আপিল বিভাগের রায়ে যারা নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন, যারা পাননি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৪১
বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বরিশাল-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) তাদের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেবার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে আপিল বিভাগ।
তবে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল, ময়মনসিংহ-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ এবং গাজীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।
অর্থাৎ তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
এছাড়া ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করলেও শুনানির জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় নিয়েছেন এ কে আজাদের আইনজীবী, ফলে শামীম হকের প্রার্থিতাও বহাল থাকছে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকলেও বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বির প্রার্থিতার বিষয়টি আপিল বিভাগের আদেশের অপেক্ষায় ছিল।
এখন পর্যন্ত আদালত থেকে ৭৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৭০ জনে।
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে আটকে গেলেন শাম্মী আহমেদ
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ফলে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করে দেন।
ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ শাম্মী আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও শাম্মী আহমেদ তার মনোনয়নপত্রে তথ্য গোপন করেছেন।
প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে শাম্মী আহমেদের রিট দায়ের করলেও তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে ‘নো অর্ডার’ পান তিনি। ফলে তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবারও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন তিনি। কিন্তু আজ শুনানির পর তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
পরে শাম্মী আহমেদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানান, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য শাম্মী আহম্মেদ গত ২৭ নভেম্বর অর্থাৎ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তিন দিন আগে চিঠি দেন।
অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ সেটি হাতে পায় ৮ ডিসেম্বর। দেশটি শাম্মী আহমেদের নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন গ্রহণ করে ২২ ডিসেম্বর।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানান,‘আদালতের বক্তব্য হল মনোনয়ন দাখিলের আগে অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে ওই চিঠিটা পৌঁছানো দরকার ছিল। আইনে বলা আছে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে সংসদ সদস্য হতে বা থাকতে পারবেন না। এটা নির্বাচনের আগে তিনি নিষ্পত্তি করতে পারলেই হবে। কিন্তু আদালতের কথা এটি মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই করার কথা।’
নির্বাচন থেকে ছিটকে গেলেন সাদিক আব্দুল্লাহ
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিলই থাকবে বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে সাদিক আব্দুল্লাহর করা আবেদন খারিজ করে দেন।
শুরুতে তিনি বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন না দিলে তিনি আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা সেই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
জাহিদ ফারুক নির্বাচন কমিশনে সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন।
শুনানি শেষে সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন সাদিক আবদুল্লাহ।
রিটের শুনানি নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধতা পায়।
পরদিন হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আসনটির আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এর ফলে সাদিক আব্দুল্লাহর নির্বাচন আটকে যায়।
পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন বরিশালের সাবেক মেয়র। যেটি শুনানি শেষে আজ তার আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বেঞ্চ।
এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বহাল
যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে বলে তার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা এনামুল হক বাবুলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করলেও তার বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকের ২১ কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ এনে আপিল করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল।
একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায় তার মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেন।
আপিলের শুনানি শেষে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে এনামুল হক হাইকোর্টে রিট করেন। ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।
এরপর তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
পরদিন চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফেরত দেন। পরে নির্বাচন কমিশন ওই আদেশ প্রত্যাহারে আবেদন করেন।
তবে আপিল বিভাগ সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বহাল রাখেন। অর্থাৎ তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
তার আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘এনামুল হকের কাছে জনতা ব্যাংক ২১ কোটি টাকা পেতো। মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ের আগেই ওই মোট টাকার পাঁচ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট দেয়া হয়। একে ব্যাংকের আইনজীবীরা জানান তাদের কোনো আপত্তি নাই। তবে বিরোধীদের দাবি এনামুল হক সময়মতো পরিশোধ করেননি।’
নির্বাচনে বাধা নেই আলম আহমেদের
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ওই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
তার আইনজীবী মাহ মঞ্জুরুল হক জানান, এর ফলে আলম আহমেদের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আর কোনো বাধা রইল না।
ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তিনি মনোনয়ন পাননি।
কারণ তার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ঋণ খেলাপের অভিযোগ ছিল।
এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে তিনি আপিল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। রিটটি সরাসরি খারিজ হয়ে যায়।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আলম আহমেদ।
এরপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর ফলে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খোলে।
কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর আলম আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেন।
পরে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে আপিল বিভাগ সিমিন হোসেনের আবেদন খারিজ করে দেন।
আলম আহমেদের আইনজীবী হক বলেন, ‘আলম আহমেদ মনোনয়নের আগে দুটি ব্যাংকের ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করেছেন, সেটা বিবেচনা করে আদালত আদেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে নির্বাচন সন্নিকটে, এই অবস্থায় কারো প্রার্থিতা বাতিল করা যাবে না।’
শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলের শুনানি ভোটের পর
ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানি হবে নির্বাচনের পর।
ফলে শামীম হকের প্রার্থিতা বহাল থাকছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় নৌকার প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ অভিযোগ আনেন, শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক।
এই কারণ দেখিয়ে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করলে সেই রিট আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।
পরে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ওই দিন চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন।
পরে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এ কে আজাদ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। যে আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দোশরা জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফলে আদালতের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত এই আসনের দুই প্রার্থীই ভোটের মাঠে থাকছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ।
ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা ফেরত দিলেও সেখানকার দুই ভোটার রিট পিটিশন ফাইল করে জানান যে তিনি পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক।
প্রার্থিতা ফেরত পেতে রিট আবেদন করলেও মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের রিট খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
পরে আব্দুল ওয়াহেদ এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন।
এদিকে ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসিবুর রহমান মানিকের প্রার্থিতা বৈধ করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ এর ফলে নির্বাচন করতে পারবেন না হাসিবুর রহমান মানিক।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সমির দত্ত চাকমার প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা