সত্যবাদিতা খেলা কঠিন : পিটার সার্সগার্ড
- সাকিবুল হাসান
- ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৪৯
পিটার সার্সগার্ড, ৫৩ বছর বয়সী অভিনেতা, যিনি তার গভীর, কর্তৃত্বপূর্ণ উপস্থিতির জন্য পরিচিত, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন এবং আধুনিক যুগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার চিন্তাভাবনা শেয়ার করেছেন। সার্সগার্ড তার ক্যারিয়ারে অনেক জটিল চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেগুলোতে মানুষের গোপন উদ্দেশ্য এবং প্রথম দৃষ্টিতে অগোচর রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘সত্যবাদিতা খেলা কঠিন’- উল্লেখ করে তিনি এমন চরিত্রগুলো এড়িয়ে চলেন, যারা খুব সরল ও সোজাসাপ্টা।
সার্সগার্ড শিগগিরই সেপ্টেম্বর ৫ সিনেমায় অভিনয় করবেন, যা ১৯৭২ সালের মিউনিখ গণহত্যার ঘটনা নিয়ে, যখন ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীরা ইসরাইলি অলিম্পিক দলের সদস্যদের জিম্মি করে এবং সে দিনের ঘটনার সরাসরি সম্প্রচার চালানো হয়। সার্সগার্ড এখানে রুন আর্লেজ নামে একজন এ বি সি নির্বাহী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি এ সংবাদ কাভারেজের নৈতিকতা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হন। তিনি বলেন, এ সিনেমায় তার চরিত্রটি মূলত এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে- যদি কোনো জিম্মিকে হত্যা করা হয় এবং তা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, তবে কি তা সম্প্রচার করা উচিত? এমনকি যখন কোনো বড় ধরনের ট্র্যাজেডি ঘটে এবং কিছুই দেখা যায় না, তখনো আমরা কেন এসব দেখার জন্য অপেক্ষা করি? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনি।
এ ছাড়া সার্সগার্ড আরো বলেন, তিনি নিয়মিত খবর দেখেন না, কারণ টিভিতে প্রচারিত সহিংসতা এবং ব্যক্তিগত দুঃখ-দুর্দশা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে যাই যখন কোনো ভবন বোমায় ধ্বংস হতে দেখি, অথবা মাশরুম মেঘের চিত্র দেখি যা টিভি নিউজ অ্যাঙ্করের পেছনে চলে আসে।’ এরকম দৃশ্য তাকে ওই ভবনের বাসিন্দাদের জীবন কল্পনা করতে বাধ্য করে, ‘কিভাবে তাদের শেষ মুহূর্তগুলো অনুভব হতে পারে’- তা একেবারে বিস্তারিতভাবে কল্পনা করেন তিনি।
তবে অনেক সময় সার্সগার্ড মনে করেন, কিছু বিষয় না দেখা ভালো। তিনি একবার তার সহকর্মী একজন অভিনেতার কথা উল্লেখ করেন, যিনি ড্যানিয়েল পিয়ারেল নামক আমেরিকান সাংবাদিকের শিচ্ছেদ হওয়া ভিডিওটি দেখেছিলেন সন্ত্রাসী দ্বারা, এবং তার পর সেই দিনই কাজে ফিরেছিলেন। সার্সগার্ড অবাক হয়েছিলেন যে, কতটা তাকে এই দৃশ্য প্রভাবিত করেছিল, আবার কতটা তাকে একে পরিহার করতে পারছিলেন।
সার্সগার্ড বলেন, কেন আমরা এমন ছবি দেখতে চাই? এটি আমাদের কোনো উপকারে আসে? আমরা যদি বিশ্বাস করতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, তাহলে কি দেখতে হবে?’ তার মতে, এখন মানুষ শুধু তখনই বিশ্বাস করবে, যখন তারা তা দেখবে। তিনি বিশেষভাবে জানাচ্ছেন যে, বর্তমানে আমাদের সমাজে ‘ইতিহাসকে অস্বীকার করা’ বা ‘ইতিহাসের গুরুত্ব না মানা’ বাড়ছে, যার ফলে আমরা হয়তো ভুলভাবে ইতিহাসের পুনঃরচনা করতে পারি।
পিটার সার্সগার্ড একসময় ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তবে বর্তমানে তিনি আর ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করেন না। তবে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনযাপনের অনেক বিশ্বাস ক্যাথলিক ধর্ম থেকে এসেছিল’- এমনকি আজও তিনি কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেন, যেমন গির্জায় ঢোকার সময় ক্রস চিহ্ন তোলা, বা যিশুর শরীরের মাংস গ্রহণের সময় এক মুহূর্তে নিজেকে উপলব্ধি করা। তার মতে, ক্যাথলিক ধর্ম তাকে নৈতিকতা শেখায় এবং মানুষদের কাছে তিনি মনে করেন, ‘কোনো খারাপ মানুষ নেই, কেবল এমন মানুষ আছে যারা খারাপ কাজ করে।’
একজন একমাত্র সন্তান হিসেবে তিনি নিজের শৈশবের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। সার্সগার্ড বলেন, তার পরিবার ছিল একধরনের যাযাবর জীবনযাপনকারী, যেখানে অনেক স্থানে একত্রিত হয়ে বসবাস করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ছিল ভীষণভাবে বিচ্ছিন্ন।’ তার বাবা ছিলেন মার্কিন বায়ুসেনায় একজন প্রকৌশলী, যিনি পরে আইবিএম-এ কাজ করেছেন। এসব কারণে তার শৈশব ছিল বেশ নড়বড়ে, তবে এ পরিস্থিতি তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, কারণ তিনি সব সময়ই সঠিক কাজ করার কথা ভাবতেন।
তবে সার্সগার্ড জানাচ্ছেন যে, শৈশবেই ফুটবল খেলা তার বেশ পছন্দ ছিল, কিন্তু একাধিক মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি খেলার উচ্চ স্তরে যেতে পারেননি। এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি অভিনয়ে আগ্রহী হন, যা তার জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। অভিনয় তাকে তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যা তার ছোটবেলায় কখনো প্রকাশের সুযোগ পায়নি।
পিটার সার্সগার্ড এবং তার স্ত্রী, অভিনেত্রী ও পরিচালক ম্যাগি গিলেনহাল, ২০০১ সালে এক নৈশভোজে পরিচিত হন। তারা ২০০৯ সালে বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তাদের দু’টি কন্যাসন্তান রয়েছে। সার্সগার্ড জানিয়েছেন, তিনি পরিবারের খেয়াল রাখার ক্ষেত্রে তার কাজের থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। ২০২১ সালে দ্য লস্ট ডটার সিনেমায় কাজ করার সময়, যখন গিলেনহাল প্রথমবার পরিচালনা করেন, তিনি তার পরিবারের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, এবং সেখানেই তিনি তার ‘প্রথম অগ্রাধিকার’ দেখতে পেয়েছেন।
সার্সগার্ডের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও বর্তমান সময়ের প্রসঙ্গেও মন্তব্য রয়েছে। তিনি ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয় নিয়ে তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং বর্তমানে তার পুনঃপ্রতিষ্ঠান নিয়ে তার উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা আমেরিকার অনুভূতি, এটা সত্যিই আমাদের প্রকৃত অবস্থা। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এখানে ভোট দেয়া ঐচ্ছিক এবং সেই কারণে অনেক মানুষের মতামত উপেক্ষিত থাকে।’
এ ছাড়া সার্সগার্ড ট্রাম্পের উত্থানের পেছনে মিডিয়ার ভূমিকাও স্বীকার করেন। তিনি মনে করেন, ‘যতটা ক্ষতিকর মিডিয়া, ততটাই লাভজনক; ট্রাম্প সবসময় এ বিষয়টির সহায়তায় শীর্ষে উঠেছে।’
এভাবেই সার্সগার্ড তার শৈশব থেকে শুরু করে তার অভ্যন্তরীণ চিন্তা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন, যা তার ভবিষ্যৎ কর্মজীবন এবং তার পরিবারের প্রতি তার ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতি ফুটিয়ে তোলে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা