পবিপ্রবিতে বিলুপ্তির পথে কাঁটা বহরির নতুন জাত উদ্ভাবন
- দুমকি(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
- ২৫ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৯
শহরের জীবনে অপরিচিত হলেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটা বহরি বা বঁইচি। গ্রামগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাটাযুক্ত ।
এ কারণে বাঁইচি কাটা বহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়। সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচি গাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠমাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচাফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। দেখতে অনেকটা কালোজাম ফলের মত দেখায়।
গোলাকার আঙ্গুরের মতো বঁইচি খেতে অনেক মিষ্টি ও স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtiaindica, পরিবার Slacourtiaceae। ইংরেজি নাম governor’s plum। বঁইচি গাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডাইরিয়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে।
বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়। কিন্তু জনপ্রিয় এই ফল এখনো বাণিজ্যিকভাবে এর বাজারজাত শুরু হয়নি। প্রচুর পুষ্টি ও ঔষধিগুন সমৃদ্ধ এই ফলগাছ রক্ষায়ও কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হইনি। এই গাছ রক্ষা ও এর জীববৈচিত্র রক্ষায় তেমন কোন গবেষণাও হয়নি।
বঁইচি নিয়ে দেশে ব্যাপক-বিস্তৃত কোন গবেষণা না হলেও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব রব্বানী আট বছর ধরে বঁইচি ফল নিয়ে নানাভাবে গবেষণা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি এটাকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় বীজ বোর্ড পিএসটিইউ বঁইচি-১ নামে এই ফলের অনুমোদন দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় গুরুত্বপূর্ণ ফল বঁইচি। বঁইচি ফল বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। অবহেলা, অযত্ন এবং নির্বিচারে কর্তন ইত্যাদির কারণে বঁইচি ফলটি অনেকটা বিলুপ্তির পথে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এ ফলের পুরুষ এবং স্ত্রী দুই ধরণের গাছ রয়েছে। জোড় কলম এবং শাখা কলমের মাধ্যমে স্ত্রী গাছের বংশবিস্তার করে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া সম্ভব। বাজারে এই ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কারণ এতে আছে ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এই ফলের অনুমোদন দিয়েছে, আগামী বছর থেকে এটিকে আমরা কৃষকের মাঝে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারবো।
বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে ১০টি মাতৃগাছ, ৫০টি জোড় কলম এবং ২০০ এর অধিক চারা আছে। এই বঁইচি গবেষণার সাথে জড়িত আছে পিএইচডি শিক্ষার্থী চিত্ররঞ্জন সরকার এবং মাস্টার্সেও শিক্ষার্থী সুস্মিতা বড়াল।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে বাহ্যিক বৈশিষ্ট, পুষ্পায়ন এবং ফল ধারণের বৈশিষ্ট্যাবলী শনাক্ত সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ডিএনএ পর্যায়ে শনাক্তকরণ কাজ চলমান আছে।