২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৬০ নিরাপত্তাকর্মীর চক্রব্যূহে সালমান

-

মাথার ওপর গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের খুনের হুমকি নিয়েও আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না বলিউডের ভাইজান। নিজের নিরাপত্তা সালমান এতটাই জোরদার করেছেন যে, এবার ৬০ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে বিগ বসের শুটিংয়ে ফ্লোরে কাজ করছেন তিনি। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, মুম্বাইয়ের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকী হত্যার আগে থেকে এবং গত কয়েক দিনেও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দেয়া খুনের হুমকিতে আছেন সালমান।
এ পরিস্থিতিতে বিগ বসের নির্মাতারাও সালমানের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সেই কারণে এই শোয়ের রিয়েলিটি শোয়ের শুটিং সেটে চলছে কড়া নজরদারি।
প্রত্যেকের ওই সেটে প্রবেশের আগে আইডি কার্ড দেখাতে হচ্ছে। নিয়ম করা হয়েছে শুটিং চলাকালীন কেউ বাইরে থেকে সেটে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিংবা ভেতর থেকেও কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। যাওয়া-আসা দুটোই হবে এপিসোডের শুটিং শেষে। সালমান যাতায়াতে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করছেন, এ ছাড়া ওই গাড়ির পেছনে পুলিশের একটি গাড়িও থাকছে, যেখানে অস্ত্রহাতে কনস্টেবল থাকছেন। বাড়ানো হয়েছে সালমানের বান্দ্রার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তাও।
যে কৃষ্ণসার হরিণ ‘শিকার’ নিয়ে সালমান খান গ্যাংস্টার লরেন্সের রোষানলে, সেই কাজটি নায়ক ‘করেননি’ বলে দাবি করেছেন তার বাবা চিত্রনাট্যকার সেলিম খান।
সেলিমের ভাষ্য, ‘সালমান পশুপাখি ভালোবাসে। নিজের পোষা কুকুর মারা যাওয়ার পর সে অঝোরে কেঁদেছে। আর ওই হরিণ হত্যার সময় সালমান ঘটনাস্থলে ছিলই না। এমনকি সে তখন কাছেই রাখা গাড়িতেও ছিল না। ‘আমার ছেলে কোনো দিন একটি আরশোলা পর্যন্ত মারেনি। ও কেন ক্ষমা চাইবে? এ বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার দরকার আছে।’
বাবা সিদ্দিকী হত্যার পর ‘প্রাণ টিকিয়ে রাখতে’ বলিউডি নায়ক সালমান খানকে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের কাছে ‘ক্ষমা চেয়ে নেয়ার’ পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হরনাথ সিংহ। ওই সাংসদের পরামর্শের বিষয়ে সেলিম খান এ কথা বলেন।
এদিকে ‘শত্রুতার অবসান ঘটাতে’ বলিউড তারকা সালমান খানের কাছে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছে বিষ্ণোইয়ের গ্যাং।
মুম্বাইয়ের ট্রাফিক পুলিশকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক বার্তায় ওই দলটি বলেছে, অভিনেতা যদি ওই অর্থ না দেন, তাহলে তার পরিণতি বাবা সিদ্দিকীর চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে। সালমান খান যদি বেঁচে থাকতে চান, তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাকে হুমকির বার্তায়।
এর মধ্যে গ্যাংয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মুম্বাই পুলিশ। সুখবীর বলবীর সিং (সুখা) নামের ওই ব্যক্তিকে হরিয়ানার পানিপথে গ্রেফতার করা হয়। তিনিও সালমান খানকে হত্যার একটি ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
পুলিশ বলছে, সালমানকে খুন করতে সুখা পাকিস্তানের এক ব্যক্তির সাথে পরিকল্পনা করে একে ৪৭, একে ৯২ এবং এম ১৬ রাইফেল আনিয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে।
বিষ্ণোই বছরের পর বছর ধরে সালমানকে কেবল হুমকি দিয়েই চুপ থাকেনি, কয়েক দফা তাকে হত্যার চেষ্টাও করেছে।
১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে সালমানের নাম জড়িয়েছিল। এর ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মধ্যে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই।
কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে। এরপর ২০১৮ সালে সালমানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই তার সহযোগী সম্পত নেহরাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সে সময় অস্ত্রের জটিলতায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ সারতে পারেনি খুনিরা।
ওই ঘটনার পর ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকি চিঠি আসে সালমন খানের হাতে। ওই চিঠিতে সালমানের বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল।
এরপর গত বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পুরোনো ‘শত্রু’ কানাডাভিত্তিক এক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের কাছ থেকে ইমেইলে খুনের ‘হুমকি’ আসে সালমানের কাছে।
গত বছরে শেষ নাগাদ সালমানকে হত্যায় বিষ্ণোইয়ের ছক বেরিয়ে আসে দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে। সে সময় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছিল, জেলবন্দী বিষ্ণোই যে ১০ জনকে ‘খতমের তালিকা’য় রেখেছে, তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সালমানের নাম।
চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাতে সালমানের বান্দ্রার ওই বাসভবনের বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল বাইকে আসা দুই ব্যক্তি। এই ঘটনায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৫ লাখ রুপির বিনিময়ে বলিউডের ভাইজানকে হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাং। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে মুম্বাইয়ের শহরতলি বান্দ্রায় দশেরার বাজি ফোটানোর সময় তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করা হলে সালমানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
সালমানের সাথে বাবা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিষ্ণোই গ্যাং হুমকি দেয়, বাবা সিদ্দিকীর বন্ধুরাও যেন তৈরি থাকে।
কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দী আছেন, তবে তার দল মুক্তিপণের জন্য ব্যবসায়ীদের ফোনকল দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা এর আগে দাবি করেছিলেন, সালমান খানের যেকোনো বন্ধুই তাদের চোখে ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত।
এনডিটিভি লিখেছে, বিষ্ণোই চক্রে ৭০০ জনের বেশি বন্দুকবাজ রয়েছে, যারা ভারতজুড়ে ছোট-বড় অপরাধী হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় বিষ্ণোইয়ের দলের যোগ পেয়েছে পুলিশ, যার মধ্যে র্যাপার সিধু মুসেওয়ালা এবং দিল্লির একটি জিম মালিকের হত্যাকাণ্ড আছে- যিনি আফগান বংশোদ্ভূত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement