২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মশারি : ২২ মিনিটের গল্পে যে বার্তা আছে

-

নুহাশ হুমায়ূনের মশারি মূলত ভ্যাম্পায়ার ঘরানার স্বল্পদৈর্ঘ সিনেমা, যা বলা হয়েছে নতুন পদ্ধতি। পৌরাণিক রক্ত? চোষা দানবদের বসবাসের জন্য একটি অনন্য ল্যান্ডস্কেপ নতুন করে উদ্ভাবন করেছে স্বল্পদৈর্ঘটি। এতে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, পরিচালকের ভাগনী নাইরা অনোরা সাইফ, ময়েদ ভূঞাসহ অনেকে।
শরীরের লোমকূপ দাঁড়া করানোর জন্য এই হরর শর্টফিল্ম না; বরং অন্যান্য ভয়কে লাইমলাইটে আনা, সোশ্যাল প্যারাডক্সকে অ্যাড্রেস করাই যে এ কনটেন্টের মেইন ফোকাস, সেটি একটু গভীর মনোযোগে দেখলেই বুঝতে পারা যায়। যেখানেই মূলত ‘মশারি’র স্বকীয়তা। সার্থকতা। হরর জনরার গল্পবয়ানে নুহাশ হুমায়ূূূন প্রতিনিয়ত যেসব অভিনব পন্থা এক্সপ্লোর করছেন এবং যেভাবে তাকে নিয়ে প্রত্যাশার প্যারামিটার ক্রমেই হাই হচ্ছে, তাতে নিয়মিত বিস্ময় বাড়ছে। তিনি যেসব হরর গল্প বলছেন, তা হয়তো স্ট্রাকচারে খুব একটা অন্যরকম নয়। কিন্তু চেনা গল্পেই সেট ডিজাইন, লাইটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিনি এমন সব সূক্ষ্ম বিষয়-আশয় রাখছেন, সাদাসিধে গল্পেও তিনি সোশ্যাল সব কনটেক্সটকে এমন অর্গানিক্যালি পুশ করছেন, ব্রিলিয়ান্সের দিক মূলত হয়ে থাকছে সেসবই।
যেমনটা খুব ভালোভাবে হয়েছে মশারির ক্ষেত্রেও। এর মূল গল্পটা আহামরি, তেমন দাবি কেউই করবেন না। কিন্তু মাত্র ২২ মিনিটের এই গল্পে তিনি লেয়ারে লেয়ারে যেভাবে নানারকম সমসাময়িক বার্তাকে প্রাসঙ্গিকভাবে এনেছেন, মগশাস্ত্রের ধার প্রমাণিত হয়েছে সেখানেই। কিভাবে? খুলে বলা যাক। মশারি যারা দেখেছেন এবং যারা দেখবেন, প্রথম নজরেই বুঝতে পারার কথা, এ গল্পের প্রেমিসটা ভবিষ্যতের ডিস্টোপিয়ান বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় জলাবদ্ধতা, জাতীয় সংসদ ভগ্নপ্রায়-জরাজীর্ণ, বিস্তীর্ণ মাঠে যানবাহনের কঙ্কাল, দেয়ালে মশা থেকে বাঁচার বিজ্ঞাপনের পোস্টার, রাস্তার মাঝখানে মশারি খাটিয়ে তৃণমূল মানুষের অবস্থান। যেন শহরজুড়ে কারফিউ। আর অশরীরী কিছুর প্রতিক্ষা। এরই মধ্যে হ্যান্ডমাইকে এক ব্যক্তির কর্কশ-কণ্ঠ ঘোষণা- ‘সন্ধ্যা হয়ে আসছে, সবাই মশারির মধ্যে ঢোকেন।’ মশারির ভেতরে না ঢুকে উপায়ও নেই। যেহেতু চারপাশে প্রচুর জলাভূমি, সেহেতু মশার আধিক্যও প্রচুর। সন্ধ্যা হলেই যে মশারা নেমে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। রক্তের অভিযানে। তবে শুধু যে মশারাই আসে তা নয়, আসে অন্য প্রাণীও। কারা তারা? ক্রমেই প্রকাশিত হয় সে প্রাণীর আখ্যানও। গল্পের প্রোটাগনিস্ট দুই চরিত্র- আয়রা ও তার বড়বোনের এক্সপেরিয়েন্সে ক্রমেই উঠে আসে নানারকম সোশ্যাল মেটাফোরও। আয়রার বড়বোন যখন বলে- ‘ওরাও বুড়াদের মতো, ইয়াং মেয়েদের বেশি পছন্দ করে’।
তখন ডায়লগের ব্যাপ্তি শুধু মশার ওপরে থাকে না, সেটি রক্তলোভী পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকেও এক হাত দেখে নেয়। আবার আয়রার বলা- আই ক্যান নট ব্রেথ। এই ডায়লগ উঠিয়ে আনে জর্জ ফ্লয়েডকে, তৃণমূল মানুষদের সংগ্রামকে। তখন আচমকাই টনক নড়ে, এই যে আয়রা কিংবা তার বড়বোন, এই মেয়েরা যে দেশে, যে সমাজে বসবাস করে, সেখানে লিঙ্গবৈষম্যের মারপ্যাঁচে তাদের অবস্থান মোটেও সুবিধাজনক নয়। জর্জ ফ্লয়েড কিংবা নিপীড়িত মানুষের চেয়ে খুব উচ্চবর্গীয়?
আবার, মশারির এক অংশে যখন ঘোষণা হয়- যে পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের গরিব দেশ বলে ডাকত, থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি বলে ডাকত, যুগ যুগ ধরে আমাদের রক্ত চুষত, তারা আজ নেই; কিন্তু আমরা টিকে আছি। মশারির ভেতরে টিকে আছি।
বিশেষ এ লাইন পশ্চিমা মানসিকতায় খানিকটা টোকা দিয়ে মশার ন্যারেশনকেই তুলে দেয় অন্য উচ্চতায়। মশা কিংবা মশারি তখন সামান্য দু’টি গড়পড়তা শব্দে আটকে থাকে না, মেটাফোরিক্যাল টুল হিসেবেই তারা পিঞ্চ করতে থাকে বহু কিছুকে। মানচিত্রের গণ্ডি পেরিয়ে ইতিহাসেও টাইম-ট্রাভেল করে আসে খানিকটা।
মশারির ব্রিলিয়ান্স এখানেই। জাম্প স্কেয়ারে ভয় কিংবা শরীরের লোমকূপ দাঁড় করানোর জন্য যে এ শর্টফিল্ম নয়; বরং অন্যান্য ভয়কে লাইমলাইটে আনা, সোশ্যাল প্যারাডক্সকে অ্যাড্রেস করাই যে এ কনটেন্টের মেইন ফোকাস, সেটি একটু গভীর মনোযোগে দেখলেই বুঝতে পারা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

সকল