২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আন্দোলনে জামায়াত ছিল না এই কথাটা কে বলেছে কবে : ফারুকী

আন্দোলনে জামায়াত ছিল না এই কথাটা কে বলেছে কবে : ফারুকী -

ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে সরব ছিলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শুরু থেকেই ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে নিয়মিত সামাজিকমাধ্যমে কথা বলেছেন এই নির্মাতা। হাসিনা সরকার পতনের পরেও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে সরব ফারুকী।
বর্তমানে ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরে সম্পৃক্ততা নিয়ে হচ্ছে বিভিন্ন কথা। যা নিয়েও নিজের পর্যবেক্ষণের কথা বললেন ফারুকী।
ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রকাশ্যে আসছে। আন্দোলনে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে দলটির নেতাকর্মীদের কেমন ভূমিকা ছিল সেসব নিয়ে কথা হচ্ছে। যা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে নতুন করে হচ্ছে আলোচনা ও সমালোচনা। সেই আলোচনায় যোগ দিয়েছেন ফারুকী।
এক ফেসবুক পোস্টে এই নির্মাতা লেখেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জামায়াত ছিল না এই কথাটা কে বলেছে কবে? বাংলাদেশের সবাই জানে এই আন্দোলনের প্রথম থেকে বিএনপি, জামায়াত, বাম দলসহ দল-মত-নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ ছিল। সবাই একটি জিনিসই চেয়েছে, শেখ হাসিনার পতন। আরেকটু পরিষ্কার করে বলি, শুধু এবারই প্রথম চেয়েছে তা নয়।
যোগ করে ফারুকী লেখেন, যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর আন্দোলন হয়েছে, তখনো প্রত্যেকে ওয়াটার টেস্ট করে দেখেছে, এটা কি সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে নেওয়া সম্ভব কিনা। জিও পলিটিক্যাল বাস্তবতা এবং সেনাবাহিনীর বাস্তবতায় সেটা সম্ভব ছিল না বুঝতে পেরে আবার প্রত্যেকে দমেও গেছে।
ফারুকীর ভাষায়, নুরুল হক নুরুদের নেতৃত্বে কোটা আন্দোলনে একই জিনিস টেস্ট করে দেখেছে বাংলাদেশ। যখন দেখল এটা সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে সফল হবে না, তখন সবাই আবার চেপেও গেছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে এই নির্মাতা লেখেন, ‘আওয়ামী লীগের উচিত হবে ভাবা, কেন সবাই তাদের পতন চেয়েছে। ক্লিয়ার?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই সামাজিকমাধ্যমে ছিলেন সরব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে নিজের মনোভাব জানিয়েছেন নন্দিত এই নির্মাতা। শেখ হাসিনার পতনের একদিন আগে ৪ আগস্ট সকালে দেওয়া পোস্টে ফারকী লিখেছিন, ‘আজ জুলাই ৩৫। স্বাধীনতা থেকে অল্প একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমরা। জোর কদম আগে বাড়ি চলো, এক সাথে।’ সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে উল্লেখ করে ফারুকী লিখেছেন, ‘তারপর থাকবে রাষ্ট্র সংস্কারের লম্বা কাজ, প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লম্বা কাজ, যাতে আর কোনো দিন আমাদের এরকম বন্দিদশায় পড়তে না হয়। কেউ কেউ বলছেন, এই সংস্কার করবে কারা? আপনি করবেন। আমরা, আপনারা, সবাই করব।’
তরুণদের প্রতি নিজের আস্থার কথা জানিয়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘খুলে বলি, সবাই জানে আমাদের সিস্টেমের সমস্যাগুলো কোথায়, ওভারহোলিং কোথায় কোথায় দরকার। এই কাজে দেশের ভেতর সিনিয়ররা তো আছেনই। তরুণদের কথাও আপনাদের একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। ওরা নতুন বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে বড় হচ্ছে। এতবড় আন্দোলনের পর ওদের সক্ষমতা নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার মিনিমাম ডাউট থাকার কথা না। ওদিকে হ্যাশট্যাশ রিজার্ভ ব্রেইনড্রেইনও দেখছি। দেশের বাইরে পড়াশোনা করা একটা প্রজন্মও এই কাজে হাত লাগাতে চায়। অনেক তো হলো নৈরাজ্য। এবার সময় নতুনভাবে দেশটা সাজানোর। একটি মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।’
‘সেনাবাহিনী, সরকার এবং আন্দোলনরত ভাই-বোনদের উদ্দেশে কয়টা কথা’ শিরোনামের আরেকটি দীর্ঘ পোস্ট দেন ফারুকী। সেখানে সবার উদ্দেশে নিজের চাওয়া জানান। ‘ইটস বেটার টু একসেপ্ট রিয়ালিটি’ লিখে সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘আপনাদের রাজনীতির এক ভয়াবহ পরাজয় ঘটেছে। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী রাজনীতি আর আজকের আওয়ামী রাজনীতি দুটোর যে বিপরীত অবস্থান’ এটা আগামী দিনের ইতিহাসের ছাত্ররা বিস্ময় নিয়ে পাঠ করবে। বাংলার মানুষ আজ ফ্যাসিজম থেকে মুক্তি চায়।
বাংলার মানুষ স্বাধীনতা চায়। এই সত্য মেনে নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের রাজনীতির বাকি ড্যামেজ হয়তো কিছুটা হলেও কন্ট্রোল করা যাবে। আর তা না করে মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করলে এক নিদারুণ ক্ষতি হবে। বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানি কাউন্টার পার্ট এই রকম মানুষ মেরে টিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ইতিহাসে তাদের অবস্থান আজ কোথায় সেটা নিশ্চয়ই আমার বলে দিতে হবে না।’ দীর্ঘ পোস্টের শেষে আন্দোলনরত ভাইবোনদের উদ্দেশে ফারুকী লিখেছেন, ‘আজকে আন্দোলনরত কেউ কেউ শাহবাগে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়ার সময় তোমরা একদল যেমন মানবঢাল হয়ে পুলিশকে রক্ষা করেছিলে, এটাই হোক আগামীর বাংলাদেশ। আমরা জানি ক্ষোভের এক লক্ষ কারণ আছে। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ রকম ট্রানজিশনের সময় ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
বিপক্ষের কাউকে হেনস্তা বা হামলার মতো ঘটনা ঘটলে আখেরে আমাদের প্রগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে। ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বললে আমরা আগাতে পারব কি? খেয়াল রাখতে হবে, অতি উৎসাহী কেউ ঢুকে যেন এসব না ঘটাতে পারে। অথবা কেউ স্যাবোটাজ করছে কিনা, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement