ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এই বছর উৎসবে অংশ নিচ্ছে ৭৫ দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে রয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। উৎসবটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ সেস্নাগানে এবং এর আয়োজন করেছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য জালাল আহমেদ। উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে বিশেষ সঙ্গীত পরিবেশন করেছে দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত দল ‘জলের গান’। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে চীনা নির্মাতা চিউ ঝ্যাংয়ের চলচ্চিত্র ‘মুন ম্যান’। এ বছর উৎসবের কান্ট্রি ফোকাস চীন, যেখানে দেশটির চলচ্চিত্র শিল্পের উদ্ভাবন ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা হবে।
উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে ৭৫ দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব চলচ্চিত্র বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত, যেমন- এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্ম, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেনস ফিল্ম সেকশন। এ বছর উৎসবের হাইলাইট হবে এশিয়ান সিনেমা প্রতিযোগিতা বিভাগ, যেখানে ১৭টি এশিয়ার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। একই সাথে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগে থাকছে রাশিয়ার খ্যাতনামা পরিচালক এলেক্সি ফেডরচেনকোর চলচ্চিত্র। তার চলচ্চিত্রে ইতিহাস, লোককাহিনী ও মানবিক গল্পের মিশেল রয়েছে, যা দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে আবেদন রাখবে।
বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে বাংলাদেশের ১০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে, যা দেশীয় চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক অবস্থা এবং সৃজনশীলতার পরিচায়ক। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বিভাগে উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি চীন থেকে ১৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে ৪৩ দেশের ৩৯টি চলচ্চিত্র দেখা যাবে, যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্য এবং সাম্প্রতিক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করবে।
চিলড্রেন ফিল্ম বিভাগে শিশুদের জন্য ১০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে, যেখানে শিশুতোষ গল্প ও শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। স্পিরিচুয়াল ফিল্মস বিভাগে ১৭টি ধর্মীয় ও মানবতাবাদী চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে, যা দর্শকদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাবে। উইমেনস ফিল্ম মেকারস সেশনে ২৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে, যেখানে নারীদের দ্বারা নির্মিত চলচ্চিত্রের সৃজনশীলতা এবং সামাজিক প্রভাব তুলে ধরা হবে।
উৎসবের বিশেষ প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে কিছু চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। এসব চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংগ্রামের মুহূর্তগুলোকে নতুন করে দর্শকদের সামনে আনা হবে।
উৎসবের অংশ হিসেবে আজ ১২ থেকে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ‘একাদশ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’। কনফারেন্সে প্রধান অতিথি থাকবেন সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক লেখক ঝ্যাং ইয়ুদি।
উৎসবের পরবর্তী দিনগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে মাস্টারক্লাস। ১৭-১৮ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্স মিলনায়তনে চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক ঝ্যাং ইয়ুদি, সার্বিয়ার অধ্যাপক ড্রেগেন মিলিনকোভিচ, নরওয়ের চলচ্চিত্র প্রযোজক অগি হোফার্ট এবং বাংলাদেশের চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। আগ্রহী ব্যক্তি নিবন্ধন করে এই মাস্টারক্লাসে অংশ নিতে পারবেন। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামবে ১৯ জানুয়ারি। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর চলচ্চিত্র ‘বলী’।
উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন, কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনসহ বেশ কয়েকটি ভেনুতে। উৎসবে দেশী-বিদেশী সিনেমা উপভোগের জন্য দর্শকদের জন্য কোনো টিকিট মূল্য ধার্য করা হয়নি।
উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন নতুন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা, যাতে সিনেমাপ্রেমীরা নতুন দৃষ্টিকোণ এবং সৃজনশীলতার সাথে পরিচিত হতে পারেন।’