স্কুল-কলেজে পাঠদান চালু রাখতে বিকল্প খোঁজা হচ্ছে
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১০ মার্চ ২০২০, ০৭:৫২
দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই এখন উদ্বিগ্ন। একই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে দুই দিন ধরেই দফায় দফায় বৈঠক করে পাঠদান অব্যাহত রাখতে বিকল্প পন্থাও খুঁজছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিও বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বলেছেন, শিগগিরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে এখনই আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে সেবরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে অনলাইনে তাদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আগেই বিকল্প চিন্তা করে রেখেছেন। সরকারও চাইছে করোনাভাইরাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে স্কুল-কলেজ চালু রেখেই বিকল্প কোনো পন্থায় যেন পাঠদান অব্যাহত রাখা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশে বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে স্কুল-কলেজ বন্ধের। তবে এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য গতকাল সোমবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের মতামত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান। অন্য দিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গতকাল সোমবার জানান, স্কুল-কলেজ বন্ধ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ লাগবে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশে এখন প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। করোনাভাইরাস যদি ভয়াবহ আকারে আঘাত আনে তা হলে প্রথমেই আক্রান্ত হবে এই শিক্ষার্থীরা। সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বের ১৩টি দেশের প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের ২৯০ (২৯ কোটি) মিলিয়ন শিক্ষার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের ওপরে। এ অবস্থায় করোনা ছড়িয়ে পড়লে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজেরাই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।
করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে রোববার একটি সভা করেছে। সভায় ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত না হলেও আপাতত শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনার সংক্রমণ এবং বাঁচার উপায় বিষয়ে লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাবির ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা প্রথমত সবাইকে সচেতন করার কাজটিই করছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক বিভাগ আছে যারা অন লাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে পারে। তবে আমরা আরো সময় নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব।
ডেফোডিলস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল হক জানান, আমাদের বেশির ভাগ ফ্যাকাল্টি অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রাখতে সক্ষম। যদি জরুরি কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয় তা হলে আমরা অনলাইনেই আমাদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করব।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সবার আগে। দেশে যদি এমন কোনো অবস্থার তৈরি হয় যে অনলাইনে পাঠদান পরিচালনা করার প্রয়োজন হয় তা হলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং করেই সিন্ধান্ত নেবো। তবে এখন যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী অনলাইনে পাঠদান শুরু করতে চায় তা হলে তা করতে পারে। তবে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সভা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা