২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘জেমস বন্ড’ চরিত্রের বাইরেও স্যারের আসল পরিচয়

‘জেমস বন্ড’ চরিত্রের বাইরেও স্যারের আসল পরিচয় -

স্যার রজার মুরের নাম শুনলেই চোখের সামনে চলে আসে সেই চিরচেনা জেমস বন্ড যে চরিত্রে অভিনয় করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজুড়ে কিংবদন্তি। সাতটি বন্ড সিনেমার মাধ্যমে তিনি ‘০০৭’ এর সেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বুদ্ধিমত্তা, মসৃণতা এবং সুরেলা সঙ্গীতের সাথে আধুনিক বন্ড চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু পর্দার আড়ালে, স্যার রজার মুর ছিলেন এক অত্যন্ত সাধারণ, মাটির কাছাকাছি মানুষ, যার জীবনে ছিল তার প্রিয় পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং অনেক বন্ধুর সাথে কাটানো কিছু অমূল্য মুহূর্ত।
এখন, স্যার রজারের অপ্রকাশিত হোম ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আমরা তার ব্যক্তিগত জীবন এবং সেই অজানা দিকগুলো দেখা যাবে। যা শুধু তার ভক্তদের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর জন্যই এক নতুন উপহার। আজ ২৫ ডিসেম্বর, বিবিসির নতুন ডকুমেন্টারিতে স্যারের নিজ হাতে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজগুলো প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এই ফুটেজগুলোতে স্যার রজারকে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কাটানো সময়, সেই সাথে তার সেলিব্রিটি বন্ধুদের, যেমন কির্ক ডগলাস, অলিভিয়া নিউটন-জন, এলটন জন এবং আরো অনেক তারকাদের সাথে সময় কাটাতে দেখা যাবে।
পর্দার বাইরের স্যার রজার ছিলেন একজন দয়া এবং স্নেহে পরিপূর্ণ বাবা। তার ছেলে জেফরি মুর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের বাড়িতে নানা সেলিব্রেটি আসত, কিন্তু স্যারের জন্য পরিবার ছিল প্রথম। সে কখনো তার পারিবারিক জীবনকে খোলামেলা রাখত না, বরং নিজের সন্তানদের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসত।’ এই ভিডিওগুলোর মাধ্যমে স্যার রজারের বাবার ভূমিকায় থাকা এবং পরিবারের সাথে কাটানো কিছু বিশেষ মুহূর্তগুলোর সন্ধান মিলবে।
এ ছাড়া স্যারের জীবনে অনেক বিখ্যাত বন্ধুও ছিলেন, যাদের সাথে তিনি সময় কাটিয়েছেন। যেমন ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা, কির্ক ডগলাস, জোয়ান কলিন্স এবং প্রখ্যাত পরিবেশবিদ ডেভিড অ্যাটেনবোরো। স্যারের ছেলে আরো বলেন, ‘ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। একসাথে থ্যাঙ্কসগিভিং কিংবা ইস্টার উদযাপন ছিল আমাদের পরিবারে নিয়মিত ঘটনা।’ স্যার রজারের জীবনে এই বিখ্যাত বন্ধুরা এমন এক সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিল, যা কোনো তারকার জীবনকেও সহজ ও স্নেহময় করে তুলেছিল। স্যার রজার মুর, যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটিদের মধ্যে একজন, তার জীবন ছিল সাধারণ এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতির পূর্ণ। স্যার রজারের ক্যামেরায় ধারণ করা এসব ফুটেজের মধ্যে কিছু অমূল্য মুহূর্ত ধরা পড়েছে। যেমন সেলিব্রিটি বন্ধু এলটন জনের সাথে টেনিস খেলা, কির্ক ডগলাসের সাথে আড্ডা এবং তার সন্তানদের সাথে ছুটির সময় কাটানো। এই ফুটেজগুলো শুধু স্যারের ভক্তদের জন্য নয় বরং তার পরিবারের জন্যও এক স্মরণীয় উপহার, যা তাদের পূর্বের সুখকর মুহূর্তগুলো পুনরায় জীবিত করবে।
স্যারের আসল পরিচয়
পর্দার বাইরের স্যারের জীবনও ছিল এক বিচিত্র এবং গঠনমূলক অভিজ্ঞতা। যদিও তার ‘জেমস বন্ড’ চরিত্রের কারণে তিনি বিশ্বের এক কোণে কিংবদন্তি, বাস্তবে স্যার রজার ছিলেন এক সাধারণ, মৃদু ও বিনয়ী মানুষ। তার জন্য সাফল্য কখনো একান্ত ব্যক্তিগত কিছু ছিল না এটা ছিল পরিবার ও মানুষের জন্য কিছু দেয়া, কিছু শেয়ার করার ব্যাপার। স্যার রজারের জীবনের এই আসল পরিচয়, যেখানে বন্ধুত্ব, পরিবার ও মানবিকতা ছিল প্রধান তা এখন ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ফুটে উঠবে। এটি প্রমাণ করবে যে, স্যার রজার মুর শুধু ‘লাইসেন্স টু কিল’ পেয়ে জেমস বন্ডের অনন্য চরিত্রে অভিনয় করেননি বরং তিনি ছিলেন ‘লাইসেন্স টু থ্রিল’ একজন মানুষ, যার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল তার পরিসরের বাইরের মানুষের জন্য আনন্দ এবং ভালোবাসার।
‘জেমস বন্ড’ চরিত্রের বাইরেও স্যার রজার মুরের জীবন ছিল এক প্রেরণাদায়ক গল্প। তার এই অপ্রকাশিত ভিডিও ফুটেজগুলো তার ভক্তদের কাছে এক অমূল্য উপহার, যা তাকে শুধু একজন অভিনেতা হিসেবে নয়, একজন মানবিক মানুষ হিসেবেও আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে। স্যার রজারের জীবনের এই অজানা দিকগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সেলিব্রিটি হওয়া কেবল পর্দায় নয়, জীবনযাপনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করাও।


আরো সংবাদ



premium cement