২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয়ায় হলিউডে বিতর্কের মুখে মেলিসা ব্যারেরা

ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয়ায় হলিউডে বিতর্কের মুখে মেলিসা ব্যারেরা -

মেক্সিকান অভিনেত্রী মেলিসা ব্যারেরা সম্প্রতি ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে হলিউডে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সঙ্ঘাতের নির্মমতা নিয়ে কথা বলে তিনি যে শুধু কাজের সুযোগ হারিয়েছেন তা নয়, বরং তাকে একটি কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক মা পোস্ট করে মেলিসা ব্যারেরা ইসরাইলকে সমালোচনা করেন এবং গাজাকে ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ এবং ইসরাইলের পদক্ষেপকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নির্মূলকরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি পশ্চিমা গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব নিয়েও অভিযোগ করেন, যেখানে শুধু একপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। এই মন্তব্যের পর হলিউডের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্পাইগ্লাস, যেটি ‘স্ক্রিম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য দায়ী, তাকে সিনেমাটির পরবর্তী কিস্তি থেকে বাদ দিয়ে জানায়, ‘আমাদের কোনো অবস্থাতেই ঘৃণার ভাষা বা গণহত্যা সম্পর্কিত ভুল বক্তব্য সহ্য করা হবে না।’
এই ঘটনার পর ব্যারেরা তার ক্যারিয়ারে এক বড় ধরনের ধাক্কা অনুভব করেন। তার ভাষায়, ‘এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকারতম এবং কঠিন বছর। আমাকে সব কিছু পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়েছিল। কিছু কিছু সময় মনে হয়েছিল, আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে।’ অভিনেত্রী আরো জানান, ১০ মাসেরও বেশি সময় তিনি এমন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন যেখানে কোনো বড় কাজের সুযোগ তার আসেনি। যদিও কিছু ছোটখাটো কাজের প্রস্তাব আসছিল, তবে তার ক্যারিয়ারের প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। ‘আমি কিছু কাজ পেয়েছিলাম, কিন্তু বার্তা ছিল, ‘ও হয়তো কাজ পাচ্ছে না, তাই যেকোনো কাজ করতে রাজি হবে।’ তবে আমি কখনো কাজের জন্য কাজ করি না,’ বলেন ব্যারেরা।
তবে, ব্যারেরা তার এই কঠিন সময়ে হতাশ হননি। ২০২৪ সালে তিনি তার আগের কাজগুলোর প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। ‘অ্যাবিগেইল’ নামে একটি হরর কমেডি এবং ‘ইওর মনস্টার’ নামে একটি সঙ্গীতধর্মী সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ব্যারেরা জানান, এই সময়েই তিনি অনুভব করেন, ‘আমি কখনো এমন কিছু করতে চাইনি যা আমাকে ভিতর থেকে তৃপ্তি দেবে না। আমি অভিনয়ে নিজের অনেক কিছু দিয়ে দিই, তাই আমি যে কাজই করি, সেটি অবশ্যই আমার জন্য মূল্যবান হতে হবে।’
অভিনেত্রী আরো বলেন, ‘আমার কাছে কখনো কাজের চেয়ে অভিনয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি সেই চরিত্র নিতে চাই, যা আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং যা আমাকে পরিপূর্ণ করবে। আমি শুধু কাজ করার জন্য কাজ করি না।’
এই অভিজ্ঞতা থেকে মেলিসা ব্যারেরা শিক্ষা নিয়েছেন এবং তার ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবার সুযোগ পেয়েছেন। একদিকে যেমন তিনি তার কঠিন সময়ের মধ্যে নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি দৃঢ় থাকতে সক্ষম হয়েছেন, অন্যদিকে তিনি বুঝেছেন, শিল্পী হিসেবে তার যাত্রায় আত্মবিশ্বাস এবং মূল্যবোধের কতটা গুরুত্ব।
এ দিকে, তার এই সময়কালে তিনি ফিরে দেখেছেন, কেন তিনি কখনো তাড়াহুড়া করে কিছু করতে চান না। ‘যখন আমার কাছে কোনো ভালো স্ক্রিপ্টের অফার আসে না, তখন আমি কখনো কোনো ধরনের কাজ করতে রাজি হই না। আমি জানি, একে একে যদি সব কাজ করি, তবে আমি কখনোই নিজের সেরা কাজগুলো দিতে পারব না,’ যোগ করেন তিনি।
এই কঠিন সময়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের পুনর্মূল্যায়ন করেছেন এবং জানিয়ে দেন যে, শুধু জনপ্রিয়তা বা কাজের জন্য কিছু করাটা তার উদ্দেশ্য নয়। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, তিনি যে কাজ করেন তা তার জন্য গভীর মানে রাখে এবং যে চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন তা তার আধ্যাত্মিক উন্নতির অংশ।
মেলিসা ব্যারেরার এই কঠিন বছর কাটানোর পর তার ভেতর এক নতুন আত্মবিশ্বাস এবং অভিনয়ের প্রতি এক নতুন দায়বদ্ধতা এসেছে। তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন, যে কোনো ধরনের চাপ বা বিতর্ক তাকে তার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না এবং তিনি তার বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। -সূত্র আরব নিউজ


আরো সংবাদ



premium cement