হারুকি মুরাকামির নতুন উপন্যাসের পিছনের গল্প
- সাকিবুল হাসান
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৭
বিশ্বখ্যাত জাপানি সাহিত্যিক হারুকি মুরাকামি ১৯৮০ সালে লিখেছিলেন একটি বই। নাম ছিল ‘দ্য সিটি অ্যান্ড ইটস আনসারটেন ওয়ালস’। এটি ছিল তার একমাত্র গল্প যা তিনি কখনো বই আকারে পুনঃমুদ্রণ করতে দেননি। মুরাকামি নিজেই জানান, গল্পটির থিম তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবে লেখার সময় তার যথাযথ দক্ষতার অভাব ছিল। তাই তিনি মনে করেছিলেন, এটি ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন না। তবে মনের মধ্যে এই গল্পটিকে নতুন করে লেখার ইচ্ছা ছিল।
লেখক বলেন, ‘আমি গল্পটি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম না, কারণ তখন আমার লেখার ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা এই ধরনের থিমকে সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমি অপেক্ষা করছিলাম, যত দিন না আমি লেখক হিসেবে পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করি, তত দিন আমি এই গল্পটি পুনঃলিখব না।’ যদিও এক্ষেত্রে, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকল্পে হাত দিতে পারেননি। অন্য কাজের মধ্যে আটকে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে সময়টি চলে আসে, যখন তিনি বুঝতে পারেন যে, ৪০ বছর চলে গেছে এবং তার বয়সের কোটায় পৌঁছানোর পর যদি এটি করতে চান, তবে আর সময় নষ্ট করা উচিত নয়। ৭০-এর কোঠায় পৌঁছানোর পর, তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তার লেখক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সেই কারণে নতুন করে ‘দ্য সিটি অ্যান্ড ইটস আনসারটেন ওয়ালস’ উপন্যাসটি লিখবেন। মুরাকামি জানিয়েছেন, ‘এটা ছিল এক ধরনের দায়বদ্ধতা-একজন লেখক হিসেবে যদি আমার কাজটি শেষ না করি, তবে মনে হবে যে আমি আমার কাজটি পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন করিনি। আমি কৃতজ্ঞ যে এত মানুষ আমার বই পড়েন, এমনকি অনেক পাঠক যারা আমি কখনো ভাবিনি, তারা আমাকে চিনে এবং আমার লেখা পড়েন। এটা আমার জন্য একটি বিরাট সৌভাগ্য।’
লকডাউনে লেখা উপন্যাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি : এই উপন্যাসটি নতুন করে মুরাকামি লকডাউনের সময়ে লিখেছিলেন, যখন তিনি অধিকাংশ সময়ই বাড়ির মধ্যে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে লেখার সময় তাকে নির্জনতায় প্রয়োজনীয় সময় ও শান্তি মিলেছিল যা উপন্যাসটির সুর ও বিষয়বস্তুর ওপর প্রভাব ফেলেছে। মুরাকামি বলেন, ‘শহরের চার পাশে দেয়াল ঘিরে থাকার পরিস্থিতি, একদিকে যেমন একাকীত্বের অনুভূতি, অন্যদিকে আবার সহানুভূতির অনুভূতি-
এগুলো এই সময়ের লকডাউনের সাথে সম্পর্কিত।’ তিনি আরও জানান, এটি তার পুরোনো উপন্যাসের চেয়ে অনেক বেশি গভীরতা এবং সার্থকতা নিয়ে এগিয়ে গেছে।
পাঠকদের অজানা প্রশ্নের প্রতি আগ্রহ : মুরাকামি তার লেখায় পাঠকদের অজানা প্রশ্নে ফেলে দিতে পছন্দ করেন। তার মতে, একটি ভালো উপন্যাস সবসময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে, কিন্তু সেগুলোর সরল সমাধান বা নিঃশেষ উত্তর দেয় না। তিনি চান, পাঠকরা গল্পটি শেষ করার পর তাদের মনে কিছু চিন্তা রেখে যান এবং সেই চিন্তাগুলি তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ভাবনাশক্তি অনুযায়ী শেষ করতে পারেন। এই চিন্তাভাবনা এবং পাঠকদের নিজস্ব উপলব্ধি থেকে তৈরি হওয়া সমাপ্তির প্রতি তার আগ্রহই তার লেখনীকে বিশেষ করে তোলে।
নিজের চরিত্রের মধ্যে লেখকের প্রতিফলন : মুরাকামির উপন্যাসের প্রথম পুরুষ চরিত্রগুলো যেমন দ্য সিটি অ্যান্ড ইটস আনসারটেন ওয়ালস উপন্যাসের নায়ক, দ্য উইন্ড-আপ বার্ড ক্রনিকল-এর টোরু, বা কাফকা অন দ্য শোর-এর কাফকা-এই সবই মুরাকামির নিজের রূপ নয়, বরং সেই ‘আমি’ যা তিনি হতে পারতেন। লেখক জানান, ‘আমি এই চরিত্রগুলোর মধ্যে যে আমি হতে পারতাম, সেই অনুভূতির খোঁজ করি। এটা একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, কারণ বাস্তব জীবনে নিজেকে ছাড়া আর কোনো চরিত্রে জীবন যাপন করার সুযোগ খুব কমই আসে।’
জাপানি সাহিত্য এবং মুরাকামির পাঠকবৃন্দ : মুরাকামি তার বইগুলো জাপান ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার লেখায় দারুণ বৈশ্বিক সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার পাঠকরা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আছেন-লাওসে থাই পাঠক, ড্রেসডেনে আলবেনীয় পাঠক এবং টোকিওতে ইন্দোনেশীয় পাঠক আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা।’ তবে, এই আন্তর্জাতিক পরিচিতি তার লেখায় কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মুরাকামি বলেন, ‘এটি লেখার প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আনেনি। আমি শুধু কৃতজ্ঞ যে, এত মানুষ আমার বই পড়েন।’
নারী চরিত্র নিয়ে সমালোচনার প্রভাব : ২০১৭ সালে মিয়েকো কাওয়াকামি তার বইয়ের নারীদের সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলেন। মুরাকামি তার সমালোচনার বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত, তবে তিনি বলেন, ‘মিয়েকো একজন বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বুদ্ধিমান মহিলা, আমি জানি যে তার মন্তব্য সঠিক ছিল। তবে আমি মনে করতে পারছি না সে কী সমালোচনা করেছিল।’
এভাবে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে হারুকি মুরাকামি তার এক সময়ের অসম্পূর্ণ কাজ দ্য সিটি অ্যান্ড ইটস আনসারটেন ওয়ালস উপন্যাসটি নতুন করে লেখার মাধ্যমে তার সাহিত্যিক যাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। এটি তার পাঠকদের জন্য একটি বিশেষ উপহার, যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন একাকীত্ব এবং সহানুভূতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ, যা আমাদের বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।সূত্র : গার্ডিয়ান
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা