ভারতীয় সিনেমায় অনেক প্রথমের সঙ্গে যুক্ত তিনি
- সাকিবুল হাসান
- ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ তারকা, কেউ অভিনেতা আর কেউ কিংবদন্তি। এ তিনকে একত্রে পাওয়া যায় অশোক কুমারের মধ্যে। প্রথাগত নায়কোচিত বৈশিষ্ট্য না থাকা সত্ত্বেও তিনি ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছেন। বলিউডের বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করছেন, তাকে দেখা গেছে তপন সিংহের প্যারালাল সিনেমায়। আবার একটা সময় গড়পড়তার তুলনায় নিম্নমানের সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। সব মিলিয়ে ছয় দশকের ক্যারিয়ারে সাড়ে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো- তিনি এমন এক অভিনেতা, যিনি প্রথার বাইরে গিয়ে চলতি ধারার বিপরীতে সিনেমায় অভিনয় করেছেন, পাশাপাশি করেছেন নির্মাণ। এমন অনেক সিনেমা তিনি এনেছেন, যার উপাদানগুলো ভারতের সিনেমায় তিনিই প্রথমবারের মতো এনেছেন। অশোক কুমারের অভিষেক হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। সিনেমার নাম ‘জীবন নাইয়া’ (জীবনের নৌকা)।
এরপর ‘জন্মভূমি’ ও তারপর ‘অচ্ছুত কন্যা’। জীবন নাইয়ায় যখন অভিনয় করেন, কোনো অভিজ্ঞতাই তার ছিল না। অনেকটা ভাগ্যের ফেরে পড়েই অভিনয়ে এসেছিলেন তিনি। অথচ অচ্ছুত কন্যায় অভিনয়ের পর তাকে নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়। একের পর এক চিঠি, টেলিগ্রাম আসতে থাকে বাড়িতে। এর মধ্যে একটি দারুণ তথ্য পাওয়া যায়। অশোক কুমারের মেয়ে জানিয়েছেন, টেলিগ্রামের একটিতে লেখা ছিল- অচ্ছুত কন্যার সাফল্যে অশোক কুমারকে অভিনন্দন। এর নিচে স্বাক্ষরের জায়গায় ছিল অ্যাডলফ হিটলারের নাম। অশোক কুমার সে কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। অশোক বলেছিলেন, ‘বড় মানুষের প্রশংসার তুলনায় নীতি আর মানবিকতা বড়।’ ১৯৪৩ সালে অশোক কুমার অভিনয় করেন জ্ঞান মুখার্জির ‘কিসমত’-এ। এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো প্রতিনায়ককে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যায়। এ ধারার সিনেমা ভারতে এটিই প্রথম। সিনেমাটি অশোক কুমারের প্রথম হিট সিনেমা। বলিউডেরও প্রথম বড় মাপের হিট সিনেমা। ভারতের সিনেমার ইতিহাসেও এটি একটি মাইলফলক। ১৯৪৯ সালে অশোক কুমার ভারতের প্রথম হরর ফিল্মে অভিনয় করেন। নাম ‘মহল’। কামাল আমরোহীর অভিষেক সিনেমা ছিল মহল। এতে মধুবালা অভিনয় করেন। প্লেব্যাকে অভিষেক হয় লতা মঙ্গেশকরের। সিনেমাটিতে প্রথমবারের মতো পুনর্জন্ম থিমটি ব্যবহার করা হয়। এরপর ভারতীয় সিনেমায় কতবার এ থিম এসেছে, তা হয়তো ইন্ডাস্ট্রি নিজেও জানে না। ‘মধুমতি’ থেকে ‘ওম শান্তি ওম’-এ গল্প ঘুরেফিরে আসে।
অ্যান্টি হিরো বা খল চরিত্রের কাছাকাছি চরিত্রে অশোক কুমার আবারো অভিনয় করেন ১৯৫০ সালে। ‘সঙ্গম’ চার মাস টানা চলেছিল হাউজফুল। অশোক কন্যা ভারতী জাফরি বলেন, ‘এরপর পুলিশ কমিশনার এসে বাবাকে বলেন যে মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সিনেমাটি নিষিদ্ধ করতে চান। কেননা, এ সিনেমার গল্পে মূল চরিত্র তার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে খারাপ কাজে জড়ায়। এর কারণে অনেক তরুণ বিপথে যাচ্ছে। বাবা বলেন যে, সিনেমার শেষে ছেলেটি শাস্তি পায়। কিন্তু পুলিশ কমিশনার জানান, তরুণদের মধ্যে বিষয়টি কাজ করছে না। তারা অশোক কুমারকে অনুসরণ করতে চাইছে, তা তিনি ভালো-মন্দ যাই করেন না কেন।’ প্রায় ১০ বছর পর তিনি অভিনয় করেন কোর্টরুম ড্রামা কানুনে। সিনেমাটি নির্মাণ হয়েছিল ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বিষয়ে। সিনেমায় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, রাষ্ট্র আদৌ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে নির্ভর করে কাউকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারে কিনা।
ভারতের সিনেমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য গান, কিন্তু এ সিনেমায় কোনো গান ছিল না। ষাট, সত্তরের দশকে অশোক কুমার বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং এগুলো ছিল বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর। ১৯৬৭ সালে তিনি অভিনয় করেন বাঙালি পরিচালক তপন সিংহের ‘হাটে বাজারে’ সিনেমায়। বনফুলের উপন্যাস থেকে নির্মাণ হয়েছে সিনেমাটি। অশোক কুমার সম্পর্কে আত্মজীবনীতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তপন সিংহ। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল না তার। হতে চেয়েছিলেন পরিচালক। এরপর হয়ে যান ল্যাব টেকিনিশিয়ান। গানও গাইতেন তিনি। আবার করতেন হোমিওপ্যাথের চর্চা। ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়েকে গ্যাংগ্রিন থেকে বাঁচিয়েছিলেন। ছবি আঁকতেন অশোক কুমার। ভারতী জানিয়েছেন, তার ছবি দেখে মকবুল ফিদা হুসেনও প্রশংসা করেছিলেন। বিরল প্রতিভাময় ছিলেন তিনি। আজো তাই সিনেমার অশোক কুমারকে নিয়ে কথা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা