১৫ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা
- আশরাফুল ইসলাম
- ০৭ মার্চ ২০১৯, ১০:০২
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছর শেষে ব্যাংকিং খাতে ১৫টি ব্যাংক তাদের প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে ১১টিই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, আমানতকারীদের আমানত ব্যাংকের আর্থিক ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত মূলধন রাখার বিধান রয়েছে। একই কারণে খেলাপি ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত মূলধন রাখারও বিধান রয়েছে। কিন্তু ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি হওয়ায় এবং সে অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ না করায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকার পরিচালিত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে এ ঝুঁকির প্রবণতা বেড়েছে বেশি।
জানা গেছে, ঋণ শ্রেণীকরণের তিনটি পর্যায় রয়েছে। তা হলো, নিম্নমান, সন্দেহজনক ও মন্দ বা ক্ষতি। এই তিনটি পর্যায় বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ নিম্নমান হলে তার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ২০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর পরপর ছয় মাস ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে ঋণকে সন্দেহজনক ঋণ বলা হয়। আর এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর ৯ মাস অতিবাহিত হলে ওইসব ঋণকে মন্দ ঋণ বলা হয়। আর এ মন্দ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা এনে। যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি ওই ব্যাংকের আয় খাত থেকে বেশি পরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করলে ওই ব্যাংকের মুনাফা কমে যায়।
প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকারেরা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছেকৃত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা মন্দা, ব্যাংকিং খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি ও চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের এবার পরিচালন মুনাফা কমেছে। বেড়েছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। সব মিলিয়ে এবার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমে গেছে। এর ওপর অতিরিক্ত প্রভিশন রাখতে গিয়ে অনেক ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা না হয়ে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। কেননা এসব ব্যাংকের পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণ বেশি। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখা হয় ব্যাংকের আয় থেকে। প্রভিশন সংরক্ষণ না করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৮৩৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার বেড়ে হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯৫ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৬৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৯ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৭৮ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৭৫ কোটি টাকা থেকে কমে নেমেছে ২৩ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে নতুন করে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৮৫ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৯০ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ কোটি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ২৩ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৭০ কোটি এবং এবি ব্যাংকের ১১২ কোটি টাকা।
আমানতের অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করায় কমে যাচ্ছে বিনিয়োগ সক্ষমতা। কম হারে আমানত নিয়ে বেশি মুনাফায় ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ আদায় না হলেও শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সুদে-আসলে আমানতকারীদের পরিশোধ করতে হয়। এভাবে এখন অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ আদায় না হওয়ায় নতুন আমানতের অর্থ থেকে মেয়াদ পূর্তির আমানত পরিশোধ করতে হচ্ছে।
যেখানে ঋণ আদায় হলে ব্যাংকগুলো বেশি হারে বিনিয়োগ করতে পারত। এভাবেই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা। ব্যাংকারেরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা