০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে মামলায় যা লিখেছে পুলিশ

রাবার বুলেটবিদ্ধ হওয়ার আগে পুলিশের সামনে এভাবেই দাঁড়িয়েছিলেন আবু সাঈদ - ছবি : বিবিসি

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জোরালো অভিযোগ উঠলেও পুলিশ দায়ের করা মামলায় ভিন্ন বয়ান দেয়া দেয়া হয়েছে। সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশের গুলি আবু সাঈদের দেহে লাগে।

তবে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বা এফআইর-এ পুলিশ দাবি করেছে, আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়নি বরং মামলায় পুলিশ এমন একটি বর্ণনা দিয়েছে যাতে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে।

যদিও ১৬ জুলাই আবু সাঈদ গুলিতে নিহত হবার ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। পরে ১৮ ও ১৯ জুলাই সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার জের ধরে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করেছিল কর্তৃপক্ষ।

আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে দেখা যায় তিনি দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছেন। আর উল্টো দিক থেকে পুলিশ শটগান থেকে গুলি ছুঁড়ছে। এক পর্যায়ে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

যদিও এফআইআরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে ‘বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে এবং ইটের টুকরো নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়।’

এই এফআইআরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ অজ্ঞাত কয়েক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা এ নিয়ে বিবিসির সাথে কথা বলতে রাজী হননি। তবে এফআইএর দায়েরের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন তিনি ‘মামলা করেছেন, কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা তার তথ্য যাচাই করে দেখবেন’।

যদিও বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে এবং তাদের দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা।

কী ধরনের মামলা হচ্ছে?
১৬ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় দেশজুড়ে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। একই সাথে চলছে গ্রেফতার অভিযানও।

আবু সাঈদ যেখানে নিহত হয়েছেন সেই রংপুরে এক মামলায় ২০ হাজার অজ্ঞাতনামা মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের দু’জন কাউন্সিলরসহ ১৮৮ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরণের অভিযোগ আনা হচ্ছে।

যেমনটি আবু সাঈদের এফআইআরে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল ও তাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে এলোপাথাড়ি গুলি শুরু করে।’

ঢাকায় ইতোমধ্যেই আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আটকের কথা বলেছেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন। এছাড়া সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ঢাকায় মামলা হয়েছে ২০০'র বেশি।

এর মধ্যে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কিছু নেতা ও কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ, যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলোতে জড়িত থাকার অভিযোগেই এখন মামলা হচ্ছে। যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশালসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে ঘটে যাওয়ায় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ করে মামলাগুলো হচ্ছে, যাতে অনেক অজ্ঞাতনামা আসামির কথা বলা হয়েছে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে মামলা এমন অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করে পরে বিভিন্ন ঘটনায় ঢালাও গ্রেফতারের অভিযোগ উঠে প্রায়ই।

কত মানুষ আসামি?
ঢাকাসহ দেশের যেসব জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা হয়েছে সেসব জায়গায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে সাড়ে পাঁচশর মতো মামলা হয়েছে, যাতে আসামির সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।

তবে অনেক অজ্ঞাত আসামির কথা বলা থাকায় এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

রংপুরে মোট ১২ মামলা হয়েছে এবং এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা দুটি আর পুলিশ ১০টি মামলা করেছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনসহ মোট ১৮৮ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের অনেকেই সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ এবং এনিয়ে মোট গ্রেফতার হলেন ২ হাজার ৬০০’র বেশি মানুষ।

ইতোমধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতা-কর্মীকে ঢাকায় আটক করেছে পুলিশ, যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হচ্ছে।

আবার অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, এফআইআরে আসামির জায়গায় লেখা হয়েছে ‘অজ্ঞাতনামা উচ্ছৃঙ্খল ২/৩ হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তরাসহ বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সমর্থিত নেতা-কর্মী’।

রাজশাহী পুলিশের মুখপাত্র মো: জামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগরীতে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছে ৩৩ জন এবং এনিয়ে সেখানে ২০০ বেশি গ্রেফতার হয়েছে।

তিদনি বলেন, সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আছে তাদের আটক করা হচ্ছে। এখানে এ ধরনের সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় মোট ৩০টি মামলা হয়েছে সহিংসতার বিষয়ে। এর মধ্যে একটি আজ নতুন দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এসব মামলায় শুধু মহানগরীতেই আটক করা হয়েছে ৪৭৬ জনকে। পুরো জেলায় কতজনকে আটক করা হয়েছে সেই তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

ঢাকার কাছে নারায়নগঞ্জে নতুন করে আর দুটি মামলা হওয়ায় এ পর্যন্ত মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪-এ। পুলিশ বলছে নাশকতার অভিযোগে গত ২৪ ঘন্টায় ৫১ জনসহ মোট ৪৮৭ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।

সারাদেশে অভিযান চলছে
ঢাকায় অভিযানের পর পুলিশ বলছে তারা ‘ব্লক রেইড’ অর্থাৎ একটি সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে সহিংসতায় জড়িতদের আটক করার জন্য।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুরো অভিযান পরিচালিত হচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে।

নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করে তিনি বলেন,‘ধরুন সহিংসতায় জড়িত কেউ বা কারা কোথাও অবস্থান করছে জানার পর ওই এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। এরপর আসা যাওয়ার সম্ভাব্য পথগুলো বন্ধ করে অবস্থান নেয়া হয়। তারপর চারদিক থেকে এসে সুনির্দিষ্ট বাড়ি বা জায়গায় অভিযান করা হচ্ছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যারা সহিংসতা বা নাশকতায় জড়িত তাদেরই আটক করছে পুলিশ।

যদিও বিএনপিসহ বিরোধী দল অভিযোগ করছে যে অভিযানের নামে তাদের নেতাকর্মীদের আটক করছে পুলিশ।

তবে এর বাইরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আটক হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সহিংসতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের পর সরকার কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র দিয়েছিল সেটি গত ৫ জুন বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে রিট করার পরিপ্রেক্ষিতে ওই রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।

পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার পক্ষ। কিন্তু এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে।

২ জুলাই থেকে এ নিয়ে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। পরে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় ২ জুলাই সহিংসতায় আবু সাঈদসহ ছয়জন মারা যায়। এরপর ১৯ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত সহিংসতার মৃতের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে যায় বলে গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে।

আন্দোলনের সময় হামলা হয় মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, বিটিভি ভবন ও সেতু ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি স্থাপনায়।

সরকার এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ি করলেন তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। উভয় দলই সরকারের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে গুলি করে শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগ এনেছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সামরিক ইনস্টিটিউটে রুশ হামলায় নিহতদের স্মরণে ইউক্রেনের শোক প্রকাশ বন্যায় ফেনীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজশাহীতে সাবেক রাবি ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে আমেরিকান নাগরিকের হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় পরিবার শিক্ষা জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার : ড. ইউনূস দুই ‘আইরিশের’ গোলে হারল আয়ারল্যান্ড নতুন জার্মানির পুরনো রূপ, উড়িয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরিকে বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে কলকাতা তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ ভারতের ৬০ কিমি এলাকা দখল করে ফেলেছে চীন?

সকল