অঞ্জনা : বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক অমর নাম
- সাকিবুল হাসান
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা অঞ্জনা। যিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। ৬৮ বছর বয়সে, ৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অঞ্জনা ছিলেন এক যুগান্তকারী প্রতিভা, যিনি তার জীবনে দু’টি বড় শিল্পে-নৃত্য ও অভিনয়ে-তার অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন।
শৈশব থেকেই নৃত্যশিল্পী : অঞ্জনার শৈশব ছিল নৃত্য নিয়ে তার অসীম ভালোবাসা ও আগ্রহের। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এক অনুষ্ঠানে তাকে ২০০ টাকা পুরস্কৃত করেন তৎকালীন গভর্নর, যা ছিল তার জীবনের প্রথম পুরস্কার। তার বাবা-মা তাকে নাচের প্রতি ভালোবাসা ও প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি শিখেন কত্থক, যার মধ্যে তিনি তার জীবনের প্রথম পেশাগত শিখন শুরু করেন। শৈশবে তার নৃত্য পরিবেশন ছিল বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ও উৎসবে, যা তাকে প্রথম থেকেই পরিচিত করে তোলে।
অভিনয়ের শুরু : অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল সেতু, যেখানে তিনি বাবুল চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেন। তবে, তার মূল পরিচিতি আসে একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত দস্যু বনহুর ছবিতে, যেখানে তিনি সোহেল রানার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিটি তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর একে একে অভিনয় করেন মাটির মায়া, অশিক্ষিত, সুখের সংসার, জিঞ্জির, আনারকলি, বিচারপতি, নাগিনা, পরিণীতাসহ আরো অনেক বাণিজ্যিক সফল সিনেমায়।
আন্তর্জাতিক কাজ : অঞ্জনার অভিনয়ের মঞ্চ ছিল শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। তিনি ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ। এই আন্তর্জাতিক পরিচিতি তাকে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও জনপ্রিয় করে তোলে।
অঞ্জনার পুরস্কার ও স্বীকৃতি : অঞ্জনার অভিনয়ের স্বীকৃতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন। তার নৃত্যশিল্পী হিসেবে পাওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যা কম নয়। বিশেষত পরিণীতা ও গাঙচিল সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাহ : অঞ্জনা তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সংসার জীবনে। প্রথমে তিনি মিউজিক কলেজের আনোয়ারকে বিয়ে করেছিলেন, তবে তাদের সম্পর্ক টেকেনি। এরপর তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে বিয়ে করেন। কিন্তু অঞ্জনার সংসার জীবন ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক, তার জীবনে সুখের দিন কম ছিল। আজিজুর রহমান বুলির মৃত্যুর পর অঞ্জনার জীবন আরো কঠিন হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ দিনগুলো : অঞ্জনা শেষ জীবন কাটিয়েছেন বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে। তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং প্রথমে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ৩ জানুয়ারি রাতে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
চলচ্চিত্রে অবদান : অঞ্জনার অবদান শুধু অভিনয়ে ছিল না; তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলচ্চিত্র শিল্পীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। তার দানশীল মন ও সহানুভূতির জন্য তিনি অনেকের প্রিয় হয়ে ওঠেন।
অঞ্জনা, একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে শুরু করেছিলেন এবং একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী হিসেবে শেষ করেছিলেন। তার কল্পনাশক্তি, পরিশ্রম এবং শিল্পের প্রতি অনুরাগ তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন অমর তারকায় পরিণত করেছে। তার মৃত্যু চলচ্চিত্রে এক অমূল্য ক্ষতি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা