সংস্কৃতি ও রাজনীতি : ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকাদের প্রভাব
- সাকিবুল হাসান
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৫
২০২১ সালের ঘটনা। ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে তিক্ত সম্পর্ক চলছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোয় ভারতকে নিয়ে রসিকতা করা হয়। ভারতীয় শবদাহের সঙ্গে তুলনা করা হয় চীনের রকেট লঞ্চকে, এবং ক্যাপশনে বলা হয়, ‘চীনের আগুন জ্বালানো বনাম ভারতের আগুন জ্বালানো’। তবে, চীনা নেটিজেনদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর ছবিটি দ্রুত নামিয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনাটি চীনে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও অশ্রদ্ধার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
চীনে ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকাদের বিশেষত বলিউড তারকাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষকরে আমির খান এর ভীষণ খ্যাতি চীনের মানুষের মননে ভারত সম্পর্কে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে। চীনে আমির খানের জনপ্রিয়তার মূল উৎস ছিল তাঁর সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’। ২০১০ সালে এটি হংকং ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হওয়ার পর চীনা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়, যার ফলে আমির খান একে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর মাধ্যমে, আমির খান এক অনন্যভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, এবং তা চীনের জনগণের মনোভাবকে অনেকটা প্রভাবিত করেছিল। এটি ছিল ভারতের সাংস্কৃতিক সফট পাওয়ারের একটি অজানা দৃষ্টান্ত।
সফট পাওয়ার: সাংস্কৃতিক প্রভাবের এক অদৃশ্য শক্তি
সাধারণভাবে সফট পাওয়ার বলতে আমরা রাষ্ট্রের মাধ্যমে পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রভাব বুঝি। তবে, সেক্ষেত্রে এই প্রভাবের মধ্যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য বা কৌশল নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় তারকারা তাদের ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক কাজের মাধ্যমে এমন একটি শক্তি তৈরি করতে সক্ষম হন, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
আমির খান এক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। "থ্রি ইডিয়টস" সিনেমার মাধ্যমে চীনে তার নামযশ যে মাত্রায় বেড়েছিল, তা শুধু সিনেমার প্রভাবেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অঙ্গীকারেও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। সিনেমাটি চীনা জনগণের মধ্যে এক ধরনের সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন করেছিল, যা ভারতের প্রতি চীনের মনোভাবকেও প্রভাবিত করেছিল। এটি প্রমাণ করে যে, চলচ্চিত্রের মতো সাংস্কৃতিক প্রভাব কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
অন্যদিকে, বলিউডের একাধিক অভিনেতা ও নির্মাতারা তাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সংস্কৃতির কূটনৈতিক দূত হিসেবে কাজ করেছেন। শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান- এদের মতো তারকাদের প্রভাব শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। শাহরুখ খানের 'কাল হো না হো' জার্মানিতে মুক্তি পেয়ে এক বিশাল ভক্তমহল সৃষ্টি করেছিল, যা বলিউডের জন্য নতুন বাজারের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। এভাবে, বলিউড তারকারা শুধু বিনোদন শিল্পের অংশ নয়, বরং সাংস্কৃতিক নায়ক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিনোদন শিল্পের বৈশ্বিক প্রভাব: আমেরিকা থেকে ভারত পর্যন্ত
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনোদন শিল্পের প্রভাবকে অনুধাবন করতে হলে, সফট পাওয়ারের ধারণা আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, চীন—সব দেশই তাদের সাংস্কৃতিক পণ্যকে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। এভাবে, সফট পাওয়ার দেশের সাংস্কৃতিক অবস্থান ও বিশ্ব রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ১৯৫০ সালে ভারত যখন চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তখনও ভারতীয় চলচ্চিত্র বিদেশে একটি সাংস্কৃতিক শক্তি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিল। ভারতীয় সিনেমা চীন ও অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বার্তা পাঠানোর একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে।
সংস্কৃতি ও রাজনীতি: এক অভিন্ন পথ
রাষ্ট্র এবং সংস্কৃতি কখনো কখনো একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। চীন বা রাশিয়ার মতো দেশগুলো যখন তাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা পাঠায়, তখন সেগুলো শুধুমাত্র বিনোদনের খাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পও একইভাবে বিদেশে সাংস্কৃতিক এক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় অভিনেতা ও নির্মাতারা কেবল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনগণের মনোভাব পরিবর্তন করেন না, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এভাবে, সংস্কৃতি এবং কূটনীতি একে অপরের মধ্যে সম্পর্কিত, এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির সাথে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আজকের বিশ্বায়নের যুগে, ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকারা কেবল বিনোদন শিল্পের প্রতিনিধিই নন, তারা বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গীকারেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা