তুলে নেয়া হচ্ছে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৪
গত বছরের (২০১৮) জুনে জারি করা জনবল কাঠামোতে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ নিয়োগে যোগ্যতা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের বেতনকাঠামো নিয়ে বৈষম্যেরও অবসান ঘটাতে সুপারিশ করা হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বৈঠকে, গত বছরের জুনে জারি করা সংশোধিত জনবল কাঠামোর বেশ কিছু ধারা-উপধারায় শব্দগত পরিবর্তন, নানা দিক ও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করে আবারো কিছুটা সংশোধনী আনা হচ্ছে। অথবা কোনো কোনো ধারায় শব্দগত বিন্যাস করা হবে।
জানা গেছে, জনবল কাঠামোর ২৩ নম্বর পৃষ্ঠায় কলেজ ও ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতা এবং গ্রেডনির্ধারণ নিয়ে যে নির্দেশনা রয়েছে তা নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়ে আসছে। শিক্ষক নেতাদের আপত্তি ছাড়াও নির্দেশনাটি বাস্তবায়িত হলে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন। এ কারণে এমপিও নীতি বাস্তবায়ন এবং নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শুরুর আগেই এ সব অসঙ্গতি দূর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কারণেই গত আগস্টে বেসরকারি কলেজে ও ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছিল।
আজ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে সহসাই বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দ্রুত তুলে দেয়া হবে। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ বিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনা হবে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ ও ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতা ও এমপিওভুক্তদের সুবিধা নিয়ে জনবল কাঠামোতে গত জুনে জারি করা সংশোধনী নিয়ে আপত্তির মুখে আবারো সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই পদগুলোতে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এবং এ নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতেই গত ২৮ আগস্টে ওই নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মাসের স্থগিতাদেশের ফলে সারা দেশের প্রায় সহস্রাধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়ে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরই মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাকার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্তরা কোথাও কোথাও কর্তৃত্ববাদী ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। নামীদামি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে তাদের নানা বাণিজ্যের সহযোগী হচ্ছেন।
বছরের শেষে এবং বছরের শুরুতে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত এবং যৌক্তিক ভর্তির ফির বেশি ও নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত ভর্তি করাতে শুরু করেছেন। এ জন্য ভারপ্রাপ্তরা শুধু গভর্নিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই এসব করছেন। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা গভর্নিং কমিটিকে (জিবি) দায়ী করে বলছেন, আমি তো ভারপ্রাপ্ত, জিবির নির্দেশের বাইরে কিছুই করার নেই আমার। জিবির নির্দেশেই বিভিন্ন ফি বাড়ানো হয়েছে।
এ দিকে জারি করা জনবল কাঠামোর সংশোধনীতে শিক্ষক নিয়োগের বয়সসীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। পাশাপাশি শিক্ষকদের অবসরের বয়স হবে ৬০ বছর। ৬০ বছর পূর্ণ করা কাউকে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান বা সাধারণ শিক্ষক পদে পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যাবে না। নীতিমালায় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিয়োগে স্বচ্ছতা, নিয়োগের প্রাথমিক বয়স, অবসরের বয়সসীমাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ারও শর্ত রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হলে শিক্ষকও এমপিওর জন্য বিবেচিত হবেন না, এমন বিধান রাখা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজনে বদলির ব্যবস্থা করতে পারবে। এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানে সমান বা উচ্চতর পদে আবেদন করতে পারবেন। কর্মরত প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিলে তিনি বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পদত্যাগ করেন, তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছর তার ইনডেক্স (বেতন পাওয়ার কোড) নম্বর বহাল থাকবে। এর বেশি হলে তা চাকরি বিরতি হিসেবে গণ্য হবে।
ইনডেক্স নম্বর বা নিবন্ধন সনদ ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। নিয়োগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মেধাক্রম/মনোনয়ন/নির্বাচন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নীতিমালায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনে শুধু একটি তৃতীয় বিভাগ/সমমান গ্রহণযোগ্য হবে। এ নীতিমালা জারির পর কেউ যদি বকেয়া প্রাপ্য হন, সে ক্ষেত্রে তা পরিশোধ করা হবে না।
আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠকে গত বছরের জুনে জারি করা সংশোধিত জনবল কাঠামোর বেশ কিছু ধারা-উপধারায় শব্দগত পরিবর্তন, নানা দিক ও অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করে আবারো কিছুটা সংশোধনী আনা হবে। অথবা কোনো কোনো ধারায় শব্দগত বিন্যাস করা হবে। এরপরই আরেকটি প্রজ্ঞাপন বা পরিপত্র জারি করে সংশোধনীগুলোর বাস্তবায়নের আদেশ করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা