নায়করাজকে নিয়ে তারকাদের স্মৃতিচারণ
- সাকিবুল হাসান
- ২২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২, ২১:২৩
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি ‘নায়করাজ’ হিসেবে পরিচিত। চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি যতটা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন সেটি অনেকটা বিরল। ১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে প্রায় তিন দশক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দাপটের সাথে টিকে ছিলেন নায়ক রাজ্জাক। তার আসল নাম আবদুর রাজ্জাক। আবদুুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। প্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন হাল সময়ের তারকারা।
অপু বিশ্বাস : আমার সৌভাগ্য যে, শ্রদ্ধেয় এফ আই মানিক পরিচালিত নায়িকা হিসেবে আমার প্রথম সিনেমা ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমাতে আমি রাজ্জাক আঙ্কেলকে পেয়েছিলাম। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। পরবর্তীতে সম্র্রাটকে নিয়ে যখন তিনি ‘আমি বাঁচতে চাই’ সিনেমাটি নির্মাণ করলেন, আমি নায়িকা হলাম, তখনই আসলে তাকে খুব কাছে থেকে দেখা-অনুভব করা। আমার একটি নাম আছে ‘লক্ষ্মী’ এটি অনেকেই জানেন না। রাজ্জাক আঙ্কেল জানতেন। এ কারণেও তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। কারণ তার স্ত্রীর নামও লক্ষ্মী। আমার বিশ্বাস, তিনি বেঁচে থাকলে আমার একমাত্র সন্তান জয়কেও তিনি ভীষণ আদর করতেন। তার প্রয়াণ দিবসে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী কেয়া : আমার প্রথম সিনেমা মনতাজুর রহমান আকবর স্যার পরিচালিত ‘কঠিন বাস্তব’ সিনেমায় আমি তার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আরো বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ পাই। রাজ্জাক আঙ্কেল তার নির্মিত শেষ সিনেমা ‘আয়না কাহিনী’তেও আমাকে নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন। এটিও আমার পরম সৌভাগ্য। আমাকে তিনি এবং লক্ষ্মী আন্টি নিজের মেয়ের মতোই আদর করতেন। বাবা বলে ডাকতাম বিধায় তার চলে যাওয়ায় আমার নিজের ভেতর এখনো যে কষ্ট, হাহাকার তা বলে বোঝানোর মতো নয়। প্রতি মুহূর্তে তার শূন্যতা, তার আদর স্নেহ ভীষণ মিস করি। বাবাকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন- এই দোয়াই করি।
অপূর্ব : আমি সেভাবে আসলে সিনেমার শিল্পী নই। নাটকেই আমাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে সিনেমাতে অভিনয় করেছি। আমার প্রথম সিনেমা ছিল ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’। সিনেমাটি মুক্তির আগে আমি তার আশীর্বাদ নিতে তারই বাসায় ‘লক্ষ্মী কুঞ্জ’ গিয়েছিলাম। মনে আছে সেদিন তিনি সকাল ১০টায় তার সাথে নাশতা করতে বলেছিলেন। আমি ও জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া তার দেয়া সময়েই তার বাসায় উপস্থিত হয়েছিলাম। তিনি আমাদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললেন, আমাদের দু’জনকে দোয়া করে দিয়েছিলেন। তার সাথে কাটানো সেই সময়টা এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল। দোয়া করি আল্লাহ যেন রাজ্জাক আঙ্কেলকে বেহেশত নসিব করেন।
আজমেরী হক বাঁধন : পরম শ্রদ্ধা জানাই নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে। যে বিষয়টি আমি বিশেষত বলতে চাই তা হলো- রাজ্জাক আঙ্কেলের দুই সন্তান বাপ্পা ভাই ও সম্রাট দু’জনের সাথে আমার কাজ হয়েছে। রাজ্জাক আঙ্কেল এবং অবশ্যই লক্ষ্মী আন্টি তাদের ছেলেদেরকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন, এখানেই বাবা-মা হিসেবে তারা সার্থক। বাপ্পা ভাই, সম্র্রাট- দু’জনই এত ভদ্র যে, তাদের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয়। আর রাজ্জাক আঙ্কেলের নির্দেশনায় আমার সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। তবে ‘দায়ভার’ নাটকে তার নির্দেশনায় অভিনয় করতে পেরেছি, এটিও অনেক বড় প্রাপ্তি। একজন এত বড় নায়ক হয়েও এত ডাউন টু আর্থ ছিলেন তিনি, ভাবাই যায় না। দোয়া করি আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।
বিদ্যা সিনহা মিম : নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলকে আমি প্রথম দেখি ব্যাংককে একটি শোতে। সেখানেই তার সাথে অনেক গল্প করার সুযোগ হয়েছিল। পরবর্তীতে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল যে, আমি নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের নির্দেশনায় একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের নাটক ‘আমি যুদ্ধে যাব’তে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আঙ্কেলকে সহশিল্পী হিসেবে হয়তো অনেকেই পেয়েছেন। কিন্তু তার নির্দেশনায় কাজ করতে পারাটা আমার কাছে একটু বেশি রোমাঞ্চকর মনে হয়েছিল। মনে আছে- এটি রচনা করেছিলেন মান্নান হীরা। এতে সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন মামুনর রশীদ স্যারসহ আরো বেশ কয়েকজন। আঙ্কেল আমাকে খুব স্নেহ করতেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি যখন পাশে এসে দাঁড়াতেন, কথা বলতেন- মনেই হতো না তিনি নায়করাজ। কারণ তিনি তার নিজের মেয়ের মতো আদর ভালোবাসা দিয়ে কাজটা বুঝিয়ে দিতেন। আমার অভিনয় জীবনের বড় প্রাপ্তি তার নির্দেশনায় কাজ করতে পারা। দোয়া করি আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।
মেহজাবীন চৌধুরী : খুব সম্ভবত ২০১২ সালের কথা। সেই সময়টাতেই আমি নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের পরিচালনায় ‘চেনা হয়ে যায় অচেনা’ নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বিপরীতে ছিলেন সম্রাট ভাই। যত দূর মনে পড়ে উত্তরা, দিয়াবাড়ি ও রাজ্জাক আঙ্কেলের বাসাতেও শুটিং হয়েছিল। এত বড় মাপের একজন নায়ক, পরিচালকের নির্দেশনা খুব কাছে থেকে দেখা থেকে বলতে হয়, ভীষণ আন্তরিকতা নিয়ে তিনি কাজ করতেন। প্রতিটি দৃশ্য সমান যতœ নিয়ে নির্মাণ করতেন। তার মতো এমন ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করতে পারাটা ছিল আমার জন্য ভীষণ ভালো লাগার। তিনি আমাদের মাঝে নেই, তবুও তিনি আছেন তার কর্মে। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
প্রার্থনা ফারদিন দীঘি : আমি তো আসলে ছোটবেলায় নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের সাথে সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার মায়ের (চিত্রনায়িকা দোয়েল) প্রথম সিনেমা ‘চন্দ্রনাথ’-এর নায়ক ছিলেন রাজ্জাক আঙ্কেল। তো সে কারণে আসলে আমাকে ভীষণ আদর করতেন। তার সাথে আমি ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’, ‘এক টাকার বউ’, ‘পিরিতির আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’সহ আরো বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেছি। একজন নায়করাজ রাজ্জাকের অভিনয় দেখে অভিনয় শেখা সেই ছোটবেলায় আমার জন্য ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। তিনি আমাদের সিনেমার অফঙ্কার। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা