর্শকের জন্য কাজ করেন। দর্শকরা তাঁর কাজ গ্রহণ করেন, এটাই তাঁর বড় পাওয়া। তিনি বলেন, ‘আমার এই ৭০ বছর বয়সে এসে খুবই আনন্দ হচ্ছে, আমি সততার সাথে কাজটি করেছি। অন্য কারো টাকা হলে হয়তো এভাবে সিনেমাটি নির্মাণ করতে পারতাম না।’ অঞ্জন দত্ত নিজেই ‘চালচিত্র এখন’ সিনেমায় মৃণাল সেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন শাওন চক্রবর্তী, সুপ্রভাত দাস, বিদীপ্তা চক্রবর্তী প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা