২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে নিয়োগ পেলেন যারা

(ওপরে বাঁ থেকে) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মুসলিম চৌধুরী, (নিচে বাঁ থেকে) সোহরাব হোসাইন, মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।

শনিবার এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে।

তাদের এই কাজে সার্বিক সহায়তা করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এর আগেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে এবারই প্রথম আইনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি কাজ করতে যাচ্ছে।

‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ গত মাসেই পাস হয়েছে বাংলাদেশের সংসদে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন গঠনের নতুন আইন অনুযায়ী, এই অনুসন্ধান কমিটির প্রধান দুজন সদস্য হবেন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি, যাদেরকে প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন দেবেন।

এছাড়া সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসি এবং মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদাধিকার বলে থাকবেন। আর বাকি দুজন সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতির মনোনীত। যাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ হবেন।

শনিবার ঘোষিত অনুসন্ধান কমিটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন সদস্য হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এই অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারের প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে অনুসন্ধান কমিটি। তাদের মধ্য থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশের সর্বশেষ একাধিক নির্বাচন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। ফলে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা হবে অনুসন্ধান কমিটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

কারা নিয়োগ পেলেন অনুসন্ধান কমিটিতে?

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বাংলাদেশের আপিল বিভাগে কর্মরত। তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্ম নেয়া ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসএস (সম্মান) এবং এমএসএস (অর্থনীতি) করে পরে আইনে এলএলবি করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসাবে পেশাজীবন শুরু করেন। তিনি জেলা আদালত, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন।

২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সাল থেকে বিচারপতি হিসাবে কাজ শুরু করেন।

তার আগে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে যোগ দেন। সেই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত। তিনি ২০২০ সালের ৩০ মে এ পদে নিয়োগ পান। এর দুই বছর আগে থেকে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তিনি ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আইন কমিশনে যোগ দেন।

বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১৯৯১ সাল থেকে পূর্ব তিমুরে এবং ২০০৬-২০১১ সাল পর্যন্ত সুদানে প্রেষণে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১২ সালে তিনি প্রধান বিচারপতির বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৪-২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত থাকার সময় ২০১৮ সালের ৩০ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী
তিনি বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। পদাধিকার বলে তিনি অনুসন্ধান কমিটিতে আছেন।

মুসলিম চৌধুরী ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অডিট নিরীক্ষা ও হিসাবের একজন কর্মকর্তা হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। পরে তিনি কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স ও অর্থ বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার পর যুক্তরাজ্য থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন।

এর আগেও রাষ্ট্রপতির ঘোষিত নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটিতে এই পদের তৎকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন।

মো: সোহরাব হোসাইন
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান তিনি। তিনিও পদাধিকার বলে এই কমিটির সদস্য হয়েছেন।

২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পিএসসির চেয়ারম্যান তিনি।

এই পদের দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণের পর তাকে সরকার পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়।

১৯৮৬ সালে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পেশাজীবন শুরু করেন সোহরাব হোসাইন। তিনি ইউনেস্কোয় বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

নোয়াখালীতে জন্ম নেয়া মো: সোহরাব হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

এর আগেও রাষ্ট্রপতির ঘোষিত নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটিতে এই পদের তৎকালীন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছিলেন।

মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন
সাবেক আইন সচিব ছহুল হোসাইন ওয়ান ইলেভেনের পর সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেখানে একজন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

সেই কমিশনের আয়োজনেই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি অবসরে ছিলেন।

তবে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় তিনি সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন বলে সেই সময় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন পাওয়া বা তাকে নির্বাচন করতে দেখা যায়নি।

বিচারক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে দীর্ঘদিন জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ছহুল হোসাইন।

আনোয়ারা সৈয়দ হক
কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে আনোয়ার সৈয়দ হকের। তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন।

সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি একুশ পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।

বাংলাদেশের খ্যাতনামা আরেকজন সাহিত্যিক মরহুম সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী তিনি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে মেডিক্যাল কোরে লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন।

১৯৭৩ সালে তিনি বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে লন্ডন চলে যান। সেখানে মনোবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

তিনি জাতীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক, মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement