১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

আমরা সতর্কই ছিলাম, আগুন এত ভয়াবহ হবে চিন্তা করিনি

-

প্যাসিফিক প্যালিসেডস, লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি এলাকায়। যেখানে বিশাল পাহাড় আর সাগরের অপূর্ব মিলনে বসবাস করছিল মিয়া অ্যামার এবং তার পরিবার। সেখানে আগুনের হুমকি নতুন কোনো বিষয় ছিল না। তবে কখনো তারা ভাবেননি যে, একদিন এই আগুন তাদের শান্তি ধ্বংস করে দিয়ে যাবে। ৭ জানুয়ারি যখন অগ্নিকাণ্ড শুরু হলো, প্যাসিফিক প্যালিসেডসের বাসিন্দারা তখনো জানতেন না যে, তাদের প্রিয় শহর শিগগিরই একটি অবিশ্বাস্য বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ‘আমরা সতর্কই ছিলাম, তবে এই আগুনের ভয়াবহতা কল্পনাতেও আসেনি’ এমনই জানিয়েছেন মিয়া অ্যামার, যিনি দীর্ঘ দশক ধরে এখানেই পরিবার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন। তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি হলিউডের অভিজ্ঞ পাবলিকিস্ট। তিনি বলছিলেন, আগুন যখন বাড়ির একেবারে কাছে চলে আসে, তখন পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আতঙ্কে ভরা। তবে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে, মিয়া এবং তার পরিবারের জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে যখন তাদের সমস্ত কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ছিল শুধু একটি আগুন নয়, এটি ছিল এক হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা, যা তাদের জীবনকে চিরকাল বদলে দিয়েছে।
২০১৫ সালে এই এলাকায় বাড়ি কেনার পর মিয়া অ্যামার এক স্বপ্নের মতো জীবন কাটাচ্ছিলেন। সময়ের সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছিল এক শান্তি ও সুখের প্রতীক। কিন্তু সেই বাড়িতেই ছিল তার পরলোকগত স্বামী, চলচ্চিত্র বিপণন এক্সিকিউটিভ জেফ অ্যামের স্মৃতির এক অমূল্য সংগ্রহ। তার অমূল্য স্মৃতির বই, হাতে লেখা চিঠি এবং তার অস্থি- সবই একত্রে ছিল সেখানেই। মিয়া জানাচ্ছেন, তার সন্তানদের জন্য এসব স্মৃতি ছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। কিন্তু আজ, সব কিছুই ছাই হয়ে গেছে। বাড়ির কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। হৃদয়ে জমানো বেদনা আর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে মিয়া বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি ছিল, আমার স্বামীর স্মৃতির টুকরোগুলো হারানো। তার ভস্ম এবং বন্ধুদের দেয়া স্মৃতি বইগুলো ছিল আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। এগুলো আমার সন্তানদের জন্য ছিল। এখন সব কিছু চলে গেছে।’
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- এক বন্ধু তার প্রয়াত স্বামীর পুরোনো সোয়েটারটি ফেরত দিয়েছে, যা এখন তার ছেলে, জেফরি অ্যামার জুনিয়রের কাছে ফিরে এসেছে। জুনিয়র এখন সেটি পরেই আছেন, যেন তিনি এক অদ্ভুত উপায়ে তার বাবাকে অনুভব করছেন।
আগুনের দিন, মিয়া অ্যামার তার কাজের জন্য সানশাইন, স্যাকস, মরগান অ্যান্ড লাইলিস পিআর ফার্মে ছিলেন। আগুনের সতর্কতার সঙ্কেত পাওয়ার পর, তার মেয়ে অ্যানি বাড়িতে একা ছিল। মা হিসেবে মিয়া তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যানি, খুবই কষ্টকর পরিস্থিতিতে, কেবল একটি হুডি এবং পাসপোর্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। তারপরে তাকে রাস্তায় বিপুল পরিমাণ যানজট এবং অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়। একদিক দিয়ে তার বাড়ি নিরাপদ ছিল, তবে পরদিন আগুন তা পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়।
মিয়া বলছিলেন, ‘আমরা এমন অনেক আগুনের সতর্কতা পেয়েছি, কিন্তু এই আগুনের ভয়াবহতা ভাবিনি। যখন পরিস্থিতি খুব দ্রুত খারাপ হতে থাকে, তখন সব কিছুই যেন হারিয়ে যায়।’ কিন্তু এই ভয়াবহতার মধ্যেও তিনি দেখতে পেয়েছেন এক আশার আলো- এটি ছিল কমিউনিটির এক বিরাট শক্তি, যেখানে প্রতিবেশীরা একে অপরকে সাহায্য করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement