২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পালাবদল আতঙ্ক শিক্ষা প্রশাসনে

পালাবদল আতঙ্ক শিক্ষা প্রশাসনে - সংগৃহীত

টানা গত দশ বছর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাজানো প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হতে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের সাবেক যারা গত ১০ বছর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল, তাদের অনিবার্য পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, সংস্থা ও শিক্ষা বোর্ডগুলোতে প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটকে বাদ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিতি সভায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন, তার প্রতিদান দিতে হবে। 

বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দুই শতাধিক কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের পদ থেকে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দফতর-প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে আছেন। বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব পালনকারী একাধিক কর্মকর্তা দফায় দফায় পদোন্নতি পেয়ে এখন অতিরিক্ত সচিব হয়ে মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় পদে রয়েছেন। অভিযোগ থাকার পরও তাদের নড়চড় হয়নি। এ ছাড়া তিন বছরের অধিক সময় একই পদে বহাল রয়েছেন এরূপ অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের স্তরে স্তরে। একই পদে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বহু অভিযোগ মন্ত্রীর দফতরে দেয়ার পরও তারা বহাল আছেন। জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা এবার পদ হারাচ্ছেন। 

নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন সরকারে ডা: দীপু মনিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। এই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী করা হয়েছে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল এমপি হয়েছেন এবারই প্রথম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বস্তরে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী এবং প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। মন্ত্রণালয়ে গত ১০ বছর কোনো না কোনো সময়ে মন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাই ঘুরে ফিরে যুগ্ম সচিব হয়ে এসেছেন এবং পরে সরকারের গণপদোন্নতির সুযোগে অতিরিক্ত সচিব হয়ে একই মন্ত্রণালয়ে রয়ে গেছেন। অধিদফতরগুলোতে গত ১০ বছর মহাপরিচালক পদে নিয়মিত পরিবর্তন আসে। কিন্তু কয়েকজন মুখচেনা কর্মকর্তা ঘুরে ফিরেই পরিচালক ও উপপরিচালকসহ অন্য পদগুলোতে বহাল রয়েছেন। 
এর বাইরে আছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, একটি মাদরাসা এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এসব দফতরে ৩ থেকে ১০ বছর কর্মরত আছেন অনেক কর্মকর্তা। ঘুরে ফিরে একই চেহারার কর্মকর্তারা ঢাকায় বছরের পর বছর লোভনীয় পদ আঁকড়ে আছেন। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি অর্থায়নে চলছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এসব প্রকল্পে এরাই পিডির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের মধ্যে বিতর্কিত ও অসাধু কর্মকর্তারা এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং শাস্তিমূলক বদলি আতঙ্কে রয়েছেন মন্ত্রিসভা ঘোষণার পর দিন থেকেই। এ ছাড়া রাজধানীর সরকারি স্কুল ও কলেজে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও ঢাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে শিক্ষকের সঙ্কট। ঢাকায় তাই বছরের পর বছর থাকা শিক্ষকেরাও বদলি আতঙ্কে আছেন। 

জানা গেছে, পুরো শিক্ষা প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদলের প্রস্তুতি চলছে নীরবে। এ ক্ষেত্রে শিগগির এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হবে পর্যায়ক্রমে। 
এ দিকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি কাজ করবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বিশ্বাস ও আস্থা আমাদের ওপর রেখেছেন সেই বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে চেষ্টা করব, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।


আরো সংবাদ



premium cement